‘ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জডরাও আমাদের একজন, দূরের কেউ না’
৩১ মার্চ ২০২২ ১৮:২৬
ঢাকা: ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের সার্বিক উন্নয়নে পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা আমাদের সমাজেরই একজন। তারা দূরের কেউ না। সেটিই আমরা প্রমাণ করতে চাই। সে জন্য যত প্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে প্রতিটি জায়গায় তাদের চলাচলের সুবিধা, অন্যান্য যেসমস্ত সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি।
পাশাপাশি দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে ৫ লাখ টাকা উপহার পাশাপাশি ১০ কোটি টাকার একটি আলাদা ফান্ড করে দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) বিকেলে বঙ্গবন্ধু চার জাতি ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট টুর্নামেন্ট-২০২২’র সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি কক্সবাজার শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে যুক্ত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু চারজাতি ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। কক্সবাজারে টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভারতকে ৯ উইকেটে হারায় বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে ২০ ওভারে ১০৭ রানে অলআউট হয় ভারত। ১০৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১ উইকেট হারিয়ে ৫৪ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জয় নিশ্চিত করে।
ক্রিকেটসহ অন্যান্য খেলাধুলায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সম্মান বয়ে নিয়ে আনছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা যে আমাদের সমাজেরই একজন। তারা দূরের কেউ না। সেটিই আমরা প্রমাণ করতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি অনুশীলন করার ভাল মাঠ পেলে পরে আমাদের ছেলেমেয়েরা আরও ভাল করতে পারবে। ওরা তো আমাদেরই সন্তান। ওদের আমাদেরকে সবরকম সহযোগিতা করতে হবে। এ কথাটি সবাইকে মনে রাখতে হবে। কারণ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বা প্রতিবন্ধী বলি বা স্পেশালি যারা চ্যালেঞ্জড, আমি দেখি যে তারাই আমাদের জন্য সম্মান বেশি নিয়ে আসে। কাজেই তাদের সবরকম সহযোগিতা করে আসব।’
প্রতিবন্ধীদের চাকরি ক্ষেত্রে ১ শতাংশ কোটা বরাদ্দ দেওয়া আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠান যদি ওদেরকে চাকরি দেয় তাহলে তারা কিন্তু আমাদের বিশেষ সুবিধা তারা পাবে।’
আবাসিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত আলাদা সুবর্ণ ভবন কমপ্লেক্স তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এরইমধ্যে একটা আলাদা কমপ্লেক্স তৈরি করা হচ্ছে। যেটি সুবর্ণ ভবন নামে নির্মাণ করে দিচ্ছি। এখানে চিত্ত বিনোদনেরও ব্যবস্থা থাকবে।’
‘তারুণের শক্তি বাংলাদেশের শক্তি’ এই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্রীড়াক্ষেত্রে বাজেটও এবার বৃদ্ধি করেছি। করোনাকালীন যতদূর সম্ভব সহযোগিতা করে যাচ্ছি। প্রত্যেকটা বিভাগীয় শহরে একটা করে বিকেএসপি আমরা নির্মাণ করে দিচ্ছি। শুধু রাজধানীকেন্দ্রিক না, আট বিভাগে আটটি বিকেএসপি হবে।পাশাপাশি সমস্ত উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম করে দিচ্ছি।’
জেলা স্টেডিয়ামগুলো সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার জন্য ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের এব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
ট্রফি সশরীরে উপস্থিত থেকে নিজ হাতে দিতে না পারার জন্যও দুঃখ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালের কথা এইভাবে (মাসুদ) মনে রাখবে এটা ভাবতেও পারিনি। তখন তো মাত্র এক কোটি টাকা দিয়েছিলাম। আজকে আমি ১০ কোটি টাকার একটা ফান্ড তৈরি করে দেব। তোমরা যখন এতদূর নিয়ে আসতে পেরেছ। কাজেই তাদের জন্য আমি অত্যন্ত চাই, এই সুযোগটা আলাদা একদম একটা ফান্ড তৈরি করে দেব। যে প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল এনপিসি।কাজেই আমি মনে করি আরও বেশি ছেলেমেয়েরা আসুক খেলাধুলায়, সেটাই করব।’
ভারত বাংলাদেশ নেপাল ও শ্রীলংকা টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ায় তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
ভারত রানার্স আপ হওয়ার অভিনন্দন জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশটির অবদানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মার্চ মাস আমাদের স্বাধীনতার মাস। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত আমাদের পাশে ছিল। ভারত আমাদের সহযোগিতা করেছে। বন্ধুপ্রতিম দেশ, কাজেই সেই দেশের সকল খেলোয়াড়সহ সবাইকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন।’
চ্যাম্পিয়ন দল বাংলাদেশকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলে প্রত্যেক খেলোয়াড়কে ৫লাখ টাকা উপহার দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
পাশাপাশি আয়োজনকারীরাও কিছু পাবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা একদম বঞ্চিত হবে না। তবে খেলোয়াড়দের জন্য একটু বিশেষ। আর ১০ কোটি টাকার ফান্ড করে দেব। যাতে ক্রিকেট আরও ভালভাবে অনুশীলন করা যায়। সাথে সাথে অন্য স্পোর্টসও।’
পরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল টুর্নামেন্টের পুরস্কার তুলে দেন।
সারাবাংলা/এনআর/একে