Tuesday 03 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাল্যবিয়ে: হরিয়ানার নারীদের স্বপ্ন দেখতে ভয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১ এপ্রিল ২০২২ ১৬:৫১ | আপডেট: ১ এপ্রিল ২০২২ ১৯:৩০

ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হরিয়ানার তিন বালিকা বধূর কথা জানিয়েছে বিবিসি। যারা শত প্রতিকূলতার মধ্যেও পড়ালেখা শেষ করে চাকরি নেওয়ার মতো স্বপ্ন দেখছেন।

প্রিয়াঙ্কা, মীনাক্ষি এবং শিবানি নামের ওই তিন নারীকে খুঁজে বের করেন বিবিসির ফটোসাংবাদিক রুহানি কর। ১৬ বছরের কাছাকাছি বয়সী ওই তিন নারীর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা রাজধানী দিল্লির উপকণ্ঠে গুরগাও অঞ্চলের দমদমা গ্রামে। তাদের মধ্যে এক জনের ১০ বছরেরও কম বয়সে বিয়ে হয়। তারা তিন জনই স্বাধীন জীবনের স্বপ্ন দেখেন, কিন্তু সে পথ যে মসৃণ নয় তাও তাদের জানা আছে।

সাত বছর আগে ১০ বছর বয়সে প্রিয়াঙ্কার বিয়ে হয়। কিন্তু, সংসারের সঙ্গে পড়ালেখা চালিয়ে এখন একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। বিয়ের সময় বলা হয়েছিল, প্রিয়াঙ্কার স্বামী পুলিশে চাকরি নেওয়ার চেষ্টায় রয়েছে। চাকরি পেয়ে গেলে স্বামীর সঙ্গে গিয়ে থাকতে হবে তাকে।

বিজ্ঞাপন

সে সময় প্রিয়াঙ্কা আক্ষেপ নিয়ে তার ডায়েরির পাতায় লিখেছিলেন, ‘বিয়ে করে শেকলবন্দি হতে চাই না। পুতুল খেলা ফেলে, শ্বশুরবাড়িতে যাবো না।’

প্রিয়াঙ্কা বলেন, তিনি পড়ালেখায় অতটা ভালো ছিলেন না; কিন্তু ভাইয়ের পার্লার ব্যবসায় সহয়তা করতে পারতেন। তাই, সেই অজুহাতে বাবার বাড়িতে বেশিদিন কাটাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, সেই পরিকল্পনা কাজ করেনি। তাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়।

মীনাক্ষি ২০২১ সালে একাদশ শ্রেণিতে উঠেছিলেন। তার স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগে তিনিই একমাত্র নারী শিক্ষার্থী হিসেবে জায়গা করে নিয়েছিলেন। সেই সাফল্যে তার আনন্দের সীমা ছিল না। কিন্তু তখনই করোনার হানা সবকিছু পাল্টে দেয়। শহরের অনেক মানুষ কাজ হারিয়ে গ্রামে ফিরে যান। করোনার মধ্যে কন্যাশিশুর দ্রুত বিয়ের ব্যবস্থা করতে সব বাবা-মা উঠেপড়ে লেগে যান।

লকডাউনের মধ্যেই মীনাক্ষির অনেক সহপাঠীর বিয়ে হয়ে যায়। মীনাক্ষি বহু চেষ্টা করে নিজের বিয়ে ঠেকিয়ে রাখে। যদিও তিনি জানেন না ঠিক কত বছর বয়সে মেয়েরা আইন অনুসারে বিবাহযোগ্য হয়; তবে নিজেদের স্বপ্নপূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে না করার পক্ষে তিনি। কিন্তু, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মীনাক্ষিরও বিয়ে হয়ে যায়। তার স্বামীর বয়স ১৬ বছর। তিনিও পড়াশুনা করছেন। মীনাক্ষি মনে করছেন দুই পরিবারের সম্মতিতে তারা দুই জনই পড়ালেখা চালিয়ে যাবেন। কিন্তু, তা কতদূর সম্ভব হবে; তা সময়ই ভালো বলতে পারবে।

পড়ালেখার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে চোখ চকচক করে ওঠে শিবানির। তার স্বপ্ন ছিল ব্যাংকে কাজ করার। কিন্তু, বিয়ের ছবির অ্যালবাম বের করতেই মুখ পাংশু হয়ে যায় তার। দ্বাদশ শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় মীনাক্ষির বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে এবং তার বড়বোন অশুকে একইসঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়।

সেদিনের কথা বলতে গিয়ে শিবানির মা বলেন, তারও বিয়ে হয়েছিল ১৫ বছরে। তার মেয়েদেরও তাই হলো। কিছুই বদলাতে পারেননি তিনি।

তখন, দুই বোনরই শ্বশুরবাড়ি থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই সন্তানসম্ভবা হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ছিটকে পড়েন তারা।

যদিও, ভারতে ১৮ বছরের কম বয়সী নারীদের বিয়ে আইনতঃ দণ্ডনীয়। তারপরও, দারিদ্র্য এবং পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার কারণে সেখানে বাল্যবিয়ে নির্মূল হয়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।

জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারতে প্রতি বছর ১৫ লাখ কন্যাশিশুর বাল্যবিয়ে হয়ে থাকে। ভারতে বাল্যবিয়ের এই সংখ্যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।

২০২১ সালে ভারতের কেন্দ্র সরকার ২১ বছরের নিচে কন্যাশিশুদের বিয়ে নিষিদ্ধ করে একটি বিল পাস করে, যদিও বিলটি এখনো আইনে পরিণত হয়নি।

সারাবাংলা/একেএম

টপ নিউজ বাল্যবিয়ে হরিয়ানা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর