২৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে বিদ্যুৎ বিতরণে ‘স্মার্ট’ হচ্ছে নেসকো
১২ এপ্রিল ২০২২ ১২:০৬
ঢাকা: বিদ্যুতের বিতরণ ব্যবস্থায় স্মার্ট হতে যাচ্ছে নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেড। এজন্য নেসকো এলাকায় স্মার্ট ডিসট্রিবিউশন সিস্টেম বাস্তবায়ন শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলার ৩৯টি উপজেলা এবং রাজশাহী ও রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় বাস্তবায়ন করা হবে।
এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪১ কোটি ৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৮০ কোটি ৭৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৬০ কোটি ৩২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নেসকো অঞ্চলে নির্ভরযোগ্য ও স্থিতিশীল বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং নেটওয়ার্কের অপারেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কম হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেড।’
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, নেসকোর বিদ্যমান বিতরণ ব্যবস্থায় সাব-স্টেশন ও ফিডারগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণের সুযোগ না থাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং সিস্টেম লস নির্ধারতি পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া গ্রাহক পর্যায়ে তদারকি এবং স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণের সুযোগ না থাকায় রাজস্ব আদায়ও বিলম্বিত হচ্ছে। বিভিন্ন উপকেন্দ্রে ৩৩ কেভি দীর্ঘ লাইন ও লোডিং ভেরিয়েশনের কারণে সার্বক্ষণিকভাবে ভোল্টেজ এবং ফ্রিকোয়েন্সি নিশ্চিত করাও যায় না। প্রকল্পটির মাধ্যমে বিতরণ ব্যবস্থা অটোমেশন করে সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও কন্ট্রোলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের হার ও সময়কাল কমিয়ে আনা, মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা, সিস্টেম লস হ্রাস এবং প্রকৃত রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, সব ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্রে সাবস্টেশন অটোমেশন সিস্টেম চাল করা, স্ক্যাডা সিস্টেম মাস্টার স্টেশন স্থাপন করা, স্ক্যাডা সিস্টেম মাস্টার স্টেশন এবং ৩৩/১১ কেভি সাবস্টেশনের মধ্য সংযোগ স্থাপন করা, স্ক্যাডা কন্ট্রোল সেন্টার হতে ৮৮টি সাবস্টেশন মনিটরিং ও কন্ট্রোল করা এবং অপটিমাল লোডভিত্তিক ফ্লেক্সিবেল অপারেশন সিস্টেম চালু করা।
যেসব এলাকা স্মার্ট বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় আসবে সেগুলো হলো- রাজশাহী জেলার রাজশাহী সিটি করপোরেশন, পবা, তানোর এবং গোদাগাড়ী উপজেলা। নাটোর জেলার নাটোর সদর উপজেলা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, গোমস্তপুর, শিবগঞ্জ উপজেলা। বগুড়া জেলার বগুড়া সদর, শেরপুর, দুপচাঁচিয়া, শিবগঞ্জ এবং সান্তাহার উপজেলা।
নওগাঁ জেলার নওগাঁ সদর উপজেলা। জয়পুরহাট জেলার জয়পুরহাট সদর উপজেলা। পাবনা জেলার পাবনা সদর, ঈশ্বরদী উপজেলা। সিরাজগঞ্জ জেলার সিরাজগঞ্জ উপজেলা। রংপুর জেলার রংপুর সিটি করপোরেশন উপজেলা। গাইবান্ধা জেলার গাইবান্ধা সদর, সাদুল্লাপুর, সাঘাটা, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী উপজেলা।
কুড়িগ্রাম জেলার কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা। লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, পাটগ্রাম উপজেলা। নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর, ডোমার, নীলফামারী সদর, কিশোরগঞ্জ এবং জলঢাকা উপজেলা। দিনাজপুর জেলার দিনাজপুর সদর, ফুলবাড়ী, পার্বতীপুর, সেতাবগঞ্জ উপজেলা। পঞ্চগড় জেলার তেতুঁলিয়া, পঞ্চগড় সদর উপজেলা। ঠাকুরগাঁও জেলার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নেসকোর আওতাভুক্ত এলাকায় স্মার্ট ডিস্ট্রিবিউশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন এবং মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে। একইসঙ্গে সিস্টেম লস হ্রাস, বিদ্যুৎ অপচয় রোধ এবং সম্পূর্ণ রাজস্ব আদায় করাও সম্ভব হবে।’
সারাবাংলা/জেজে/এমও