শিক্ষা ছুটি না নিয়েই পিএইচডি অর্জন, অধ্যাপককে সতর্ক করল ঢাবি
৬ এপ্রিল ২০২২ ২০:৫৬
নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে শিক্ষা ছুটি না নিয়ে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জনের দায়ে অভিযুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. মফিজুর রহমানকে সতর্ক করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট।
গত ৬ মার্চ অধ্যাপক মো. মফিজুর রহমানকে সতর্ক করে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠির একটি কপি সারাবাংলার হাতে রয়েছে।
২০১৮ সালে নরওয়ের ইউনিভার্সিটি অব বার্গেন থেকে মিডিয়া স্টাডিজ বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন অধ্যাপক মফিজুর রহমান। তবে এই ডিগ্রি অর্জনের জন্য তিনি নরওয়ে গেলেও তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নেননি। বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স অ্যান্ড রেগুলেশন-১৯৭৩-এর লঙ্ঘন হওয়ায় এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য শিক্ষা অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্য হিসেবে ছিলেন— আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।
ওই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে সেটি নিয়ে এ বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় আলোচনা হয়। ওই সভার কার্যবিবণীর একটি কপিও সারাবাংলার হাতে রয়েছে।
কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়— অধ্যাপক মো. মফিজুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং নরওয়ের বার্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক ও সহযোগিতা চুক্তি (কোলাবরেশন এগ্রিমেন্ট) অনুযায়ী পিএইচডি ডিগ্রির জন্য নিবন্ধন করে বার্গেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। চুক্তির ৪ নম্বর ধারায় পিএইচডিকালীন শিক্ষাকতা চাকরি থেকে ছুটি নেওয়ার শর্ত ছিল। তবে তিনি সেই ধারা অনুসরণ করেননি।
সিন্ডিকেট সভায় আরও বলা হয়, পিএইচডি রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে কোনো পর্যায়ই মফিজুর রহমান বিভাগকে বিষয়টি অবগত করেননি। নরওয়ের বার্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষণার কার্যক্রম বিষয়ে বিভাগকে অবগত ও অবহিত না করা এবং সম্পাদিত চুক্তির উল্লেখিত শর্ত লঙ্ঘন করে অধ্যাপক মফিজুর রহমান নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন বলে সিন্ডিকেট মনে করে।
সিন্ডিকেট বলছে, এমন ব্যত্যয় কোনোভাবেই কাম্য নয়। তবে যেহেতু বার্গেন বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি দিয়েছে, তাই ডিগ্রির বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ গ্রহণ করে অধ্যাপক মফিজুর রহমানকে সতর্ক করা উচিত, যেন ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষক বা গবেষক এ ধরনের নিয়মনীতির ব্যত্যয় না ঘটান।
এদিকে, ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ৬ মার্চ অধ্যাপক মফিজুর রহমানকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চিঠিতে অধ্যাপক মফিজুর রহমানকে নিয়মনীতি পালনে যত্নশীল থাকার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকারের সই করা চিঠিতে বলা হয়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনাকে জানানো যাচ্ছে, আপনি নরওয়ের বার্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষণার কার্যক্রম বিষয়ে বিভাগকে অবগত ও অবহিত না করা এবং সম্পাদিত চুক্তির উল্লিখিত শর্ত লঙ্ঘন করে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন বলে সিন্ডিকেট মনে করে, যা কোনোক্রমেই কাম্য নয়। ভবিষ্যতে যেন আপনি নিয়মনীতি পালনে যত্নশীল থাকেন, সেজন্য আপনাকে সতর্ক করা হলো।
সারাবাংলা/আরআইআর/টিআর