Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রীই শেষ করতে পারেননি মেয়াদ


১০ এপ্রিল ২০২২ ১১:৪৮

ইমরান খান, ছবি: আলজাজিরা

পাকিস্তানের ৭৫ বছর বয়সে কোনো প্রধানমন্ত্রী তাদের দায়িত্বের মেয়াদ শেষ করতে পারেনি। সেই তালিকায় এবার যুক্ত হলো ইমরান খানের নাম। গতকাল শনিবার (৯ এপ্রিল) মধ্যরাতে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে গেছেন তিনি। খবর আলজাজিরা।

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এখন পর্যন্ত ২২ জন ব্যক্তি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে মাত্র একজন একই বছরে দুই বার প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য শপথ নেন।

দুর্নীতির অভিযোগ, সরাসরি সামরিক অভ্যুত্থান এবং শাসক গোষ্ঠীর অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে জোরপূর্বক পদত্যাগসহ বিভিন্ন কারণে ১৮ বার দেশটির প্রধানমন্ত্রীদের অপসারণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও রয়েছে।

আরও পড়ুন: অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারালেন ইমরান খান

অবশিষ্ট প্রধানমন্ত্রীরা নতুন নির্বাচন তদারকি বা বরখাস্ত প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ দেখতে তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে সীমিত সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এর মধ্যে ১৯৯৩ সালটি সবচেয়ে বেশি সংকটময় ছিল। এই বছরে প্রধানমন্ত্রী পদে পাঁচবার পরিবর্তন হয়।

দেশটিতে সবচেয়ে কম সময়ের প্রধানমন্ত্রীর কার্যকাল ছিল মাত্র দুই মাস। আর দীর্ঘ সময় হলো চার বছর দুই মাস। এর মধ্যে তিনবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন মিয়া মুহাম্মদ নওয়াজ শরীফ। ১৯৯০, ১৯৯৭ ও ২০১৩ সালে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকারের পদত্যাগ

নিচে ১৯৪৭ সাল থেকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর নাম তুলে ধরা হলো, যারা তাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদচ্যুত হন:

লিয়াকত আলী খান: পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। ১৯৪৭ সালের আগস্টে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালের ১৬ অক্টোবর একটি রাজনৈতিক সমাবেশে তাকে হত্যা করা হয়। তার কার্যকাল ছিল চার বছর দুই মাস।

খাজা নাজিমুদ্দিন: ১৯৫১ সালের ১৭ অক্টোবর এ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সঠিকভাবে ধর্মীয় দাঙ্গা দমনে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে ১৯৫৩ সালের ১৭ এপ্রিল তাকে বরখাস্ত করেন দেশটির তৎকালীন গভর্নর জেনারেল (ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত একটি শক্তিশালী পদ)। তিনি এক বছর ছয় মাস দায়িত্ব পালন করেন।

মুহাম্মদ আলী বগুড়া: ১৯৫৩ সালের ১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। পরে ১৯৫৫ সালের ১১ আগস্ট পদত্যাগ করেন। দুই বছর তিন মাস দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

আরও পড়ুন: সেনাপ্রধানকে বরখাস্ত করেননি ইমরান খান

চৌধুরী মোহাম্মদ আলী: ১৯৫৫ সালের আগস্টে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। শাসক দলের অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্যের কারণে ১৯৫৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তাকে অপসারণ করা হয়। এক বছর এক মাস ওই পদে ছিলেন তিনি।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী: ১৯৫৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর দেশটির প্রধামন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে ক্ষমতাসীন অন্যান্যদের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে ১৯৫৭ সালের ১৮ অক্টোবর পদত্যাগ করেন তিনি। এক বছর এক মাস দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

ইব্রাহিম ইসমাইল চন্দ্রিগার: ১৯৫৭ সালের অক্টোবরে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে ১৯৫৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর সংসদের অনাস্থা ভোটের সম্মুখীন হয়ে পদত্যাগ করেন। তার মেয়াদকাল দুই মাসের কম।

