জেলে বসে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা, বেরিয়েই ধরা
৫ এপ্রিল ২০২২ ১৯:০৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির বাসভবনের নিরাপত্তা রক্ষী খুনের মামলার আসামিসহ ১১ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এদের মধ্যে তিন জন মাত্র চারদিন আগে জামিনে জেল থেকে বের হয়েছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জামিন পেয়ে মুক্তির জন্য অপেক্ষমাণ অবস্থায় তিন জন জেলে বসেই ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা সাজায়। ঈদের বাজারের ক্রেতা এবং ব্যাংক থেকে নগদ টাকা উত্তোলন করে বহনকারীদের টার্গেট করেই তারা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা নিয়েছিল।
সোমবার (৪ এপ্রিল) রাতভর নগরীর সদরঘাট ও খুলশী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নগর গোয়েন্দা পুলিশের বন্দর জোনের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি-ডিবি) নোবেল চাকমা।
গ্রেফতার ১১ জন হলো- মিন্টু দাশ (৩১), বেলাল হোসেন (৩২), মো. জাহিদ (৩০), বিপ্লব চৌধুরী (৪৩), সুমন প্রকাশ চাকমা সুমন (২৩), মো. সাকিব (২৫), রুবেল কান্তি দাশ (৩২), মো. খোকন (২৫), খোকন হাওলাদার (৩০), জসিম উদ্দিন (২৫) এবং নুরুল ইসলাম (৪৫)।
এডিসি নোবেল চাকমা সারাবাংলাকে জানান, নগরীর খুলশী থানার টাইগারপাস মোড়ে সোমবার মধ্যরাতে ছিনতাইয়ের প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষারত অবস্থায় মিন্টু, বেলাল, জাহিদ ও বিপ্লবকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে দু’টি চাকু উদ্ধার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে খুলশী থেকে আরও তিন জন এবং সদরঘাট থেকে আরও চার জনকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনভাগে বিভক্ত হয়ে থাকা ১১ জন একই ছিনতাইকারী গ্রুপের সদস্য। মিন্টু দাশ তাদের মূল দলনেতা। বাকি দ’ইটি গ্রুপে চাকমা সুমন ও জসিম নেতৃত্ব দিচ্ছিল। গ্রেফতার বিপ্লব ছাড়া বাকিদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। চাকমা সুমনের বিরুদ্ধে ১২টি, মিন্টুর বিরুদ্ধে ৪টি, জসিমের বিরুদ্ধে ১১টি, সাকিবের বিরুদ্ধে ৯টি, নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৫টি, খোকন হাওলাদারের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা আছে।
এদের মধ্যে মিন্টু পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ মহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) বাসভবনের নিরাপত্তা রক্ষী খুনের মামলার আসামি বলে জানান এডিসি নোবেল চাকমা।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার বাটালি হিল এলাকায় ডিআইজির বাসভবনের নিরাপত্তা রক্ষী পুলিশ কনস্টেবল মো. আবদুল কাইয়ূমকে কুপিয়ে খুন করে একদল ছিনতাইকারী। তাদের হামলায় আহত হয়েছিলেন আরও তিন পুলিশ কনস্টেবল। ওই ঘটনার পর মিন্টুসহ কয়েকজন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।
গ্রেফতার ১১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (ডিবি-পশ্চিম) একেএম মহিউদ্দিন সেলিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘চারদিন আগে মিন্টু ও বেলাল জেল থেকে জামিনে বের হয়। জাহিদ বের হয় একদিন পর। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, জেলে বসে তারা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। তিন জন জেল থেকে বেরিয়ে বাকি আটজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ১১ জন সংঘবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন এলাকা রেকি করেছিল। তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে ছিনতাইয়ের উদ্দেশে তারা নগরীর তিনটি স্থানে অবস্থান নেয়। তাদের কাছে ছোরা ছিল। ছিনতাইয়ে বাধা দিলে ছুরিকাঘাতের সিদ্ধান্তও তাদের ছিল।’
‘ঈদকে সামনে রেখে মার্কেট-শপিংমলে আসা ক্রেতাদের বিশেষ করে নারীদের এবং ব্যাংক থেকে নগদ টাকা নিয়ে বহনকারীকে আটকে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা তারা নিয়েছিল। রমজানের প্রথম দিকে মাগরিবের নামাজের পর থেকে মার্কেট চালু থাকা পর্যন্ত এবং ভোর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত তারা ছিনতাই করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তী সময়ে রমজানের মধ্যভাগে লেনদেন বাড়ার পর দিনে বিভিন্ন ব্যাংকের সামনে অবস্থান নিয়ে টাকা উত্তোলনকারীকে টার্গেট করে ছিনতাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল’- বলেন মহিউদ্দিন সেলিম।
গ্রেফতার ১১ জনের মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে নগরীর খুলশী থানায় এবং চারজনের বিরুদ্ধে সদরঘাট থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান এডিসি নোবেল চাকমা।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম