মানি লন্ডারিং আইনের মামলায় রায় আজ, যে সাজা হতে পারে এনু-রুপনের
৬ এপ্রিল ২০২২ ০৮:২১
ঢাকা: একাধিক মামলার আসামি রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন ভুঁইয়া রূপন। এর মধ্যে এই দুই সহোদরের প্রথম কোনো মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষের পথে। আজ বুধবার (৬ এপ্রিল) ওয়ারী থানায় দায়ের করা মানি লন্ডারিং আইনের এই মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক ইকবাল হোসেনের আদালত এ রায় ঘোষণা করবেন। মামলায় এনু ও রুপনসহ মোট আসামির সংখ্যা ১১।
সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর শওকত রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা ১২ বছরের কারাদণ্ড প্রত্যাশা করছেন। তিনি জানান, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। যে ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে, তাতে আসামিদের সর্বোচ্চ ১২ বছর এবং সর্বনিম্ন চার বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। সব অভিযোগ যেহেতু প্রমাণ করা গেছে, তাই আমাদের প্রত্যাশা— আসামিদের সর্বোচ্চ সাজাই হবে।
বিপরীত কথা অবশ্য বলছেন এনু-রুপনের আইনজীবী রাজীব সরকার। তিনি বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারেনি। সাক্ষ্য-প্রমাণে অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি। কাজেই আমরা প্রত্যাশা করছি, আসামিরা খালাস পাবেন।
এর আগে, গত ১৬ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের এ তারিখ নির্ধারণ করেন। মামলার বাকি আসামিরা হলেন— মেরাজুল হক ভূঁইয়া শিপলু, রশিদুল হক ভূঁইয়া, সহিদুল হক ভূঁইয়া, পাভেল রহমান, তুহিন মুন্সি, আবুল কালাম আজাদ, নবীর হোসেন শিকদার, সাইফুল ইসলাম ও জয় গোপাল সরকার।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, আসামিদের মধ্যে শিপলু, রশিদুল, সহিদুল ও পাভেল মামলার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন। তুহিন জামিনে আছেন। বাকি ছয় আসামি কারাগারে আছেন।
এর আগে, ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি ভোরে ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে এনু ও রুপনকে ঢাকার কেরাণীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে ২২টি জমির দলিল, পাঁচটি গাড়ির কাগজপত্র ও ৯১টি ব্যাংক হিসাবে ১৯ কোটি টাকা থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়াও তাদের কাছ থেকে নগদ ৪০ লাখ টাকা ও ১২টি মোবাইল জব্দ করা হয়।
মামলার এজাহারে সূত্রে জানা গেছে, এনামুলের আয়কর নথি, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তার বৈধ আয়ের কোনো উৎস নেই। তিনি ক্যাসিনো ব্যবসাসহ অবৈধ উপায়ে আয় করা অর্থ দিয়ে প্রচুর সম্পদ অর্জন করেছেন, যা তার আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। দেশে ছাড়াও দেশের বাইরেও তার নামে প্রচুর সম্পদ রয়েছে।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনো খেলা পরিচালনাকারী এনুর কর্মচারী আবুল কালাম আজাদের বাসায় ক্যাসিনো থেকে উপার্জিত টাকা উদ্ধারের জন্য ওয়ারীর লালমোহন সাহা স্ট্রিটের বাড়ি ঘেরাও করে র্যাব। কালামের স্ত্রী ও মেয়ের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী চার তলা বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে দুই কোটি টাকা উদ্ধার করে র্যাব।
ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, আসামিরা জেনে-বুঝে অবৈধ প্রক্রিয়ায় উপার্জিত অর্থ আড়াল করার জন্য গোপনে কালামের কাছে রাখেন। কালাম তা গ্রহণ করে নিজের কাছে রাখেন, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের অপরাধ। এ ঘটনায় র্যাব-৩-এর পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যান) জিয়াউল হাসান ওয়ারী থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
২০২০ সালের ২১ জুলাই মামলাটি তদন্ত করে ১১ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক মোহাম্মদ ছাদেক আলী। ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। মামলাটির বিচার চলাকালে আদালত ২০ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন।
সারাবাংলা/এআই/টিআর