অটিজম সন্তানদের যত্ন নেওয়া আমাদের কর্তব্য: প্রধানমন্ত্রী
২ এপ্রিল ২০২২ ১৫:৫৩
ঢাকা: অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের সমাজের মূল ধারায় এনে তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এরা আমাদের আপনজন। তাদের দেখাশোনা করা, তাদের যত্ন নেওয়া সব সুস্থ মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কেউ যেন এদের অবহেলা না করে।
শনিবার (২ এপ্রিল) ‘১৫তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস ২০২২’ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অটিজমটা আছে কিনা শুরুতেই তা চিহ্নিত করে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও ব্যবহার করে তাদের অনেকখানি সুস্থ করে তোলা যায়। এ চেষ্টা আমাদের রয়েছে।’
অটিজম বৈশিষ্ট্যসহ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সুপ্ত প্রতিভার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমরা বিশ্বখ্যাত বেটহোফেন (জার্মান সঙ্গীতজ্ঞ লুডভিগ ফন বেটোফেনের), আমরা ইলিয়টের (বিশ্ববিখ্যাত কবি ও লেখক টি. এস. এলিয়ট) কথা বলি অথবা আইনস্টাইনের (বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন) কথা বললেই বা স্টেফেন হকিং (ব্রিটিশ পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং) যার কথা আমরা বলি প্রত্যেকের মাঝেই কিন্তু এই ধরনের একটা অটিজমের সমস্যাটা ছিল। তারা কিন্তু সমাজে এমন কিছু দিয়ে গেছে। কোনো দিন কেউ চিন্তাই করতে পারেনি যে, তাদের ভেতর এ সমস্যা ছিল।’
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের বিকাশে সঠিক পরিচর্যা করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এদের ভেতরে একটা সুপ্ত প্রতিভা লুকায়িত আছে। সেটিকে বের করে নিয়ে এসে কাজে লাগাতে পারলে কিংবা তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ দিলে তাদের জীবনটা সুন্দর হবে। সঠিক পরিচর্যা পেলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিরাও সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে মনে রাখতে হবে, এটি কোনো রোগ না। এক সময় ছিল শিশু যদি প্রতিবন্ধী হতো বা অটিজম হতো তাহলে মানুষ তাকে লুকিয়ে রাখত, পরিবার লুকিয়ে রাখত, তাদের পরিচয় সামনে বলতে লজ্জা পেতো। তাদের সামনে আনলে অনেকে দেখে এটা নিয়ে হয়ত প্রশ্ন করত।’
বিশ্বব্যাপী অটিজম সম্পর্কে মানুষের ধারণা বদলাতে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের অবদানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এইটুকু অন্তত বলব সায়মা ওয়াজেদ যখন শুরু করলো এই অটিজম নিয়ে কার্যক্রম এবং মানুষের মাঝে সচেতনতা শুরু করা; জাতিসংঘে এটির ওপর রেজুলেশন নেওয়া। এই ধরনের কার্যক্রম করার ফলে আজকে শুধু আমাদের দেশে না সারাবিশ্বেই কিন্তু এই বিষয়গুলো মানুষ গ্রহণ করে নিয়েছে।’
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে সমস্ত শিশুদের মধ্যে অটিজমটা একটু কম আছে বা যারা মিশতে পারে তাদেরকে স্কুলের সাধারণ ছেলে-মেয়ের সঙ্গে মিশতে দিতে হবে। এর মাধ্যমে তারা অনেকখানি সুস্থ হয়ে উঠবে। অন্যদের সঙ্গে মিশতে মিশতে তারা শেয়ারিং করতে শেখে, ঝগড়া করুক, বন্ধুত্ব করুক বা মারামারি করুক- যাই করুক না কেন এর মধ্যে তাদের মনে আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় অটিজম বৈশিষ্টসম্পন্ন কেউ পিছিয়ে থাকবে না। সবার জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কাজেই আমার দৃষ্টিতে সমাজের অনগ্রসর যারা বা অবহেলিত পড়ে আছেন তারাও সমাজের একটি অঙ্গ। তাদেরও যেমন কর্মদক্ষতা আছে, তাদেরও যেমন মেধা আছে।সেই মেধা বিকাশের সুযোগ সবসময় আমরা করে দিচ্ছি। আর বিশেষ করে যারা প্রতিবন্ধী বা অটিজম তাদের দিকে বিশেষ করে দৃষ্টি দিচ্ছি।’
অভিভাবক না থাকলেও অটিজম বা প্রতিবন্ধীদের ট্রাস্টের মাধ্যমে হোস্টেল বা ডরমেটরি নির্মাণ করে থাকার বাসস্থান বা থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ট্রাস্টের মাধ্যমে এই ধরনের হোস্টেল বা ডরমেটরি নির্মাণ করে দিতে পারি। যেখানে এরা থাকবে। আর তাদের সুরক্ষা বা দেখাশোনার জন্য লোক থাকবে। আর সেখানে যারা বিত্তশালি আছেন তারা ডোনেশনও দিতে পারবেন। আর সরকারের পক্ষ থেকে আমি যতক্ষণ আছি এইটুকু বলতে পারি সবরকম সহযোগিতা আমরা করব। শুধু ঢাকা শহর না আমাদের প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে বা অন্যান্য বড় শহরে এধরনের পদক্ষেপ আমাদের নেওয়া উচিত।’
পরে প্রধানমন্ত্রী অটিস্টিক শিশুদের জন্য ‘বলতে চাই’ ও ‘স্মার্ট অটিজম বার্তা’ নামক দুটি অ্যাপসের উদ্বোধন করেন
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অটিজমসহ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যক্তিদের হাতে পুরস্কারের সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী।
সারাবাংলা/এনআর/একে