মালিক ফিরোজ খান নুন: ১৯৫৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। পরে ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর পাকিস্তানে সামরিক আইন জারির কারণে বরখাস্ত হন তিনি। তার মেয়াদকাল ১০ মাসেরও কম।

নুরুল আমিন: ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। ওই বছর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরপরই ২০ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন তিনি। দুই সপ্তাহের কম সময় দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

জুলফিকার আলী ভুট্টো: ১৯৭৩ সালের ১৪ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে ১৯৭৭ সালের ৫ জুলাই একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। অবশেষে তাকে কারাগারে নেওয়া হয় ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তিন বছর ১১ মাস দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।

মুহাম্মদ খান জুনেজো: ১৯৮৫ সালের মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। পরে ১৯৮৮ সালের ২৯ মে দেশটির তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও সামরিক প্রধান তাকে বরখাস্ত করেন। তিন বছর দুই মাস দায়িত্ব পালন করেন।

বেনজির ভুট্টো: নিহত প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর কন্যা এবং মুসলিম প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। ১৯৮৮ সালের ২ ডিসেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। দুর্নীতির অভিযোগে সামরিক শাসকের ঘনিষ্ঠ সাহায্যকারী রাষ্ট্রপতি তার সরকারকে ১৯৯০ সালের ৬ আগস্ট বরখাস্ত করে। এক বছর আট মাস ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। দেশটিতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ব্যবহার করে একই ধরনের অভিযোগে বরখাস্ত করা তিনটি সরকারের মধ্যে এটিই ছিল প্রথম ঘটনা।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানে রাজনৈতিক সংকট: মধ্যরাতে বসছে আদালত

মিয়া মুহম্মদ নওয়াজ শরীফ: ১৯৯০ সালের ৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যভার গ্রহণ করেন তিনি। পরে ১৯৯৩ সালের ১৮ এপ্রিল ভুট্টোর অনুরূপ অভিযোগে তার সরকারকেও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বরখাস্ত করা হয়েছিল। তিনি কয়েক সপ্তাহ পরে আদালতের মাধ্যমে ওই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে সক্ষম হন এবং নিজ দায়িত্ব ফিরে পান। কিন্তু দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে পদত্যাগ করেন। মোট দুই বছর সাত মাস দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

বেনজির ভুট্টো: ১৯৯৩ সালের ১৯ অক্টোবর তার দ্বিতীয় দফায় দেশটির ক্ষমতায় আসেন তিনি। পরে ১৯৯৬ সালের ৫ নভেম্বর সরকার পরিচালনায় ব্যর্থতার অভিযোগে আবারও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বরখাস্ত হন তিনি। মাত্র তিন বছরের বেশি দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।

নওয়াজ শরীফ: ১৯৯৭ সালের ১৭ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসেন তিনি। ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর পাকিস্তানের ইতিহাসে তৃতীয় দফায় সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে উৎখাত হন তিনি। এবার দুই বছর আট মাস দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

মীর জাফরুল্লাহ খান জামালি: ২০০২ সালের নভেম্বরে সামরিক শাসনের সময় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি। পরে সেনাবাহিনীর সঙ্গে মতবিরোধের কারণে ২০০৪ সালের ২৬ জুন পদত্যাগ করেন তিনি। তার মেয়াদকাল ছিল এক বছর সাত মাস।

ইউসুফ রাজা গিলানি: ২০০৮ সালের ২৫ মার্চ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। পরে আদালত অবমাননার অভিযোগে ২২১২ সালে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট তাকে অযোগ্য ঘোষণা করে। চার বছর এক মাস দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

নওয়াজ শরীফ: ২০১৩ সালের ৫ জুন তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি। পরে সম্পদ গোপন করার অভিযোগে ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই দেশটির সুপ্রিম কোর্ট তাকে বরখাস্ত করেন। এ দফায় চার বছর দুই মাস দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

ইমরান খান: ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। পরে বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে চলতি বছরের ৯ এপ্রিল ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। তিন বছর সাত মাস দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

ইমরান খান পাকিস্তান


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর