ঢাকা: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, আপনি ক্ষণে বলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ক্ষণে বলেন জাতীয় সরকার, ক্ষণে বলেন তারেকের সরকার। এই দিবাস্বপ্ন দেখে কোনো লাভ নেই। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো পথ আমাদের খোলা নেই।
শুক্রবার (১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানীর লালবাগ থানার অন্তর্গত ২৪ নং ওয়ার্ডের সম্মেলন তিনি এ সব কথা বলেন। আমলীগোলা বালুর ঘাট মাঠে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
নেতাকর্মীদের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করার আহ্বান জানিয়ে নানক বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা চুপ করে বসে নেই। তারা ষড়যন্ত্র করছে। সেই ষড়যন্ত্রের বিষ দাঁত ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে হবে। তা ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প পথ নেই।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে জাহাঙ্গীর কবির নানক আরও বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব, কী বলছেন, আর না বলছেন, জানি না। এ দেশের মানুষ একটি নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে. নির্বাচন কমিশন গঠনে বাধা দিয়েছিলেন, কিছু করতে পারেননি। নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে এবং এই নির্বাচন কমিশনের অধীনেই জনগণের ভোটে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের অংশগ্রহণ করবে। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’
‘বাংলাদেশের সংবিধান রয়েছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সংবিধান অর্জন করেছি। সেই সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো পথ আমাদের খোলা নেই। আপনি ক্ষণে বলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ক্ষণে বলেন জাতীয় সরকার, ক্ষণে বলেন তারেকের সরকার। এই দিবা স্বপ্ন দেখে কোনো লাভ নেই’— বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের চেহারা চিনেছে। বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের লাল কার্ড দেখিয়ে রাজনীতির কোট থেকে, নির্বাচনের মাঠ থেকে বের করে দিয়েছে।’
আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পাকিস্তান আমল থেকে সবসময় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে গেছে জানিয়ে নানক বলেন, ‘সেই বাংলাদেশে জাতির পিতাকে হত্যা করে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। আজকে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হয়েছে মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, সেই উন্নয়নকে পুঁজি করে আমাদের মানুষের দোরগোড়ায় গিয়ে কাজ করতে হবে, মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে হবে।’
ওয়ার্ড সম্মেলনে আগত নেতাকর্মীদের কিছু বিশৃঙ্খলার প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘লালবাগ এসেছিলাম অনেক আশা করে। এই লালবাগ বঙ্গবন্ধুর ঘাঁটি, আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। এখানে একটি রাজনৈতিক স্লোগান পেলাম না। যে নেতাদের পক্ষে স্লোগান দিচ্ছেন সেই নেতাদের লজ্জা করে কি না আমি জানি না। তবে আমি লজ্জা পেয়েছি।’
নানক বলেন, ‘ব্যক্তির প্রতি ব্যক্তির মোহ থাকতেই পারে। কিন্তু সেই ব্যক্তি কার ঊর্ধ্বে, কীসের উপরে? লালবাগের রাজনীতিতে এত আওয়ামী লীগ ভরে গেছে, লালবাগের রাজনীতি এত কর্মী বিমুখ হয়ে হেছে, আমি অবাক হয়েছি! আমার মনে হয় যেন লালবাগের রাজনীতি হাইব্রিড নেতারা এসে দখল করে ফেলেছে।’
এ সময় জাহাঙ্গীর কবির নানক নিজেই স্লোগান ধরেন। স্লোগানে তিনি ‘জয়বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ বলার পর ‘শেখ হাসিনা এগিয়ে চলো… স্লোগান দিতে শুরু করেন। উপস্থিত নেতাকর্মীরা তার স্লোগানে কণ্ঠ মেলাতে থাকেন।
নানক বলেন, ‘১৩ বছরের বেশি সময় ধরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। ক্ষমতাসীন সময়ে আমরা কী করেছি সেটি আপনাদের জানতে হবে, নেতাদের বক্তৃতা দেওয়ার সময় বলতে হবে। শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে কী করেছেন, কীভাবে সফল হয়েছেন, তা বলতে হবে।’
নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক চর্চায় ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে নানক বলেন, ‘আপনারা যদি রাজনৈতিক চর্চার ফিরে আসতে পারেন তাহলে আওয়ামী লীগ থাকবে, দল থাকবে, সংগঠন থাকবে, আমরা থাকব। ১৩ বছরের অধিক সময় ধরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। আগামী পৌনে দুই বছর পরে এদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই আপনাদের থাকতে হবে।’
লালবাগ থানার আওতাধীন ২৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরাম উল্লাহ সরওয়ার্দীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।
সম্মেলনের উদ্বোধক ছিলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী, প্রধান বক্তা হিসাবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরসহ মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।