ধর্মপাশায় হাওর ডুবে কৃষকের সর্বনাশ
৫ এপ্রিল ২০২২ ২৩:১৬
সুনামগঞ্জ: জেলার ধর্মপাশার চন্দ্র সোনার তাল হাওরে বাঁধ ভেঙে কয়েক হাজার কৃষকের স্বপ্ন ডুবে গেছে।
মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৫ টায় ওই বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রবলবেগে পানি ঢুকে তলিয়ে যায় হাওর। ধর্মপাশার বাঁধের কাজ অসময়ে হয়েছিল বলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য রুবেল আহমদ দাবি করেছেন।
সোমবার (৪ এপ্রিল) রাত থেকে এই হাওরের ডুবাইল অংশের বরুণ কাইচ্ছা বাঁধে ধস শুরু হয় এবং বাঁধের নিচ দিয়ে পানি ঢুকতে থাকে। স্থানীয় কৃষকরা প্রাণপন চেষ্টা করে বিকাল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত বাঁধ আটকে রাখেন।
হাওর পার্শবর্তী জৈনপুরের গ্রামের কৃষক জমির বলেন, কৃষকরা ২০ ঘণ্টা ধরে এই বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেন। কংস নদের পানি কূল উপচে হাওরে ঢুকে ফসল তলিয়ে যায়।
তিনি জানান, মঙ্গলবার দুপুরে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. মোশাররফ হোসেন, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন, সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বাঁধ পরিদর্শন করে বাঁধ রক্ষায় সকল সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
একই গ্রামের কৃষক কাঞ্চন ও শাহীন আলম নিজেদের সর্বনাশের কথা জানিয়ে বললেন, এই ক্ষতি পোষানোর ক্ষমতা নেই তাদের।
কাঞ্চন বললেন, দুই লাখ টাকা ঋণে জমি করেছেন তিনি। এখন ঋণ দেবেন কীভাবে, পরিবারের কী অবস্থা হবে?
কৃষক শাহীন আলম বললেন, ৫ একর জমির সবই পানিতে ডুবেছে।
কৃষকরা জানিয়েছেন, এই হাওরের বরুণ কাইচ্ছা বাঁধে দুর্বলতার কথা আগে থেকেই বলে আসছিলেন তারা।
ইউপি চেয়ারম্যান মোকারম হোসেন বললেন, বাঁধের যে অংশে ফাটল ধরেছিল, সেই অংশ মেরামত করতে করতে বিকেলে অন্য অংশ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু করে।
তিনি বলেন, বাঁধের কাজ কারা করেছে তিনি জানেন না, তিনি নির্বাচিত হওয়ার আগেই কাজ দেওয়া হয়েছে।
সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রুবেল আহমদ এই বাঁধ ভাঙায় নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ, বারহাট্টার কিছু অংশের ফসল ডুবে যাবে বলে জানান। তার দাবি বাঁধ ভাঙায় কমপক্ষে ২০০০ হেক্টর ফসল ডুববে।
তিনি বললেন, ১০-১২ দিন আগে এই বাঁধের কাজ হয়েছে। বাঁধের কাজ করেছে দয়ালপুর গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম। সে কৃষক নয়, তাকে কীভাবে কাজ দেওয়া হলো তিনি জানেন না। অসময়ে এই বাঁধ হওয়ায় পানির প্রথম ধাক্কায়ই ভেঙে গেছে বলে জানান তিনি।
ধর্মপাশার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোনতাসির হাসান প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে কারা ছিল এই বিষয়ে কাগজ না দেখে বলা যাবে না জানিয়ে বললেন, বাঁধের কাজ ঠিকঠাক ভাবেই হয়েছিল।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বললেন, চন্দ্রসোনার তাল হাওর ডুবে ১৮৫ হেক্টর জমির ফসল প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহরুল ইসলাম ফোন না ধরায় এই বিষয়ে তার বক্তব্য জানা যায় নি।
তবে, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, দিনব্যাপী তারা ঝুঁকিপূর্ণ হাওরের বাঁধগুলো পরিদর্শন করছেন। সন্ধ্যার দিকে একটি বাঁধ ভেঙ্গে হাওরে পানি ঢোকার খবর পান। তারা চেষ্টা করছেন কী করে ভাঙ্গনের মুখ বন্ধ করে পানি আটকানো যায়।
তিনি বলেন, বাঁধ নির্মাণে পিআইসিদের কারও যদি গাফলাতি থাকে তাহলে তদন্তের মাধ্যমে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
সারাবাংলা/একেএম