বছরের পর বছর অনুপস্থিত থাকলেও নিয়মিত বেতন তোলেন মাদরাসা শিক্ষক
৭ এপ্রিল ২০২২ ২১:৫৭
কিশোরগঞ্জ: বছরের পর বছর ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে এবং শিক্ষার্থীদের পাঠদান না করেই নিয়মিত বেতন-ভাতা তোলার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতিসহ রয়েছে নানামাত্রিক অভিযোগ।
এ অভিযোগ উঠেছে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার গোপদিঘী ইউনিয়নের শ্যামপুর দারুল উলুম দাখিল মাদরাসার সহকারী কৃষিশিক্ষক হাসান মো. ফরহাদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় প্রভাবশালী নিকটাত্মীয় এক নেতার মদতপুষ্ট ওই শিক্ষক সুপারিন্টেন্ডেন্টের যোগসাজশে মাদরাসায় উপস্থিত থাকা কিংবা শ্রেণি কার্যক্রমের কোনোপ্রকার দায়িত্ব পালন ছাড়াই নির্ধারিত সময়ে বেতন-ভাতা ইস্যু করে নিচ্ছেন বলে এলাকাবাসী জানায়।
চরম স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর পক্ষে সুশীল সমাজের একজন সচেতন নাগরিক লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন শ্যামপুর দারুল উলুম দাখিল মাদরাসার বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দফতরে।
গত ২২ মার্চ এ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আছিয়া আলমের গোপনীয় সহকারী (সিএ) আবু রায়হান।
অভিযোগে জানা যায়, ১৯৯৯ সালে মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হলে তাতে হাসান মো. ফরহাদ ২০০৫ সালের মার্চ মাসে সহকারী কৃষিশিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০১০ সালে মাদরাসাটি সরকারি এমপিওভুক্ত হয়। মাদরাসায় বছরের পর বছর অনুপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পরিবর্তে মিঠামইন বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও পারিবারিক নানারকম কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন তিনি।
হাসান মো. ফরহাদ বিগত বিশেষ করে ২০১৯ সালের ১৯ মার্চে শুধুমাত্র ম্যানিস্ট্রি অডিটের সময় মাদরাসায় উপস্থিত থাকলেও অভিযোগ করা পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রমে অনুপস্থিত রয়েছেন।
এমন প্রেক্ষাপটে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলে তড়িঘড়ি করে গত ১৩ মার্চ মাদ্রাসায় উপস্থিত হয়ে সুপারিন্টেন্ডেন্টের সহায়তায় বিগত টানা প্রায় চার বছরের হাজিরা একদিনে স্বাক্ষর করে ফিরে যান শিক্ষক ফরহাদ।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ ৫৪৪ দিন পর গত ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রাাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলেও শিক্ষক ফরহাদ ‘মামার জোরে’ মাদরাসা কামাই করে চলেছেন।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর করোনা সংক্রমণ আবার বেড়ে যাওয়ায় এ বছরের ২১ জানুয়ারি হতে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধের পর ২২ ফেব্রুয়ারি পুনরায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলেও ২৫ মার্চ পর্যন্ত গরহাজির রয়েছেন তিনি।
এ ব্যাপারে কথা হয় অর্ধশত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে। তারা কৃষি শিক্ষক হাসান মো. ফরহাদের অনুপস্থিতিতে পাঠদান থেকে বঞ্চিত হয়ে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে অনুযোগ করেন।
অভিযুক্ত শিক্ষক হাসান মো. ফরহাদ অনিয়মিত উপস্থিতির কথা স্বীকার করে নেন। এ জন্য তার দীর্ঘদিন শারীরিক অসুস্থতাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। এতে তার পক্ষে মাদরাসা ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশন না থাকলেও মৌখিক সম্মতি রয়েছে বলে জানান তিনি।
মাদরাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট মো. আমিনুল হক শিক্ষক ফরহাদের গরহাজির বিষয়টির প্রতি মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটি সিমপ্যাথি (সহানুভূতি) হিসেবে দেখে আসছেন মন্তব্য করে বলেন, ‘ওই শিক্ষক বিধি মোতাবেক ছুটির বাইরে কোনো ছুটি ভোগ করেননি।’
এদিকে প্রায় ১২ বছর টানা দায়িত্বে থাকা মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি আবু তাহের মীর কৃষিশিক্ষক ফরহাদের অনিয়মিত উপস্থিতির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট শিক্ষক হৃদরোগে ভুগছেন। তবে মেডিকেল ছুটি কিংবা অবৈতনিক ছুটি বিষয়ে লিখিত অনুমোদনের কথা আমার জানা নেই।’
মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আছিয়া আলম বলেন, ‘ওই শিক্ষকের অনপুস্থিতির বিষয়টি আমি অবগত নই। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিগত ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর বিকেলে জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার খেলার মাঠে আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে বলেছিলেন, ‘ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম উপজেলায় আমি শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছি; কিন্তু তেমন বাড়ছে না শিক্ষার মান। হাওরের শিক্ষার মান নিয়ে আমি সন্তুষ্ট নই।’
সারাবাংলা/একে