৫০ উপজেলায় হবে খামার, উৎপাদন হবে সাড়ে ৪ লাখ লিটার দুধ
৮ এপ্রিল ২০২২ ০৮:৪১
ঢাকা: সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও উন্নত জাতের গাভী পালন এবং গাভী পালনের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে খামারিদের জ্ঞান না থাকায় দেশে দুধের উৎপাদন আশানুরূপ নয়। ফলে দেশে উৎপাদিত দুধ দিয়ে মিটছে না চাহিদাও। এ পরিস্থিতিতে দুধের ঘাটতি রয়েছে— দেশের এমন ৫০টি উপজেলায় আধুনিক খামার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এসব খামার থেকে সাড়ে চার লাখ লিটার দুধ উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে কেবল দুধের চাহিদাই মিটবে না, কর্মসংস্থান তৈরিতেও এটি বড় ভূমিকা রাখবে। প্রত্যক্ষভাবে এই প্রকল্পের উপকারভোগী পাঁচ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এছাড়া অর্থনৈতিক কার্যক্রমে দুই হাজার নারীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণও নিশ্চিত হবে।
‘দুগ্ধ ঘাটতি উপজেলায় দুগ্ধ সমবায়ের কার্যক্রম সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি এরই মধ্যে প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় কমিশন থেকে কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় বলছে, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে গাভীপালন একটি উল্লেখযোগ্য পেশা। দেশের বিভিন্ন এলাকায় গাভীপালন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এসব খামারে দেশি জাতের গাভী ব্যবহার করা হয় বেশি, যার দুধ উৎপাদন সক্ষমতা কম। উন্নত জাতের গাভীর অভাব ও গাভী পালনে আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞানের অভাবের কারণে খামার গড়ে উঠলেও দেশে উৎপাদিত দুধের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সঠিক ব্যবস্থাপনা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসাসেবা দেওয়ার মাধ্যমে উন্নত জাতের গাভীপালন করলে দুধের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করছে মন্ত্রণালয়। এ কারণেই সমবায় অধিদফতরের মাধ্যমে ৫০টি উপজেলায় আধুনিক গরুর খামার গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য শরিফা খান সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উন্নত জাতের গাভী প্রতিপালন, দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধি, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, অর্থনৈতিক কার্যক্রমে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ও পুষ্টিমান উন্নয়ন হবে বলে মনে হয়। এ কারণে প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য বলে মত দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হলো— দেশের আট বিভাগের ৩৭টি জেলার ৫০টি দুগ্ধ ঘাটতি উপজেলায় ১০০টি উৎপাদনমুখী সমবায় সমিতি গঠন করা হবে। এর আওতায় গড়ে তোলা হবে খামার, যেখানে হলস্টোন ও ফ্রিজিয়ান জাতের মাধ্যমে গাভীর জাত উন্নয়ন করে ১০ হাজার ৬০০টি গাভী স্থায়ী হিসেবে বড় করা হবে। এছাড়া খামারের জন্য পাঁচ হাজার ব্যক্তিকে প্রশিক্ষিত খামারি ও গ্রামীণ উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা হবে। প্রকল্পের আওতায় ৫০ উপজেলায় পশুপালনভিত্তিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হবে এবং গবাদিপশুর ভ্যাকসিনেশন ও কৃত্রিম প্রজনন বিষয়ক সহায়তা দেওয়া হবে। এর বাইরেও পাঁচটি বকনা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, একটি ডাটাবেজও তৈরি করা হবে।
যেসব উপজেলায় বাস্তবায়ন হবে প্রকল্প
দেশের আটটি বিভাগের ৩৭টি জেলার ৫০টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে সমবায় অধিদফতরের এই প্রকল্প। ঢাকা বিভাগের এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে— গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর, মানিকগঞ্জ সদর, রাজবাড়ী জেলার কালুখালী, ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা, গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী, শরিয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ ও নড়িয়া, মাদারীপুর জেলার শিবচর এবং কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া ও মিঠামইন উপজেলা।
চট্টগ্রাম বিভাগের উপজেলাগুলো হলো— কক্সবাজারের কুতুবদিয়া ও চকরিয়া উপজেলা, নেয়াখালীর সেনবাগ, কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ, বুড়িচং ও দেবীদ্বার, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া সদর এবং চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা।
ময়মনসিংহ বিভাগের উপজেলাগুলো হলো— ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলা, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী উপজেলা এবং জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলা। বরিশাল বিভাগের মধ্যে কেবল বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলা রয়েছে প্রকল্পের আওতায়।
খুলনা বিভাগের যেসব উপজেলায় প্রকল্পটির কার্যক্রম প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলো হলো— খুলনা জেলার দিঘলীয়া ও পাইকগাছা উপজেলা, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, যশোরের মনিরামপুর, বাঘারপাড়া ও চৌগাছা উপজেলা, মাগুরা সদর, নড়াইলের লোহাগড়া, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ও ঝিনাইদহের সদর ও কালীগঞ্জ উপজেলা।
রংপুর বিভাগের উপজেলাগুলো হলো— রংপুর জেলার মিঠাপুকুর, নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি, ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলা এবং লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলা।
রাজশাহী বিভাগের উপজেলাগুলো হলো— পাবনা জেলার চাটমোহর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা, নওগাঁর পত্নীতলা এবং রাজশাহীর তানোর উপজেলা। আর সিলেট বিভাগের উপজেলাগুলো হলো— সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা, হবিগঞ্জের মাধবপুর, সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ এবং মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর