বিক্ষুব্ধ রেলযাত্রীদের হাজারো প্রশ্ন, উত্তর জানে না কেউ
১৩ এপ্রিল ২০২২ ১১:২৩
ঢাকা: কোনো ঘোষণা নেই, নেই কর্মসূচি। আগে থেকে টিকিট কেটে রাখা যাত্রীরা সাত সকালে রেলস্টেশনে পৌঁছে দেখলেন রাষ্ট্রীয় এই পরিষেবা হঠাৎ করেই বন্ধ। নববর্ষের আগের দিন, কেউ যাচ্ছিলেন গ্রামের বাড়ি, কেউ যাচ্ছিলেন পছন্দের গন্তব্যে ঘুরতে। কেউ বা দূর শহরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন চিকিৎসার কাজে। সেইসঙ্গে অফিসগামী নিয়মিত যাত্রী তো আছেই। সবাই পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। এরমধ্যে রোজা মুখে দূর পথে বের হওয়া যাত্রীদের অবস্থা ছিল আরও নাজেহাল। বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা কাকে কী বলবেন, সেটাও যেন ভেবে পাচ্ছেন না। হঠাৎ করেই ট্রেন বন্ধ হওয়ায় এই চিত্র দেখা গেছে, রাজধানীর কমলাপুর স্টেশন থেকে শুরু করে সারাদেশেই।
মাইলেজ ভাতা পাওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পরও প্রজ্ঞাপনে তার প্রতিফলন না থাকায় বুধবার (১৩ এপ্রিল) সকাল থেকেই সারাদেশে কর্মবিরতি পালন শুরু শুরু করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। এতে দেশজুড়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। শ্রমিকরা বলছেন, রেলপথ মন্ত্রণালয় তাদের আশ্বস্ত করার পরও সমস্যার সমাধান যেহেতু হয়নি, তাই কর্মবিরতি সহসাই শেষ হচ্ছে না।
চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, খুলনাসহ দেশের কোনো রেলওয়ে স্টেশন থেকে বুধবার (১৩ এপ্রিল) একটি ট্রেনেও ছেড়ে যায়নি। ফলে সবগুলো স্টেশনেই যাত্রীদের ভিড়। যেসব যাত্রীরা ভ্রমণ করতে পারেননি, তারা টিকিটের টাকা ফেরত পাবেন কি না, নাকি পরে ভ্রমণ করতে পারবেন। এমন নানা প্রশ্ন রয়েছে যাত্রীদের, যার জবাব দেওয়ার কেউ নেই। রেলওয়ে রানিং স্টাফ কর্মচারী ঐক্যপরিষদের নেতারা জানিয়েছেন, তাদের বেতন- ভাতার সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে দাবি মেনে নিলেই তারা কর্মবিরতি থেকে সরে আসবেন।
সরেজমিনে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে যাত্রীদের ভীড় দেখা গেছে। হঠাৎ করে কোনো ঘোষণা ছাড়াই ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা। চট্টগ্রামগামী ট্রেনের যাত্রী মামুনুর রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, তার মা অসুস্থ থাকায় জরুরি ভিত্তিতে চট্টগ্রাম যাওয়া প্রয়োজন তার। ট্রেন যাতে মিস না হয় সেজন্য এক ঘণ্টা আগে এসে হাজির হয়েছেন স্টেশনে। কিন্তু স্টেশনে এসে দেখেন কোনো ট্রেন চলছে না। এভাবে তো হতে পারে না।
ময়মনসিংহগামী ট্রেনের যাত্রী শফিকুল ইসলাম বলেন, স্টাফদের সুযোগ সুবিধা কী দেবে, কী দেবে না সেটা রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বিষয়। আমরা সাধারণ যাত্রীরা কেন দুর্ভোগ পোহাবো।
ট্রেনে নিয়মিত অফিসে যাতায়াত করা সায়মা ইসলাম তন্দ্রা ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, এতোদিন একটু ট্রেনে জার্নি করে তাড়াতাড়ি অফিস-বাসা করতে পারতাম। আজ সেটাও অফ হয়ে গেল। আজ কখন বাসায় ফিরতে পারব কে জানে। ইফতার আদৌও পাব কি না জানি না। ভোগান্তি কপালে লেখায় থাকে।
এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান সারাবাংলাকে জানান, দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়ে গত ৩০ জানুয়ারি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব আমাদের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। তারপরে এতোদিন কেটে গেল কোনো খবর নেই। হঠাৎ ১০ এপ্রিল অর্থমন্ত্রণালয়ের চিঠি। এটা তো হওয়ার কথা ছিল না। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে বলেই হঠাৎ রাস্তায় নামতে হয়েছে।
এ বিষয়ে নিশ্চুপ রয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
সারাবাংলা/জেআর/এএম