৩ হাজার ভুয়া এমবিবিএস সার্টিফিকেট দিয়েছে প্রিমিয়ার
৭ এপ্রিল ২০২২ ১৪:৩৫
ঢাকা: প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি প্রায় তিন হাজার ভুয়া এমবিবিএস সার্টিফিকেট দিয়েছে। আর ওই সার্টিফিকেটধারীরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় এমবিবিএস পরিচয়ে ভিজিটিং কার্ড ও প্যাড তৈরি করে চেম্বার খুলে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। প্রতিটি সার্টিফিকেট সর্বনিম্ন দুই লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি করা হতো। আগের দিন টাকা দিলে পরের দিনই সার্টিফিকেট দেওয়া হতো।
এ ঘটনার মূলহোতা নুরুল হক সরকারসহ মোট ছয় জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতারদের মধ্যে রয়েছেন: নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ মনি সরকার (৭২), মোয়াজ্জেম হোসেন (৫৮), ডা. মো. সাইদুর রহমান ওরফে নজরুল (৩০), মাহফুজুর রহমসন মাহফুজ (৩৭), ডা. মো. আমান উল্লাহ (৩৮) ও দেবাশীষ কুন্ডু (৫২)।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আকতার এসব তথ্য জানান।
ডিবি প্রধান বলেন, প্রায় দুই যুগ ধরে এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত নুরুল হক সরকার এবং তার ছেলেমেয়েরা।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে অসংখ্য ভুয়া সনদপত্র, টেস্টিমোনিয়াল, ট্রান্সক্রিপ্ট, রেজিষ্ট্রেশন কার্ড, অ্যাডমিট কার্ড ও নকল জব্দ করা হয়। এছাড়া চারটি ব্যাংকের ভুয়া চেক, চটকদার বিজ্ঞাপনের পেপার কাটিং, লিফলেট, প্রেসক্রিপসন, অসংখ্য ভিজিটিং কার্ড, একটি সিপিইউসহ কম্পিউটার সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।
রাজধানীর খিলক্ষেত ও মালিবাগে দুইটি অফিস ভাড়া করে এমবিবিএস, বিডিএস, এমফিল, পিএইচডি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অ্যাডভোকেটশিপসহ এ ধরণের ১৪৪ বিষয়ের ওপর অসংখ্য সার্টিফিকেট দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে তারা। বাস্তবে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির কোনো অস্তিত্ব নেই।
নুরুল হক সরকার নিজেকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে পরিচয় দিতেন। পরিবারের সদস্য ছাড়াও আরও অনেক লোককে সঙ্গে নিয়ে ভুয়া এমবিবিএস সার্টিফিকেট বিক্রির একটি চক্র গড়ে গোলেন নুরুল হক সরকার। এই চক্র কোনো রকম ক্লাস পরীক্ষা ছাড়াই বৈধ অনুমোদন ব্যতিরেকে টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট বিক্রি করত।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, ডা. মো. সাইদুর রহমান ওরফে নজরুল, ডা. মো. মাহফুজুর রহমান ওরফে মাহফুজ ও ডা. মো. আমান উল্লাহ একটি মাদরাসা থেকে দাখিল ও কামিল পাস করে টাকার বিনিময়ে এমবিবিএস ডিগ্রি নেয়। দাখিল ও কামিল পাসে যা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে সুসজ্জিত চেম্বার খুলে এসব চিকিৎসক রোগীও দেখতেন নিয়মিত। বড় আশঙ্কার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব প্রতিরোধে ডিবি এখন থেকে অভিযান করবে।
প্রতারণার কৌশল জানতে চাইলে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, সার্টিফিকেট প্রত্যাশীরা মোবাইলের মাধ্যমে সার্টিফিকেটের জন্য যোগযোগ করে এবং পার্সেলের মাধ্যমে ভুয়া সার্টিফিকেটগুলো পাঠান হয়। এমবিবিএস ডিগ্রির জন্য পাঁচ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিতেন ডা. মো. নুরুল হক সরকার। এমবিবিএস ডিগ্রির সঙ্গে তিনি একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বরও দিতেন, সেটিও ছিল ভুয়া। ডা. মো. নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনি সরকার প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজির মালিক হলেও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি কোনো প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। তার ইউনিভার্সিটিতে কত জন শিক্ষক রয়েছেন সেটিও তিনি ভুলে গেছেন বলে জানান। সম্পূর্ণটাই তার ভণ্ডামি। প্রতারক হিসেবে এই লাইনে সে প্রসিদ্ধ।
এসব ভুয়া ডিগ্রি নিয়ে এই ভুয়া ডাক্তাররা কোনো চাকরি পেয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রেফতারদের মধ্যে দুজন আছেন চাকরিজীবী। সাভারে একজনের চেম্বার রয়েছে এবং ডায়াগনটিস্টিক চেম্বার রয়েছে।
ডিবি প্রধান বলেন, ছেলেমেয়েরা কোন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হচ্ছে সেগুলো ইউজিসির ওয়েবসাইটে গেলেই অভিভাবকরা খোঁজ নিতে পারবেন। সেই ইউনিভার্সিটি অনুমোদনপ্রাপ্ত কি না এবং তাদের নামে কোনো অভিযোগ রয়েছে কি না তাও জানা যাবে।
সারাবাংলা/ইউজে/একেএম