‘বিরোধী দলের নেতাদের সাজা দিতে সেল গঠন করেছে সরকার’
৮ এপ্রিল ২০২২ ১৫:২৫
ঢাকা: নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাদের অতিদ্রুত সাজা দিতে সরকার সেল গঠন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (৮ এপ্রিল) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘২০১৩ সালে মুগাদা থানায় দায়ের করা বিস্ফোরক মামলায় ৩৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। এখানে ৩২ জন খালাস পেয়েছেন আর ৭ জনকে দুই বছর তিন মাস/দুই বছর এক মাস— এভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে। এটা এখন সারা দেশেই চলছে।’
‘আমরা শুনেছি যে, তালিকা তৈরি করেছে সরকার। সেই তালিকা ধরে বিভিন্ন জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মামলা দ্রুত শেষ করার জন্য একটা সেল তৈরি করা হয়েছে এবং অতিদ্রুত মামলাগুলো শেষ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এর প্রমাণ হচ্ছে মুগদা থানার মামলাটা। যেখানে কোনো কিছু নাই, নাথিং। আমার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো আছে, সেই মামলাগুলোতে কী আছে? একটা হচ্ছে আমি ময়লার গাড়ি পোড়াচ্ছি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে সেক্রেটারিয়েটের ভেতরে মোটরসাইকেলের পেছনে গিয়ে বোমা মেরেছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই ছল-চাতুরি করে গোটা জাতিকে একটা ভয়াবহ অন্ধকারের গহবরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটার বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। এই যে আমরা রাজনৈতিক কর্মী, আমরা তো কেউ চোর না, ডাকাত না, ক্রাইম করি না। আমরা সবাই রাজনৈতিক কর্মী, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছি। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে এভাবে একেবারে নির্মূল করার যে ভয়াবহ প্রচেষ্টা—এটা ফ্যাসিবাদ ছাড়া কিছু হতে পারে না।’
সরকার বিরোধী দলকে পুরোপুরি নির্মূল করতে কাজ করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনে রাশিয়া আক্রমণ করার পরে যেভাবে নির্মূল করে দিচ্ছে, একইভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিদের নির্মূল করেছে জার্মানির হিটলার। পাকিস্তান আমলে একটা জাতিকে নির্মূল করার জন্য বাংলাদেশে যেমন নির্যাতন-নিপীড়ন-হত্যা চালানো হয়েছিল, আজকে ঠিক একইভাবে বাংলাদেশ থেকে বিরোধী দলকে নির্মূল করার জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।’
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের প্রশ্ন যে জায়গায়, সেটা হচ্ছে সরকার মুখে বলছে, গণতন্ত্রের কথা, নির্বাচনের কথা। আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা মুখে ফেনা তুলে ফেলছেন যে, সুষ্ঠু নির্বাচন, অত্যন্ত নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু যখনই বিরোধী দল কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আসছে, ঠিক তখনই তাদেরকে অত্যাচার-নির্যাতন করা হচ্ছে, মামলা দেওয়া হচ্ছে।’
ইশরাকের গ্রেফতারের বিষয়ে আলোচনায় তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে বাম জোট যে কর্মসূচি দিয়েছিল সেখানেও একইভাবে তারা মামলা দিয়েছে, গ্রেফতার করেছে, মারপিঠ করেছে। ইশরাক দ্রব্যমূল্যের প্রতিবাদে মতিঝিলে লিফলেট বিতরণ করছিলেন, তাকে বিনা উসকানিতে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাকে যখন আদালতে নিয়ে আসা হয় সেখানেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণ, টিয়ারগ্যাস সেল নিক্ষেপ করা হয়, নির্যাতন করা হয়।’
নতুন ইসি নাটক করেই যাচ্ছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নতুন নির্বাচন কমিশন নাটক করেই যাচ্ছে। সিভিল সোসাইটিকে ডাকছে, সাংবাদিকদের ডাকছে। তাদেরকে ডেকে খুব সুন্দর কথা বলছেন। নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুন্দর বাংলা বলেন। কথা বলার ভঙ্গিও সুন্দর। আগের ভদ্রলোক তো ছিলেন যে কথাই ভিন্নভাবে বলতেন। এখনকার জন চমৎকার কথা বলেন এবং মানুষকে বিমোহিত করার চেষ্টাও করেন।’
‘এই জিনিসগুলো সবচাইতে ভয়াবহ। এই নাটক করে তারা আবার আরেক নির্বাচন করার পায়তারা করছে। যে নির্বাচন তারা আগের মতোই জোর করে এবং বিভিন্ন কৌশলে..। এবার হয়তো আগের মতো নির্বাচন হবে না। কোন ধরনের নির্বাচন হবে? আগে তো আগের রাত্রে নির্বাচন হয়ে গেছে। এখন কি ৭ দিন আগে নির্বাচন হয়ে যাবে? ইট ইজ গোয়িং টু হেপেন।’— বলেন মির্জা ফখরুল।
গণমাধ্যম কর্মী আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিকরাও কম ভুক্তভোগী নন। ইতিমধ্যে আপনাদের অনেকেই নিহত হয়েছেন, মারা গেছেন। অনেককে জেলে যেতে হয়েছে সত্য কথা লেখার জন্যে। এখানে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করা হয়েছে। এখন গণমাধ্যম কর্মী আইন করতে যাচ্ছে। আমাদের তথ্য মন্ত্রী সাহেব বলছেন এটা রিভিউ করা হবে। রিভিউ করে কী করবেন সেটা তো আমরা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ক্ষেত্রে দেখেছি। যার ফলে এটা কোনো মতেই গণতন্ত্রের জন্য নিরাপদ দেশ নয়, এটা মানুষের জন্য নিরাপদ দেশ নয়। এই দেশ সম্পূর্ণভাবে একনায়কতন্ত্র, কর্তৃত্ববাদী, ফ্যাসিবাদী সরকারের হাতে পড়েছে। এই সরকারকে সরাতে না পারলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকবে না।’
খালেদা জিয়ার মামলা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে মামলা, এটা কোনো মামলাই না, এটার মধ্যে কিছুই নেই। সমস্ত মিথ্যা কথা দিয়ে সাজানো মামলা। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ।’
পুলিশ কর্মকর্তারা রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যেরকম আচরণ করছে তা দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই দেশ কোথায় চলে যাচ্ছে? যারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারি তারা যে ভাষায় কথা বলেন তাতে মনে হয় না আমরা কোনো সভ্য সমাজে বাস করছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের অধিকার আছে দেশের বিষয়ে কথা বলার, সমালোচনা করার এবং বিভিন্ন বিষয় জনগণের সামনে তুলে ধরার। সে ক্ষেত্রে তাদেরকে উল্লেখ করে তাদের সম্পর্কে কথা বলা, বিবৃতি প্রদান করা—এটা কখন হয়? যখন তাদের ওপর সরকার নির্ভর করে।’
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপির আহবায়ক আবদুস সালাম, যুগ্ম আহবায়ক নবী উল্লাহ নবী, ইউনুস মৃধা, মোশাররফ হোসেন খোকন, আবদুস সাত্তার, এসকে সেকান্দার, হারুনুর রশীদ, মুনির হোসেন চেয়ারম্যান, আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান ফয়েজ উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এজেড/এএম