‘রোহিঙ্গারা আমাদের পেটে লাথি মারছে’
৮ এপ্রিল ২০২২ ১১:০৫
কক্সবাজার: রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে সবধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরেও বাড়তি আয়ের জন্য চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়ে ঢুকে পড়ছে কক্সবাজার শহরের শ্রমবাজারে। কাজের কমিশন ও স্বজনপ্রীতি করে তাদের অবৈধভাবে শহরে আনছে একটি সিন্ডিকেট। রোহিঙ্গারা ভাগ বসাচ্ছে স্থানীয়দের শ্রমবাজারে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় শ্রমিকরা। কাজ না পেয়ে অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছে। পাশাপাশি বাড়ছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।
এদিকে শ্রমবাজারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে মানববন্ধনসহ একাধিক কর্মসূচি পালন করেও কোনো লাভ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকলেও তা তেমন কাজে আসছে না।
‘কক্সবাজার দিনমজুর ঐক্যপরিষদ’ এর তথ্যমতে, শহরের শ্রমবাজারে দৈনিক অন্তত ১ হাজার দিনমজুর কাজের সন্ধানে আসেন। তাদের মজুরি নির্ধারণ আছে ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা। কিন্তু রোহিঙ্গারা শ্রমবাজার দখলের চেষ্টা করায় শুরু হয়েছে বিশৃঙ্খলা। তারা শ্রমবাজারের নির্ধারিত মজুরি না মেনে অল্প টাকাতেই কাজে নেমে পড়ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রোহিঙ্গা পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব সরকার নেওয়ায় এই টাকা তাদের কাছে বাড়তি। শনাক্ত করার সহজ উপায় না থাকায় তারা কাজের নামে বাসাবাড়িতে চুরি-ডাকাতিসহ নানান অপরাধ করে পুনরায় ক্যাম্পে ফিরে যায়। এসব রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে কাজের কমিশন ও স্বজনপ্রীতির জন্য চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়ে শহরে আনছে পুরাতন রোহিঙ্গারা। তারা শহরের লালদিঘী ও বাজারঘাটা এলাকার আবাসিক হোটেলগুলোতে থাকছে।
বাড়তি টাকার জন্য শহরের শ্রমবাজারে আসার বিষয়টি স্বীকার করেন রোহিঙ্গারাও। উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা আমির হামজা বলেন, সরকার যা দেয়, তা দিয়ে বাড়তি চাহিদা পূরণ হয় না। তাই শহরে কাজ করতে যান। ক্যাম্প থেকে অবৈধভাবে শহরে যাওয়ার পথে চেকপোস্টে আটকা পড়েন কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বেশিরভাগ সময় ফাঁকি দিয়ে চলে যাওয়া যায়। এছাড়া শুরুর দিকে কঠিন থাকলেও এখন তা সহজ। শুধু কক্সবাজার শহর নয়, তারা চট্টগ্রামেও কাজ করতে যায়। এসব এখন আর তেমন কোনো ব্যাপার না।
শহরের গুমগাছতলায় কাজ করতে আসা রোহিঙ্গা যুবক লিয়াকত হোসেন জানান, পুরাতন রোহিঙ্গা ভাইদের সহযোগিতায় তারা শহরের শ্রমবাজারে আসে। তাদের কাজের তিনভাগের এক ভাগ মজুরি দালালকে দিয়ে দিতে হয়।
রোহিঙ্গাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে শ্রমবাজারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধের দাবিতে মানববন্ধনসহ নানা পদক্ষেপ নিলেও তা কোনো কাজে আসছে না বলে জানান স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চাইছেন। স্থানীয় দিনমজুর কামরুল হাসান বলেন, এমনিতে অভাব-অনটনে দিন কাটছে। তার মধ্যে রোহিঙ্গারা এসে আমাদের পেটে লাথি মারছে। এছাড়া তারা দিন দিন আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে।
স্থানীয় দিনমজুর সৈয়দ আলম বলেন, চার সন্তানের পরিবার নিয়ে সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। একদিন কাজ বন্ধ থাকলে পরিবার খেতে পায় না। এদিকে রোহিঙ্গা তাদের আগে কাজে চলে যাচ্ছে। তারা ৩-৪শ টাকাতেও কাজ করতে রাজি হচ্ছে। মালিকরা সুযোগ বুঝে রোহিঙ্গাদেরই কাজে লাগাচ্ছে।
কক্সবাজার দিনমজুর ঐক্য পরিষদের সভাপতি মো. রহিম উল্লাহ বলেন, শ্রমবাজারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধের দাবিতে আমরা মানববন্ধন করেছি। এরপরেও রোহিঙ্গারা ঠিকই চলে আসছে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট লাগে তখনই, যখন স্থানীয় লোকজন নিজ দেশের ভাইদের কাজ না দিয়ে রোহিঙ্গাদের কাজ দেয়। এই ক্ষেত্রে প্রশাসনের পাশাপাশি সবার সচেতনতা প্রয়োজন।
কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান জানান, ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের বের হতে না দেওয়ার জন্য চেকপোস্টগুলো আরও জোরদার করতে হবে। স্থানীয় শ্রমবাজারে কোনোভাবে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয়দেরও সর্তক থাকতে হবে রোহিঙ্গাদের কাজ না দেওয়ার ব্যাপারে। শ্রমবাজারে কোনোভাবেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া যাবে না।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার ক্যাম্পের বাইরে থাকা ১০০ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে টেকনাফ মডেল থাকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান জানান, ক্যাম্প ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা, যানবাহনের চালক ও শ্রমিক হিসেবে কাজ করায় এসব রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এএম