রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের আশা, ঈদ শেষে ভোট-ভাতের ‘আন্দোলন’
৮ এপ্রিল ২০২২ ২২:৫৬
ঢাকা: ঈদের পরে রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের স্বপ্ন দেখছে বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক দলগুলো। ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে দৃশ্যমান কর্মসূচি দিতে চায় বিএনপিহ বামপন্থি ও ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলো। ঈদের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চিন্তাভাবনাও চলছে।
নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের দাবিতে রাজপথে জোটবদ্ধভাবে আন্দোলনে নামার জন্য বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বামপন্থি ও ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলো চেষ্টা চালিয়ে আসছে। বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তারেক রহমানের দেশে ফেরা ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে বাদ দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এ সব নিয়ে মতানৈক্য কারণে জোটগতভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না দলগুলো।
অপরদিকে বামপন্থিদলগুলো অন্যান্য স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি দলগুলো এবং সামজিক সংগঠনদের নিয়ে পৃথক তৃতীয় শক্তির জোট করার চেষ্টা করেও আসলে তারা এগুতে পারছে না। দীর্ঘদিন থেকে বামপন্থি দলগুলো রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন দুই জোটের বাইরে তৃতীয় শক্তির জোট গঠন নিয়ে আলোচনা করে আসছে। গতবছর ডিসেম্বরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই জোট গঠনের পালে নতুন করে হাওয়া লাগানোর জন্য তৎপর হয়ে ওঠে বামপন্থিদলগুলো। তাদের এই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ১৪ দলীয় জোট আর ২০ দলীয় জোটের বাইরে ছোট রাজনৈতিক দলগুলো সিপিবি, বাসদ, জাসদ রব সাম্যবাদী দলের একাংশ গণসংহতি নাগরিক ঐক্য, গণফেরাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ অন্যান্য দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া এগিয়েছে বহুদূর।
সূত্রগুলো বলেছে, এ সব দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রাথমিক আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ায় তৃতীয় শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। ঈদের পর তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জোটের নাম কর্মসূচির মাধ্যমে ঘোষণা করতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। এ সর্ম্পকে বামপন্থি ও অন্য দলসমূহের একাধিক নেতা জানিয়েছে, সংবাদ সম্মেলন কিংবা জাতীয় ইস্যু নিয়ে জোটের নাম ঘোষণা হতে পারে। তবে জোটের নাম কী হবে তা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলেছে, ঈদের পরে তাদের টার্গেট এক প্লাটফর্মে যাওয়া। কোনো কারণে তাদের এই টার্গেড সফল না হলে যুগপথ আন্দোলন শুরু করবে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, তৃতীয় শক্তি গঠনে বেশ কয়েকটি ছোট রাজনৈতিক দল ঐক্য নিয়ে কথা নিজেদের মধ্যে কথা বললেও মতের ঐক্য না হওয়ায় তারা এক প্লাটফর্মে যেতে পারছে না। নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধ হতে চাচ্ছে।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের বাইরে থাকা এসব দলের নেতারা প্রায়শই ২০ দল বা সমমনা দলের রাজনৈতিক সভা সমাবেশে অংশ নেচ্ছেন। এমনকি বিএনপি ঘরানার বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচিতেও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের নিয়মিত দেখা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে এবার বিভিন্ন দলের ইফতার পার্টিতে এসব দলের নেতারা অংশ নেবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমরা একটি জাতীয় ঐক্য করার চেষ্টা করছি। সে সব আলোচনায় অনেকেই যুগপথ আন্দোলন করার কথা বলেছেন। ঈদের পরে এ বিষয় একটি চূড়ান্ত রূপ নেবে।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘রোজার মধ্যে আমাদের আরও আলোচনা হবে। বিএনপির বাইরেও অনেক দেশের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আশা করি, ঈদের পর আমরা ঐক্যভাবে দৃশ্যমান কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামব।’
বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত ও নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের ইস্যুতে আমাদের আলোচনা প্রাথমিক ধাপ শেষ হয়েছে। আশা করি ঈদের পর সব দলের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছে যাব। আমরা আন্দোলনে রাজপথে নামব।’
কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আমরা কোনো ড্রয়িং রুমে বসে তৃতীয় শক্তি গঠন করব না। আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে বিকল্প শক্তি গঠন করা হবে। এরইমধ্যে আমরা জনগণের পক্ষেভাত ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হরতাল কর্মসূচি পালন করেছি। এই হরতাল কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আগামী ১৫, ১৬ ও ১৭ তারিখ জনগনে ভাত ও ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য সারাদেশে গণঅবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করব।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে