Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছোটমনি নিবাস— ৩ বছরের প্রকল্প ঠেকছে ৬ বছরে

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২ এপ্রিল ২০২২ ০৭:৫০

ঢাকা: এতিম ও পিতামাতার স্নেহবঞ্চিত শিশুদের লালন-পালন, ভরণপোষণ এবং তাদের অধিকার সুরক্ষা ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সমাজসেবা অধিদফতর। বর্তমানে ৮৫টি শিশু পরিবারের মাধ্যমে কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই ৮৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৮টি শিশু পরিবার ও একটি ছোটমনি নিবাসের স্থাপনাগুলো জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ কারণে চলমান প্রকল্পের সংশোধনীর মাধ্যমে এই ১৮টি শিশু পরিবার ও ছোটমনি নিবাসের জন্য নতুন ভবন নির্মাণ এবং পুরাতন ভবন সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সমাজসেবা অধিদফতর।

বিজ্ঞাপন

সরকারি শিশু পরিবার এবং ছোটমনি নিবাস হোস্টেল নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ সাল থেকেই কাজ চলছে। তবে ওই প্রকল্পটিরই প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এই সংশোধনীতে মূল প্রকল্পের ব্যয় যেমন প্রায় ৮৫ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, তেমনি তিন বছর মেয়াদও বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে এতিম ও পিতা-মাতার স্নেহবঞ্চিত শিশুদের পরিচর্যা, নিরাপত্তা, শিক্ষা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। এতে তাদের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত হওয়ার মাধ্যমে তারা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ পাবে।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ২৯৬ কোটি ৭১ লাখ ৯১ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মূল প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটির কাজ, তথা শিশু পরিবার ও ছোটমনি নিবাসগুলো নির্মাণের কাজ শেষ করা যায়নি। এর মধ্যে প্রকল্পটির কার্যনির্বাহী সংস্থা বদল করা হয়েছে। রেট শিডিউলে এসেছে পরিবর্তন। নতুন কিছু অঙ্গ সংযোজনও করা হয়েছে। ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে বাড়তি সময় প্রয়োজন হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পটির প্রথম যে সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে মূল প্রকল্প থেকে তিন বছর বাড়তি সময় চাওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ২০২১ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও এবার বাস্তবায়নের জন্য সময় চাওয়া হয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। অন্যদিকে এবার প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় বেড়ে হয়েছে ৩৮৫ কোটি ২০ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ মূল প্রকল্পের চেয়ে প্রায় ৮৫ কোটি টাকা বেশি ধরা হয়েছে সংশোধনী প্রস্তাবনায়।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রকল্পটির প্রস্তাবনা মূল্যায়ন করে কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়। সেগুলো প্রতিপালন করে প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) পরবর্তী বৈঠকেই উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে সমাজসেবা অধিদফতর।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মূল অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবটি (ডিপিপি) গণপূর্ত অধিদফতরের ২০১৪ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সেই শিডিউল অনুযায়ী কাজ করা সম্ভব হয়নি। এখন গণপূর্তের ২০১৮ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী বাকি কাজ বাস্তবায়ন করতে হবে। ফলে খরচ বাড়বে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় যেসব আসবাব কেনা হবে, সেগুলো বনশিল্প করপোরেশনের ২০১৯ সালের রেট অনুযায়ী কিনতে হবে বলেও ব্যয় বাড়বে।

এদিকে, প্রকল্পটি গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছিল এতদিন। তবে গণপূর্ত ২২ মাসেও কোনো হোস্টেল নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণের দরপত্র আহ্বান করতে পারেনি। ফলে তাদের পরিবর্তে বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডকে (খুশিলি) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ কারণে প্রকল্পটি সংশোধন করতে হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে সংশোধনী প্রস্তাবনায়। প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য কিছু খাতের সংযোজন ও বিয়োজন করা হয়েছে বলেও সংশোধনী প্রয়োজন হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি অত্যন্ত কম এবং নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তাই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, সমাজসেবা অধিদফতরের আওতায় এই প্রকল্পটি এতিম ও পিতামাতার স্নেহবঞ্চিত শিশুদের জন্য একটি নির্ভরতার স্থান তৈরির প্রকল্প। ফলে এ ধরনের শিশুদের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারগুলো প্রকল্পটির মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তাই দেরিতে হলেও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা জরুরি।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

ছোটমনি নিবাস সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর