বর্ষবরণের প্রস্তুতি চলছে জোরেসোরে
১১ এপ্রিল ২০২২ ১১:৩৬
ঢাকা: দিন দুই পেরোলেই বাঙালি মেতে উঠবে সবচেয়ে বড় সার্বজনীন উৎসব বাংলা নববর্ষের আনন্দে। এবার ১৪২৯ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নেবে বাঙালি জাতি। বরাবরের মতোই এই উৎসবের সবচে বড় আকর্ষণের নাম মঙ্গল শোভাযাত্রা।
ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়া এই শোভাযাত্রাকে ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিপর্ব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদজুড়ে ব্যস্তততম দিন পার করছেন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। শোভাযাত্রার স্ট্রাকচার গঠন, মুখোশ, বাঘ-হরিণ প্রভৃতি বানানোর কাজে উৎসবমুখর পুরো চারুকলা প্রাঙ্গণ।
এদিকে এবারের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে লেখা বিখ্যাত সংগীত পরিচালক রজনীকান্ত সেনের লেখা গানের ‘নির্মল কর, মঙ্গল কর মলিন মর্ম মুছায়ে’ অংশটুকু।
করোনাভাইরাসের প্রকোপে গত দুই বছর এই বিশাল আয়োজনে বিঘ্ন ঘটে। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস থেকে চিরতরে উত্তরণ ও সাম্প্রদায়িকতা থেকে মুক্তির বার্তা দেবে এবারের এই প্রতিপাদ্য।
অনুষদের রীতি অনুসারে এবারের আয়োজনে নেতৃত্বে আছে অনুষদটির ২২ ও ২৩তম ব্যাচ।
রোববার (১০ এপ্রিল) চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে দেখা গেছে, চারুকলা অনুষদে ঢুকতেই দেখা মেলে জয়নুল গ্যালারি সেজেছে এক রঙিন সাজ। অনুষদের শিক্ষার্থীরা নানান ধরনের মুখোশ, মাটির সরায়, চিত্রকর্ম তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এগুলোর সবটাই বিক্রির জন্য।
বকুলতলার স্কুলে মুখোশের কাজ করতে থাকা এক শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি, গত দুবছর যে উৎসবটি হয়নি, ওটা যেন আবার ফিরে আসে। আরও বড় করে যাতে এই উৎসব করা যায়, সে জন্য আমরা সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছি৷ ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সব বাঙালিই যাতে এই উৎসবে যুক্ত হয়—সেই প্রত্যাশা আমরা করি৷ আর বৈশাখের কাজ আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো একটা বিষয়। সারাবছর আমরা এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করে থাকি।’
জয়নুল গ্যালারির সামনে সারাবাংলার সঙ্গে কথা হয় আয়োজকদের একজন তরিকুল ইসলাম হিরকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এইগুলো বিক্রির জন্য। বিক্রির উদ্দেশ্য তো অর্থ। কারণ আমাদের শিক্ষক, বর্তমান-প্রাক্তন শিক্ষার্থী—সবার কাজের বিক্রিত অর্থ দিয়েই প্রতিবার আয়োজনটা হয়। একদিকে কোভিড, অন্যদিকে রমজান মাস—সব মিলিয়ে আমাদের সময় স্বল্পতা ছিলোই। গত দুবছর তো সেই অর্থে অনুষ্ঠান হয়নি। এবারও স্বল্প পরিসরেই হচ্ছে। চারটি স্ট্রাকচার আছে এবার।’
গ্যালারিতে আঁকিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়— ছোটো-বড় মুখোশ ৩০০ থেকে ১৭০০ টাকা, মাটির সরা ১ হাজার, বিভিন্ন ধরনের পাখি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, ছোটো বাঘ ২০০ টাকা, ঝুলন্ত পাখি ৫০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।
এদিকে অনুষদের লিচুতলায় বানানো হচ্ছে শোভাযাত্রার মূল স্ট্রাকচার। সেখানে বাঁশের তৈরি ঐতিহ্যবাহী টেপা পুতুল, বড় মাছ, কাঠের চাকাওয়ালা ঘোড়া তৈরির কাজও চলছে জোরেসোরে।
এ ছাড়া অনুষদের বকুলতলায় থাকা স্কুলের দেয়ালে রঙতুলির আঁচড় দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। স্কুলের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়—কাগজের ফুল ও পাখি তৈরির কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা। কেউ বা রঙের আঁচড়ে সাজিয়ে তুলছেন বিভিন্ন পণ্য।
এবারের প্রতিপাদ্য ‘নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’ প্রসঙ্গে ঢাকা চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, এটি একটি প্রার্থনা সঙ্গীতের একটি অংশ। এই গানটির এই লাইন থেকে ‘তুমি’ শব্দটা বাদ দিয়েছি। করোনা ভাইরাসের কারণে আমাদের স্বাভাবিক জীবনের যত নেতিবাচক পরিস্থিতি এসেছে সেখান থেকে যেন আমাদের মুক্তি মেলে। একইসঙ্গে আগামীর দিনগুলো যেন মঙ্গলময় হয়।
এদিকে, নববর্ষ উদযাপন কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী, এবারের পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরা যাবে না কোনো ধরনের মুখোশ। বহন করা যাবে না কোনো ধরণের ব্যাগ। তবে চারুকলা অনুষদ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজিলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এদিকে নববর্ষের দিনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সকল ধরনের অনুষ্ঠান বিকাল ৫ টার মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ জন্য বিকেল ৫টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা যাবে। ৫ টার পর বের হওয়া ছাড়া কোনোভাবেই আর প্রবেশ করা যাবে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধুমাত্র নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেইট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন।
এবারের শোভাযাত্রাটি টিএসসি থেকে বের হয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর সংলগ্ন স্মৃতি চিরন্তন হয়ে পুনরায় টিএসসিতে গিয়ে শেষ হবে। নির্মাণাধীন মেট্রোরেল প্রকল্পের কারণে চলাচলের পথ সরু থাকায় ও কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
সারাবাংলা/আরআইআর/একে