Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জলবায়ু পরিবর্তন যথাযথ গুরুত্ব পাচ্ছে না

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৯ এপ্রিল ২০২২ ২১:০৮

ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের কার্যকলাপ থেকে সৃষ্ট। এটি এখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলই পরিবর্তন করে দিচ্ছে। এর হুমকি এতই বিশাল যে মানব সভ্যতার এটিকে বিশ্বযুদ্ধের মতো গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার কথা। কিন্তু, দুঃখের বিষয় মানুষ এটিকে সে স্তরের গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে মত প্রকাশ করেছেন ইউনেস্কো সেন্টার ফর ওয়াটার ল’র পোস্ট ডক্টরাল ফেলো ড. নন্দন মুখার্জি।

ইনোভিশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশ মিরাকল সিজন-২-এর তৃতীয় পর্বে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ ও সমাধান বিষয়ক এক ওয়েবিনারে এ কথা বলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারের বিষয় ছিল ‘ ঝুঁকি মোকাবিলা: বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ ও সমাধান’। এতে মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ইনোভিশন কনসাল্টিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবাইয়াত সারওয়ার।

ওয়েবিনারে বক্তারা বলেন, দেশের ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব দেখা যায়। তবে কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বেশ সাফল্য অর্জন করেছে বিশেষ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসনে। এছাড়াও আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি নিরসনেও বেশ অগ্রগতি অর্জন করেছি।

ওয়েবিনারে ড. নন্দন মুখার্জি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার হেক্টর জমি কৃষিকাজের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অন্যান্য অঞ্চলও বন্যা, লবণাক্ততা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিয়ে প্রভাবিত হয়। বন্যা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে মায়েরা তাদের ছেলে-মেয়েদের হারাচ্ছে এবং এখনও আগের মতোই কার্বন নিঃসরণ চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা নির্গমনের সঙ্গে অর্থের লেনদেন করতে পারি না কারণ এটি বেঁচে থাকার বিষয় এবং মানব সভ্যতার নির্গমন, উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং ব্যবহার পদ্ধতিতে দ্রুত পরিবর্তন প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্ব যে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা কমাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত ধনী দেশগুলিকে প্রতি বছর ১৫ শতাংশ করে নির্গমন কমাতে হবে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এবং মিডিয়াকে নির্গমন হ্রাসের দিকে এই রূপান্তরের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে কারণ এটি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি থেকে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক বিলুপ্তির উদ্বেগ।

ওয়েবিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট জারিন তাসনিম ঐশী।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হুমকির মুখে থাকা অন্যতম দেশ বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে সাইক্লোন, লবণাক্ততা, ক্ষরা, অতিবৃষ্টি ও বজ্রপাত, উপকূলীয় ক্ষয় ও ধ্বস, বন্যা ও আকস্মিক বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইতোমধ্যেই বেড়ে গেছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন (এনএপিএ) এবং বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল এবং কর্ম পরিকল্পনা নিয়েছে। এটি জলবায়ু পরিবর্তন কাটিয়ে ওঠার কার্যক্রমের জন্য একটি প্রধান রূপরেখা। ক্লাইমেট চেঞ্জ ফিসকাল ফ্রেমওয়ার্ক (২০১৪), ক্লাইমেট চেঞ্জ সেল (২০০৪) ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে দেশে একটি জাতীয় অ্যাডাপশন প্ল্যান (এনএপি) তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের নেওয়া প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, এরই মধ্যে হাওরের জলাভূমি এলাকায় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, ঘুর্ণিঝড় প্রবণ এলাকার জন্য বহুমুখী ঘুর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র (এমপিসিএস) উন্নত করা হয়েছে। উপকূলীয় সবুজ অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য সরকারের নেওয়া দীর্ঘমেয়াদী কৌশলের অংশ হিসেবে ম্যানগ্রোভ এবং নন-ম্যানগ্রোভ বনায়ন হচ্ছে। এছাড়াও মাতুয়াইলে ডাম্পসাইটে কম্পোস্টিং প্রকল্প, সোলার হিটিং সিস্টেম স্থাপন, সৌর সেচ, নির্গমন হ্রাস এবং বনায়নের মত প্রশমণ কার্যক্রম চলছে।

প্রথম প্যানেল বক্তা ব্র্যাক-কেএফডাব্লিউ ক্লাইমেট ফান্ড সেক্রেটারিয়েট ড. মোঃ গোলাম রাব্বানী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি প্রশমনের জন্য গ্রিনহাউজ গ্যাস হ্রাসের বিষয়ে সুরাহা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তন, অভিযোজন ও ক্ষতি প্রশমণের জন্য বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হচ্ছে। সবুজ অর্থায়ন তৈরি করা হচ্ছে এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার জন্য বাজেট বরাদ্দ করা হচ্ছে। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং এবং সোলার হোম সিস্টেমের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

দ্বিতীয় প্যানেল বক্তা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালযয়ের গণিত ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মৌসুমী জহুর বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারীরা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশি ঝুঁকিতে পড়ছেন। এছাড়াও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নারীরা ঠিকমতো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। পরিবারের নারী সদস্যরা প্রায়ই পেছনে পড়ে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, বিপর্যয় এবং অভিবাসন সম্পর্কে নারী ও পুরুষ উভয়ের কাছ থেকেই মতামত নিয়ে বাস্তবিক সমস্যাগুলো খুঁজে বের করতে হবে। আবার জেন্ডার অ্যাকশন প্ল্যানেরও সংশোধন প্রয়োজন।

তৃতীয় প্যানেল বক্তা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও অর্থনীতি গবেষণা প্লাটফর্মের পরিচালক ড. হেলাল আহমেদ বলেন, কার্বন ডাই অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে তাপ আটকে রাখে এবং জলবায়ু ঝুঁকির কারণ হয়। আর কার্বন নির্গমন বেশিরভাগই উন্নত দেশগুলোর কারণে হয়। বড় নির্গমনকারীদের এটি কাটিয়ে উঠতে আরও কার্যকর নির্গমন হ্রাস পদক্ষেপ নিতে হবে।

এদিকে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে এবং সমুদ্রের বরফ ক্রমাগত গলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যান্য দৃশ্যমান লক্ষণও রয়েছে যেমন: গড় তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণে পরিবর্তন। কিন্তু, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে কেন্দ্র করে আমাদের অনেক অনিশ্চয়তাও রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ভূমির উৎপাদনশীলতাকে প্রভাবিত করে। তাই কৃষিও এর দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই ফসলের জাত পরিবর্তন করা এবং জল সংগ্রহের প্রযুক্তি সম্প্রসারণ এবং মাটির আর্দ্রতা সংরক্ষণের উপর জোর দেওয়া দরকার।

সারাবাংলা/আরএফ/একেএম


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ই-ক্যাবে প্রশাসক নিয়োগ
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:১৪

সম্পর্কিত খবর