শ্রমিক বিক্ষোভে সারাদেশে ট্রেন বন্ধ
১৩ এপ্রিল ২০২২ ১০:১০
ঢাকা: মাইলেজ ভাতা পাওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পরও প্রজ্ঞাপনে তার প্রতিফলন না থাকায় ফের কর্মবিরতি শুরু করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। তাতে হঠাৎ করেই দেশজুড়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা ছাড়াই রেলওয়ে শ্রমিকদের এ কর্মসূচিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। শ্রমিকরা বলছেন, রেলপথ মন্ত্রণালয় তাদের আশ্বস্ত করার পরও সমস্যার সমাধান যেহেতু হয়নি, তাই কর্মবিরতি সহসাই শেষ হচ্ছে না।
বুধবার (১৩ এপ্রিল) সকাল থেকেই সারাদেশে কর্মবিরতি পালন শুরু করেন শ্রমিকরা৷ ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কথা বলে জানা গেছে, কোনো জেলা থেকেই এদিন ছেড়ে যায়নি কোনো ট্রেন। আগে থেকে টিকিট কেটে ভ্রমণ করতে আসা লাখো যাত্রী স্টেশনে আটকা পড়েছেন।
রেলওয়ের সংস্থাপন কোড অনুযায়ী, রানিং স্টাফরা দিনে আট ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন করলে বা ১০০ মাইলের বেশি ট্রেন চালালে একদিনের সমপরিমান টাকা ভাতা হিসেবে পান। আর এই ভাতাকে বলা হয়, মাইলেজ বা রানিং ভাতা। গত বছর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সেই সুবিধা বাতিল করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এরপর থেকে শুরু হয় আন্দোলন। গত জানুয়ারি মাসে রেলওয়ে কর্মীরা লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দিলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে সে আন্দোলন থেকে সরে আসেন তারা। এরপর তাদের সুবিধা দেওয়া সম্ভব নয় বলে গত ১০ এপ্রিল অর্থমন্ত্রণালয় থেকে আরেকটি চিঠি ইস্যু করা হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে এই কর্মবিরতি।
এদিকে পূর্ব ঘোষণা না থাকায় রেলস্টেশনে উপস্থিত হওয়া যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। কুষ্টিয়া থেকে শিশু সন্তানের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসার কথা ছিল সংবাদকর্মী নূহ আবদুল্লাহর পরিবারের। তাদের আসা হচ্ছে না। এই অবস্থায় নূহ আবদুল্লাহ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় আসার টিকিট পাওয়া যায় না। এজন্য খুলনা থেকে টিকিট কেটেছি। এখন শুনছি ট্রেনই বন্ধ। এই ক্ষতিপূরণ কে, কীভাবে দেবে? টাকার অংকে হাজার টাকার এখন অনেক দাম আমাদের মতো মানুষের কাছে।’ সকাল থেকে এমন দুর্ভোগে পড়েছেন লাখো যাত্রী।
এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান সারাবাংলাকে জানান, মূল কর্ম ঘণ্টার চেয়ে আমরা যে পরিমাণ ডিউটি করি, তাতে মাসিক বেতনের সঙ্গে ২০ থেকে ৬০ দিনের মাইলেজ দেওয়া হতো। কিন্তু নতুন যে আইবাস পদ্ধতি করা হয়েছে, তাতে ৩০ দিনের বেশি মাইলেজ সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এতে ট্রেন চালকরা অতিরিক্ত পরিশ্রম করেও প্রাপ্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হবেন।
আরও পড়ুন:
মাইলেজ সুবিধা পাওয়ায় রেলওয়ের রানিং স্টাফদের আন্দোলন স্থগিত
রানিং ভাতা বহালের দাবিতে ট্রেন চলাচল বন্ধের হুঁশিয়ারি
রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি, ট্রেন চলাচল বন্ধ
তিনি বলেন, আমরা গত বছর থেকে আন্দোলন করে আসছি। বিষয়টি নিয়ে রেলমন্ত্রীর কাছে, রেল সচিব এবং রেলওয়ে মহাপরিচালক ও জিএম বরাবরে দাবি জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। এসবের প্রেক্ষিতে গত ৩০ জানুয়ারি আমাদের (রানিং স্টাফ) নিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। আমাদের সঙ্গে লিখিত হয় যে দাবি মেনে নেওয়া হবে। কার্যত তিন মাস পর দেখা গেল, তা হয়নি। তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা চিঠি পাওয়ার পরেই আমরা কর্মবিরতি শুরু করেছি। এটা একদম কোনো রকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়া। তবে ওই চিঠি বাতিল না করা পর্যন্ত এখান থেকে আমরা পিছু হটছি না।
জানা যায়, এই অঞ্চলে রেলযাত্রার শুরু থেকে অর্থাৎ দেড়শ বছরের বেশি সময় ধরে রেলের রানিং স্টাফরা মাইলেজ সুবিধা বা রানিং ভাতা পেয়ে আসছেন। কিন্তু নতুন করে বেতন হিসাবের সফটওয়ারে (আইবাস) ৩০ দিনের বেশি মাইলেজ ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এ বিষয়ে গত বছর অর্থ মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে স্টাফদের এই সুবিধা বন্ধের আদেশ দেওয়া হয়। গত ৩ নভেম্বর অর্থমন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মাইলেজ ভাতা মূল বেতনের অংশ হিসেবে গণ্য হবে না। তা পেনশনেও যোগ হবে না। এতে আরও বলা হয়, ভাতার পরিমান মাসিক মূল বেতনের বেশি হতে পারবে না। এরপর থেকেই শুরু হয় প্রতিবাদ। ওই প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন স্টাফরা। তাদের বক্তব্য যে বেতন আমরা পাচ্ছি তাতে সংসার চালানো কোনোভাবে সম্ভব নয়।
ট্রেনের চালক (লোকো মাস্টার), গার্ড ও টিকেট পরিদর্শক- টিটিদের রানিং স্টাফ বলা হয়। রেলওয়ে সংস্থাপন কোড অনুযায়ী, এই স্টাফরা দিনে আট ঘন্টার বেশি দায়িত্ব পালন করলে বা একশো মাইলের বেশি ট্রেন চালালে একদিনের সমপরিমান টাকা যা মাইলেজ ভাতা নামে পরিচিত তা পান। জানা গেছে, জনবল সংকটের কারণে চালক, গার্ড ও টিটিদের দৈনিক কর্মঘণ্টা এখন ১২ ঘণ্টা। রানিং স্টাফদের বক্তব্য, দিনে তাদের কর্মঘণ্টা ১২ ঘণ্টা হলেও কাজ করতে হয় ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা। তারা মূল বেতনের চেয়ে মাইলেজ ভাতা বেশি পান।
এ প্রসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সারাবাংলা/জেআর/এএম