ষড়যন্ত্র পরাস্ত করার ওয়াদা নওফেলের
৯ এপ্রিল ২০২২ ০০:০১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, শেখ হাসিনার হাত ধরে ১৩ বছর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায়। এর আগে, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল তাদের সাম্প্রদায়িক, শ্রেষ্ঠত্ববাদী মানসিকতা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমনভাবে ঢুকে গেছে যে মানবিক আচরণ, মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ববোধ, মমমত্ববোধ, ভালোবাসা এখন শুধুমাত্র পত্রিকার পাতায় সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে যতটুকু সম্ভব সকল সম্প্রদায়ের জন্য সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও সমঅধিকারের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ষড়যন্ত্র চলছে, তাদের লক্ষ্য পাকিস্তানের মতো কট্টর সমাজব্যবস্থা তৈরি করা। এদের মোকাবিলা করতে হবে। চাপের মুখে মাথা নত করা যাবে না। রাষ্ট্রের সব শক্তি প্রয়োগ করে ষড়যন্ত্র পরাস্ত করা হবে, এটা আমাদের ওয়াদা।
শুক্রবার (৮ এপ্রিল) রাত ১০টায় নগরীর জে এম সেন হলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে বসন্ত উৎসব এবং মিলনমেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশে অনেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কথা বললেও সত্যিকারে সে আদর্শ ধারণ করে কী না আবার অনেকে প্রগতিশীলতার কথা মুখে বললেও বাস্তব জীবনে সেটার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে কী না সেটা চিন্তা করার সময় এসে গেছে।
দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান দেশের সকল নাগরিকের জন্য সমান অধিকার, ধর্মচর্চার অধিকার এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে লিপ্ত হতে হবে, বলেন নওফেল।
তিনি আরও বলেন, মনে রাখতে হবে শ্রেষ্ঠত্বের যে শিক্ষা; নিজেকে সর্বোচ্চ-সর্বত্তোম ভাবা, এটা কুশিক্ষা। এটা দীর্ঘ সময় ধরে চলে এসেছে এবং এর প্রতিফলন আজ সমাজে দেখতে পাচ্ছি। মানুষে মানুষে যে বিভাজন। এটা সমাজে শঙ্কা ও ভীতি তৈরি করছে। শুধুমাত্র শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এ বিভাজনের পরিবর্তন সম্ভব হবে না। সামাজিক আন্দোলনে নামতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, সকল প্রগতিশীল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামজিক আন্দোলনে নামতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। পিছপা হলে বাংলাদেশ পাকিস্তান হবে, এরপর আফগানিস্তানে রূপান্তর হবে। সকল নাগরিকের সমান অধিকার রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া যাবে না।
মন্ত্রী বলেন, দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় একটি বিদ্যালয়ে এক জন শিক্ষক পাঠদানরত অবস্থায় কী আলোচনা হয়েছে সেটাকে পুঁজি করে পরিকল্পিতভাবে একটি পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। কেউ বলেছে, কেউ শুনেছে এমন গুজবের ভিত্তিতে একটি মামলাও হয়েছে। সেই মামলা আবার রেকর্ডও হয়েছে। শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং জামিন দেওয়া হলো না। এ ঘটনা এক জন নাগরিকের সুবিচার ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথে অন্তরায়।
তিনি আরও বলেন, অদূর ভবিষ্যতে এ ধরনের গুজব তুলে কেউ যদি কোনো অভিযোগ করে তাহলে পুলিশ প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে বলবো এই প্র্যাকটিস সমাজে অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে। আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে। কিন্তু, পাশাপাশি এদের বিরুদ্ধে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রয়োজন। ধর্মে ধর্মে বিভাজনের নোংরা রাজনীতি, ওয়াজ মাহফিলে ধর্মের মনগড়া বক্তব্য দিয়ে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি, সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
ওয়াজ মাহফিলের প্রতি ইঙ্গিত করে নওফেল বলেন, রাষ্ট্রের সংবিধানের বাইরে গিয়ে মনগড়া বক্তব্য দেওয়া, গুজব ছড়ানো, রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করা স্বাধীনতার সুবর্নজয়ন্তীতে এসে এ ধরনের পরিস্থিতি দেখতে হচ্ছে। এটা পরিতাপের বিষয়।
উপস্থিত সভ্যদের আশ্বস্ত করে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, এ বাংলাদেশ সবার, দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটির ওপর সবার অধিকার সমান। এ দেশের এক জন নাগরিকের ইবাদত করার অধিকার, পূজা করার অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। কিন্তু, একটি সম্প্রদায়ের উৎসব থেকে আরেকটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ করলে, সেটা আসলে অনুভূতিতে আঘাত নয়। সেটা পরিকল্পিত আক্রমণের নির্লজ্জ প্রচেষ্টা।
সারাবাংলা/আরডি/একেএম