Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মেঘনায় ভাঙন— বাঁধ সংস্কারে ১১০০ কোটি টাকার প্রকল্প

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৫ এপ্রিল ২০২২ ১০:১০

ঢাকা: মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী পরিবেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলায় নদী ভাঙনই ছিল নিয়তি। বসতভিটা থেকে শুরু করে আবাদি জমি— সবই চলে যেত নদীর গ্রাসে। এর সঙ্গে বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় তো ছিলই। সত্তরের দশকে এই দ্বীপ জেলার বিভিন্ন এলাকাকে রক্ষা করতে নির্মাণ করা হয়েছিল ২৫০ কিলোমিটার বাঁধসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। সময়ের পরিক্রমায় ফের সেই বেড়ি বাঁধের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাঁটল। এর ফলে গত কয়েক বছরে নদী ভাঙন তীব্র হয়ে উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

এ পরিস্থিতিতে মেঘনার ভাঙন রোধ করতে নতুন করে বাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে সরকার। এই উদ্যোগের আওতায় ভোলার তজুমদ্দিন ও লালমোহন উপজেলায় উপকূলীয় বাঁধ পুনর্বাসন, নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও তীর সংরক্ষণ (প্রথম পর্যায়) শীর্ষক একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (বাপাউবো)। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে মেঘনা পাড়ের ৮০ কিলোমিটার এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন তীর সংরক্ষণ নিশ্চিত করা হবে। ফলে নদী ভাঙনও রোধ করা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে বেতুয়া নদীর ১৯ কিলোমিটার পুনঃখননের মাধ্যমে নদীর নাব্য বজায় রাখা যাবে, বাড়বে সেচ সুবিধাও। শুধু তাই নয়, সাতটি পানি নিষ্কাশন অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় লবণাক্ত পানির প্রবেশ রোধ ও ৯টি হার্বার পয়েন্ট নির্মাণের মাধ্যমে মাছ ধরার ট্রলারের নিরাপদ আশ্রয়ের সুযোগ তৈরি হবে।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী পরিবেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলার মূল ভূখণ্ডকে বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও সাইক্লোনসহ বিভিন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে বাপাউবো সত্তরের দশকে জেলার চারদিকে ২৫০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করে। পরবর্তী সময়ে ক্রমাগত ভাঙনের ফলে ৫৬ ও ৫৭ নম্বর পোল্ডারের মেঘনা নদীর তীরের বেড়ি বাঁধের অনেকাংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিভিন্ন সময়ে বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করে সাময়িকভাবে পানির প্রবেশ রোধ করা হলেও গত কয়েক বছরে তীব্র স্রোতের কারণে মেঘনা পাড়ের নদী ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। এ কারণেই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) শরিফা খান সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভোলা জেলার তজুমদ্দিন ও লালমোহন উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। একইসঙ্গে লবণাক্ত পানির প্রবেশ রোধ ও সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ করা যাবে। ফলে কৃষি উৎপাদনও বাড়ানো সম্ভব হবে। এ কারণেই প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর এ বছরের ২৩ জানুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় পরিকল্পনা কমিশন থেকে কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল। সেই সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য থাকবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের।

প্রকল্পটির আওতায় মেঘনা তীরের ৩৪ দশমিক ৬৯ কিলোমিটার উপকূলীয় বাঁধ পুনর্বাসন করা হবে, ১৭ দশমিক ১০ কিলোমিটার তীরে চলবে সংরক্ষণ কাজ, ১৯ কিলোমিটার নদী পুনঃখনন করা হবে। এছাড়া সাতটি পানি নিষ্কাশন অবকাঠামো, ৯টি হার্বার ও তিনটি রিভার অবজারভেটরি টাওয়ার নির্মাণ করা হবে প্রকল্পটির মাধ্যমে। এর বাইরে বাঁধে ৩৪৭টি সোলার লাইটিং স্থাপন এবং একটি ব্রিজ নির্মাণের পাশাপাশি ৭ দশমিক ৩৯ হেক্টর এলাকায় বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

দ্বীপ জেলা ভোলা বাঁধ সংস্কার বেড়ি বাঁধ মেঘনার ভাঙন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর