সমুদ্র অর্থনীতি ও তথ্যপ্রযুক্তিতে সহযোগিতা করতে চায় জাপান
১১ এপ্রিল ২০২২ ১৭:৩২
ঢাকা: সুবিশাল সমুদ্র অর্থনীতি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে জাপান। এছাড়া ফার্মাসিউটিক্যালস খাতেও সহযোগিতা বাড়াতে চায় দেশটি।
সোমবার (১১ এপ্রিল) জাপানের টোকিওতে হওয়া দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেনকে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াশি ইয়োশিমাসা সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে বলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় বলছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আবদুল মোমেন এক ঘণ্টা ধরে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াশি ইয়োশিমাসার সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করেন। এটিই দুজনের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের পটভূমিতে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে জাপানকে বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বি-পাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করেন ড. মোমেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশে আরও জাপানি বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানান। এর মধ্যে সমুদ্র অর্থনীতি, অটোমোবাইলস, আইসিটি, ফার্মাসিউটিক্যালস, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিক্স ইত্যাদি উদীয়মান খাতে সহযোগিতা বাড়াতে অনুরোধ জানানো হয়। পরে জাপান এসব খাতে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর কারণে সঙ্গে আরও জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আকৃষ্ট হবে।’ বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও তরুণদের বৃত্তি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের অনুরোধের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াশি বলেন, ‘জাপান মানবসম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশকে দেওয়া বৃত্তি ও দক্ষতা উন্নয়ন অব্যাহত রাখবে।’
দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু এবং বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশের উপর এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বৈশ্বিক ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন। এছাড়া, দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেন। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যা এবং ভাসান চরে স্বেচ্ছায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরসহ এ পর্যন্ত গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়টি তুলে ধরেছে।
রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশ জাপানকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য জাপানের আরও সম্পৃক্ততা চেয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াশি বলেন, ‘জাপান বাংলাদেশকে দেওয়া সহায়তা অব্যাহত রাখবে। কারণ সমস্যা সমাধানে প্রত্যাবাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
এছাড়াও দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেন। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াশি ইউক্রেন, উত্তর কোরিয়া এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের পরিস্থিতি তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশের সহযোগিতা কামনা করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় দেশ এবং যুদ্ধের বিরুদ্ধে। ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া বা লিবিয়া যেখানেই যুদ্ধ হয়, সেখানে জানমালের ক্ষতি হয়, যা আমরা ইউক্রেনে প্রত্যক্ষ করছি। বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে এবং ইউক্রেনে মানবিক সহায়তা দেওয়ার পদক্ষেপকে সমর্থন করেছে।’
দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ফোরামে ভবিষ্যৎ প্রার্থিতা নিয়েও আলোচনা করেন এবং একে অপরের প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন মন্ত্রী হায়াশিকে পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান যা তিনি বিবেচনা করতে সম্মত হন।
উল্লেখ্য, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন কয়েক ঘণ্টার জন্য টোকিওতে অবস্থান করছেন। সোমবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে পালাউয়ের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে তার। সেখানে ১১ থেকে ১৫ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় মহাসাগর সম্মেলনে অংশ নেবে বাংলাদেশ।
সারাবাংলা/টিএস/পিটিএম