Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কক্সবাজারে সক্রিয় জিরো পাগলার মাদক সিন্ডিকেট

ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১২ এপ্রিল ২০২২ ২৩:৩৫

ছবি: আব্দুর রহিম প্রকাশ, ওরফে জিরো পাগলা

কক্সবাজার: আব্দুর রহিম (২৯) প্রকাশ, ওরফে জিরো পাগলা। রুক্ষ চুল-দাঁড়ি, ছেঁড়া কাপড়, কাঁধে ভাঙ্গারির বস্তা, অস্বাভাবিক আচরন। সবমিলে একজন পাগল। সাধারণ পথচারীরা এই পাগলকে পাশ কাটিয়ে গেলেও মাদক পাচারকারী আর মাদকসেবীরা তাকে ঠিকই চিনতে পারে। জিরো পাগলা নামে পরিচিত এই ব্যক্তি মাদক পাচার, সেবন, বিক্রি, চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

জীবনে ৭/৮ বার জেল খাটা এই যুবকের রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট। যারা কখনও পাগল, আবার কখনও টোকাই সেজে মাদক বিক্রি ও পাচারের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালায়। আর তাদের এই অপকর্মের বেশিরভাগই টাকা ব্যয় হয় মাদক সেবনে। তাদের কারণে শহরের লালদিঘীর পাড়সহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা অপরাধ। আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে এই চক্র আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

গত ৪ এপ্রিল কক্সবাজার সদর মডেল থানার সামনে বজল আহম্মদ নামে এক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে থাকা ভবন থেকে মূল্যবান জিনিস-পত্র চুরি হয়। সিসিটিভি’র ফুটেজে দেখা যায় জিরো পাগলার নেতৃত্বে ৩/৪ জন মিলে চুরি করে। সেই সূত্র ধরে জিরো পাগলা সর্ম্পকে জানতে গেলে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।

আব্দুর রহিম প্রকাশ ওরফে জিরো পাগলা নামে এই যুবক চট্টগ্রাম শহরের পশ্চিম মাদাবাড়ির (২৯ নম্বর ওয়ার্ড) মৃত রমিজ উদ্দিনের ছেলে। দুই ভাই চার বোনের মধ্যে সে মেজো।

জিরো পাগলা’র সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯ বছর বয়সে সে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। শুরুর দিকে সিগারেট আর গাঁজা সেবন করলেও পরে নানা ধরনের মাদক গ্রহণে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে। মাদকের টাকার জন্য ছিনতাই, চুরিসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করে। জীবনে প্রথম জেলে যায় ২০১৩ সালের জুনে। ওই সময় দুই কেজি গাঁজাসহ পুলিশের হাতে আটক হয়ে প্রায় এক মাস চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিল। একই বছর ডিসেম্বরে ফেনসিডিলসহ পুলিশের হাতে আটক হয়ে কুমিল্লায় কারাগারে ছিল এক মাস ২২ দিন। ছিনতাই ও ছুরিকাঘাতের অপরাধে ২০১৫ সালে তিন মাসের বেশি ছিল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। ২০১৭ সালে মাদক মামলায় ময়মনসিং কারাগারে কাটে ১৮ দিন। ২০১৮ সালের ফেনীর সেনাইমুড়ি বাজারে মাদকসহ আটক হয়ে দুই মাস জেলে ছিল। ২০১৮ ছিনতাইকালে হাতে-নাতে আটক হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিল। ২০১৯ সাল থেকে কক্সবাজারে অবস্থান করে জিরো পাগলা। এরই মধ্যে দুই বার জেল হাজতে ছিল।

জিরো পাগলাসহ তার সহযোগীরা শহরের ভ্রাম্যমাণ মাদক বিক্রি কেন্দ্র রাখাইন পাড়া, পশ্চিম মাছ বাজার, গোলদিঘীর পাড় ও আইভিপি সড়কসহ বিভিন্ন পয়েন্টের বড় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে খুচরা মূলে ইয়াবা আর গাজা কেনে। পরে ভ্রাম্যমাণ বিক্রির পাশাপাশি লালদিঘীর পাড়ের অন্তত ১৫টি নিম্নমানেরর আবাসিক হোটেল ও কটেজ জোনে এসব মাদক বিক্রি ও নিজেরা সেবন করে। এই মাদকের টাকার জন্য তারা ছিনতাই, ছুরিকাঘাত, চুরি, অপহরণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও চালায়।

জিরো পাগলাদের এই সিন্ডিকেটে রয়েছে রণি প্রকাশ ওরফে নাক্কাড়া, মোহাম্মদ হাসান, কিরণ মালা, ইসমাইল, আবদুল্লাহ্, খাইরুল আমিন প্রকাশ ওরফে বতল্লা, ফারুক প্রকাশ ওরফে ঈদগাঁহ ওয়ালা ফারুক, শুক্কুর, সালমান শাহ্, ফুফন, ফারুক প্রকাশ, সাইফুল, নাছির, কালু, রামছা, জনি, আবদুল্লাহ, হৃদয়, সাগর, সাজিদ, শেফায়েত ও বাইতুল্লা। উল্লেখ্য, এসব অপরাধীদের মধ্যে সম্প্রতি পুলিশ রনি, আবদুল্লাহ ও বাইতুল নামে তিন জনকে আটক করেছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, মাদক-ছিনতাইসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর অবস্থানে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রতিনিয়ত আটক করা হচ্ছে অপরাধীদের। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সারাবাংলা/পিটিএম

কক্সবাজার জিরো পাগলা টপ নিউজ মাদক পাচার


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর