Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কানাডায় পালানোর চেষ্টায় ছিল বোতল চৌধুরী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৬ এপ্রিল ২০২২ ১৫:৪০

আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, ফাইল ছবি

ঢাকা: চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা মামলায় গ্রেফতার চার্জশিটভুক্ত আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী কানাডায় পালানোর চেষ্টা করছিলেন বলে জানিয়েছে র‍্যাব। গত ২৮ মার্চ ওয়ারেন্ট ইস্যু হলে ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে কানাডায় চলে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল বোতল চৌধুরীর। পরবর্তীতে তাকে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করা হয়।

বুধবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর ভোর ৩টায় বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের নীচে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় ভিকটিমের বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলা নম্বর ৫৯। ধারা ছিল ৩০২/৩৪/৩২৩/৩২৬/৩০৭। তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ৯ জনের বিরুদ্ধে ডিবি পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। ২০০১ সালে ৩০ নভেম্বর ওই মামলায় অভিযোগপত্র গঠন করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ওই সময় মামলাটি বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়। মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে পাঠানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই মামলার ১ নম্বর আসামি আদনান সিদ্দিকী দুই বছর পর হাইকোর্টে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুলসহ আদেশ দেন। পরবর্তীতে হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট আবারও আরেকটি রায় দেন। এই রায়ে আগের জারি করা রুলটি খারিজ করে দেওয়া হয়। প্রত্যাহার করা হয় হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ। এরপর আদালত গত ২৮ মার্চ অনুপস্থিতির কারণে তাদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এরপর পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে র‌্যাব।

বিজ্ঞাপন

র‍্যাব জানায়, বোতল চৌধুরীকে গ্রেফতারের সময় ২২ বোতল বিদেশি মদ, ১৪ বোতল সোডা ওয়াটার, একটি আইপ্যাড, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৬টি ক্রেডিট কার্ড, দুইটি আইফোন ও নগদ দুই লাখ টাকা জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার বোতল চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন।

বোতল চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে বনানীর আবেদীন টাওয়ারে গ্রেফতার বোতল চৌধুরী এবং আসাদুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলামের যৌথ মালিকানায় ট্রাম্পস ক্লাব যখন প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাথমিকভাবে ৫০ লাখ টাকার পুঁজি নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ৫০ লাখ টাকার মধ্যে ২৫ লাখ টাকা লগ্নি করেছিলেন আশিষ রায় এবং অবশিষ্ট ২৫ লাখ টাকা লগ্নি করেছিলেন পলাতক বান্টি ইসলাম।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই ক্লাবে বিভিন্ন বয়সী মানুষ সন্ধ্যা থেকে শুরু করে ভোর রাত পর্যন্ত নানাবিধ অসামাজিক কার্যকলাপের জন্য আসত। গ্রেফতার আশিষ রায় চৌধুরী ১৯৯৬ সাল থেকেই বর্ণিত ক্লাবে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ করে আসছিল। পর্যায়ক্রমে এই ট্রাম্পস ক্লাবটি সকল আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন এবং গ্যাং লিডারদের একটি বিশেষ আখড়ায় পরিণত হয় এবং এখানে সবচেয়ে বেশি যাতায়াত ছিল আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের। আজিজ মোহাম্মাদ ভাই মূলত ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের চক্রগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন ধরনর মিটিং বা তাদের পরিচালনা করার জন্য সেই ক্লাবে নিয়মিত যাতায়াত করত এবং সেই ক্লাবকে ব্যবহার করত। সেই সুবাদে ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম এবং বোতল চৌধুরীর সঙ্গে তার সখ্যতা তৈরি হয়।

আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ভাতিজিকে বান্টি ইসলাম বিয়ে করার সুবাদে তাদের মধ্যে একটি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল এবং বান্টি ইসলাম ও বোতল চৌধুরী যুবক বয়স থেকে একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পরবর্তীতে তাদের এই বন্ধুত্ব ব্যবসায়ীক অংশিদারিত্বে রূপ নেয় এবং একসঙ্গে পার্টনারশিপে ট্রাম্পস ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে চালানো শুরু করে। আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বান্টি ইসলাম ও বোতল চৌধুরী একসঙ্গে ট্রাম্পস ক্লাবে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড ও অপরাধ জগতের ব্যক্তিদের সঙ্গে জড়িত থেকে অপরাধ কার্যক্রম চালাত।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার বোতল চৌধুরী আরও জানায় যে, বনানীর আবেদীন টাওয়ারের অষ্টম তলায় অবস্থিত ট্রাম্পস ক্লাবের ঠিক পাশেই ছিল ওই সময়কার বনানীর সবচেয়ে বড় মসজিদ বা বনানীর জামে মসজিদ। যেহেতু এই ট্রাম্পস ক্লাবে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে সারারাতব্যাপী বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কর্মকাণ্ড চলত। ভিকটিম চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী বনানী মসজিদের মসজিদ কমিটি নিয়ে বারবার ট্রাম্পস ক্লাবের এই ধরনের অশ্লীলতা বন্ধের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। কিন্তু ভিকটিম সোহেল চৌধুরী প্রতিবাদ জানানোর কারণে ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম এবং বোতল চৌধুরীর ব্যবসায়িক স্বার্থে মারাত্মকভাবে আঘাত লাগে।

অপরদিকে আজিজ মোহাম্মদ ভাই যেহেতু আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেক্টিভিটি মেইনটেইন করার জন্য ঢাকায় ট্রাম্পস ক্লাবকে একটা সেইফ হাউজ হিসেবে বেছে নিয়েছিল তার সেই স্বার্থেও আঘাত লাগে। আবার ইমনের মতো শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও যেহেতু অসামাজিক কার্যকলাপ করতে একমাত্র সেইফ হাউজ পেয়েছিল, ওই সময়ে যদি ক্লাবটি বন্ধ হয়ে যেত তাহলে তারা সকলেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ত। সকল ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এই ট্রাম্পস ক্লাব। চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী ও্ই সময় সমাজের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে মসজিদ কমিটির পক্ষ হয়ে এই ট্রাম্পস ক্লাবটি বন্ধ করতে বারবার চেষ্টা করায় এই সকল গ্রুপের অর্থাৎ ব্যবসায়ী বান্টি ইসলাম ও বোতল চৌধুরী, আজিজ মোহাম্মদ ভাই এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের চক্ষুশূলে পরিণত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর সরাসরি তর্ক এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে আজিজ মোহাম্মদ ভাই সোহেল চৌধুরীর ওপর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে তার ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বান্টি ইসলাম ও বোতল চৌধুরীকে অনুরোধ জানায়।

ট্রাম্পস ক্লাবে জনসম্মুখে আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে সোহেল চৌধুরী অপমান করায় প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বান্টি ইসলাম ও বোতল চৌধুরী একটি পরিকল্পনা করে। তারা শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনকে প্রস্তাব দেয় সোহেল চৌধুরীকে হত্যার জন্য। তাদের অনুরোধে ইমন সোহেল চৌধুরীকে হত্যার প্রস্তাবে রাজি হয় এবং এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

আরও পড়ুন— সোহেল চৌধুরী হত্যা: ২৪ বছর পর গ্রেফতার প্রধান আসামি আশিষ

সারাবাংলা/ইউজে/এসএসএ

বোতল চৌধুরী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর