চৈত্রের বৃষ্টিতে আমচাষির স্বস্তি, বাড়বে উৎপাদন
৯ এপ্রিল ২০২২ ০৮:১৫
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: আমের গুটি আসার পর কয়েকদিন ধরেই তীব্র রোদ-খরায় চিন্তিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষিরা। অপেক্ষায় ছিলেন একটি বৃষ্টির। কারণ গুটি থাকা অবস্থায় একটি বৃষ্টিই পাল্টে দিতে পারে এই মৌসুমের আম উৎপাদন। আমচাষিদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তাদের স্বস্তি দিয়েছে প্রকৃতি। চৈত্রের এক বৃষ্টিতেই এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষিরা।
গত সোমবার (০৪ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে কয়েক মিনিট ও রোববার (৩ এপ্রিল) রাত ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে থেমে থেমে প্রায় ঘণ্টাখানেক বৃষ্টি হয়েছে আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে। যদিও রোববার রাতে সদর উপজেলার কয়েক জায়গায় ঝড়ো হাওয়ার কারণে আমের গুটি ঝরে যায়। তবুও চৈত্রের এই বৃষ্টিকে সামগ্রিকভাবে আমচাষিদের জন্য সহায়ক বলে মনে করেন আম গবেষক ও কৃষি বিভাগ।
সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গার আমচাষী রাসেল আহমেদ বলেন, ‘যেসব গাছে মুকুল এসেছিল এখন তার প্রায় সব গাছেই গুটির আকার ধারণ করেছে। এসময়ে আমের গুটিতে পোকার আক্রমণ হয়। এদিকে গত কয়েকদিন ধরে তীব্র রোদ ও খরায় গুটির গোড়া শুকিয়ে গেছিল। এসময়ে একটি বৃষ্টির খুবই প্রয়োজন হয়। তবে কয়েকদিন থেকে কোনো বৃষ্টির দেখা নেই। কৃত্রিমভাবে সেচ দিলেও তা খুব উপযোগী নয়। বৃষ্টির পানি পাওয়ার খুবই উপকার হয়েছে।’
গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নের বেলাল বাজার এলাকার আমচাষী আব্দুর রাকিব জানান, আমের গুটি থাকা অবস্থায় এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হওয়া বৃষ্টিতে গাছ ধুয়ে গেছে। মরা সব পাতা পড়ে গেছে। দূর হয়েছে অনেক রোগবালাই। সেই সঙ্গে নিচে সেচও হয়ে গেছে। এই বৃষ্টি আমের ফলন বৃদ্ধি ও নিরাপদ আম উৎপাদনে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিডেটের সাধারণ সম্পাদক ও আম রফতানিকারক ইসমাঈল খান শামিম বলেন, ‘এই সময়ে আমের গুটিতে পোকার আক্রমণ হয়। এছাড়াও গুটির গোড়া শুকিয়ে গিয়ে ঝরে পড়া শুরু হয়। এই বৃষ্টির ফলে পোকার আক্রমণ দূর হবে এবং গুটি ঝড়ে পড়া রোধ হবে। বৃষ্টি পেয়ে এখন গুটির গোড়া শক্ত হবে। এছাড়াও বৃষ্টি পেয়ে এখন দ্রুত বাড়বে আমের আকার।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. ইউসুফ জানান, এই সময়ে একটি বৃষ্টি প্রত্যাশিত ছিল আমচাষীদের জন্য। বৃষ্টির ফলে আমের গুটির ঝরে পড়া অনেকাংশেই কমে যাবে যাবে। এমনকি ফলনের দ্রুতবর্ধন ঘটবে। এই সময়ে আমের গুটিতে হপার পোকা আক্রমণ হয় ও অ্যানথ্রাকনোজ নামক ছত্রাকজনিত রোগ দেখা যায়। তাই অপেক্ষাকৃত বড় গুটির জন্য ক্লোরোপাইরিফস বা সাইপারমেথ্রিন ও ছোট আমের গুটির জন্য ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক এবং কার্বন ডাইজিন গ্রপের ছত্রাকনাশক ব্যবহার করার পরামর্শ দেন এই আম গবেষক।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলাজুড়ে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টির পানি রেকর্ড করা হয়েছে। আমের পাশাপাশি এই বৃষ্টির পানি ধানের জন্যেও উপকারী। বৃষ্টির পাশাপাশি হওয়া ঝড়ো হওয়াতে কৃষিপণ্যের তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’
উল্লেখ্য, এবছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। প্রায় ৫৫-৬০ লাখ গাছে চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগ জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৩ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। গতবছর জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আড়াই লাখ মেট্রিক টন এবং তার আগের বছর ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছে।
সারাবাংলা/এমও