শরণখোলায় পতিত জমিতে তরমুজ চাষে ৩ বন্ধুর সফলতা
১০ এপ্রিল ২০২২ ১২:১২
বাগেরহাট: উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের শরণখোলায় তরমুজ চাষ করে নজর কেড়ে নিয়েছেন তিন বন্ধু। এক ফসলি ও পতিত জমিতে তরমুজ চাষে তাদের সফলতা দেখে আগামীতে তিন ফসলি জমিতেও তরমুজ চাষাবাদের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
উপজেলার জিলবুনিয়া গ্রামের তিন বন্ধু লোকমান, মামুন ও মানিকের পেশা ছিল মৎস্য শিকার। হঠাৎই তারা পুরনো পেশা ছেড়ে শুরু করেন তরমুজ চাষ। বলেশ্বর নদীর বেড়িবাঁধের পার্শ্ববর্তী পতিত তিন বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ওই চাষ শুরু করেন তারা। সফলতা মিলেছে প্রথম বছরেই।
সরেজমিন শরণখোলা উপজেলার একমাত্র তরমুজ ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, লতাপাতার ফাঁকে ফাঁকে লুকিয়ে রয়েছে হাজারো তরমুজ। দেখে বোঝার উপায় নেই অনভিজ্ঞ চাষিরা চাষ করেছেন এই তরমুজ।
তারা জানান, অভিজ্ঞতা ছাড়াই চার মাস আগে তিন বন্ধু মিলে ৬০ হাজার টাকা করে বিনিয়োগে তরমুজ চাষ শুরু করেন। ২৪ হাজার টাকায় তিন বিঘা লিজ নেন। ৩৫ হাজার টাকার বীজ, সার ও বালাই নাশক বাবদ ৮০ হাজার টাকা, নেটের বেড়া ও পানি সেচ মিলে মোট ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। তারা আশা করছেন, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত না হানলে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন।
মাছ ধরার পেশা ছেড়ে তরমুজ চাষে ঝুঁকলেন কেন?- জানতে চাইলে তারা বলেন, নদীতে এখন আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। তাই পরামর্শ করে তরমুজ চাষ শুরু করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। প্রথম ধাপে ৪০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। দ্বিতীয় ধাপে কেটে জমিয়ে রাখা তরমুজের মূল্য এক লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা হবে। এছাড়া আরও দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার তরমুজ মাঠে রয়েছে।
তারা বলেন, এখানে তরমুজ আকারে যেমন বড় হয়, তেমনই খেতেও অনেক সুস্বাদু। পাইকাররা এসে ক্ষেত থকেই প্রতি মণ ১২ হাজার টাকা দরে কিনে নিচ্ছেন। এলাকার জমিতে একবার আমন ধান ফলানোর পরে সারা বছর পতিত অবস্থায় পড়ে থাকে। তাই পতিত এ জমি ব্যবহার করে শরণখোলায় পরিকল্পিত তরমুজ চাষের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলেও মনে করছেন তারা।
তাদের এই তরমুজ ক্ষেত দেখতে আসা মীর আছাদুল হক বলেন, প্রথমবারের মত আমাদের এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ হয়েছে। সামনের দিনে আমরাও পতিত জমিতে তরমুজের চাষ করব।
শরণখোলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আছাদুজ্জামান মিলন বলেন, তরমুজ চাষি তিনজনই খুব পরিশ্রমী। তাদের তরমুজ ক্ষেত দেখতে মানুষ ভিড় করছে। কেউ কেউ ক্ষেত থেকে টাটকা তরমুজ কিনছে। সব মিলিয়ে যেন একটা উৎসবের আমেজ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ওয়াসিম উদ্দিন বলেন, বলেশ্বর ও ভোলা নদীর তীরবর্তী শরণখোলা উপজেলায় তরমুজ চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অঞ্চলের পানিতে সহনশীল মাত্রার লবণাক্ততা আছে; যা তরমুজ চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। এছাড়া কম সময়ে, কম পরিশ্রমে অধিক লাভবান হওয়ার জন্য তরমুজ একটি ভালো অর্থকরি ফসল। তরমুজ চাষে আগ্রহী চাষিদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সবধরনের সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।
সারাবাংলা/এএম