‘দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তারা হরিলুটে ঝাঁপিয়ে পড়েছে’
১৩ এপ্রিল ২০২২ ১৩:১২
ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র যু্গ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘গণতান্ত্রিক অধিকার নেই বলেই দুর্নীতি আজ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া কিছু ব্যবসায়ী এবং দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হরিলুটে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। দেশের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় খাতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির বিস্তার ঘটিয়েছে তারা।’
বুধবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শ্লোগান ছিল-সোনার বাংলা শ্মশান কেন? আর এখন জনগণ বলে-‘সোনার বাংলা নরক কেন ?’ কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই শোষণ, লুণ্ঠন, অবিচার, রাজনৈতিক হত্যা আর উৎপীড়নে দেশে ভয়াবহ কলঙ্ক রচনা করেছে। করোনা মহামারিতে যখন বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করছে আর শত শত কোটি মানুষ ছিল মৃত্যু ভয়ে ভীত, সেই ভয়ানক পরিস্থিতিও সরকারের নেতা মন্ত্রীদেরকে দুর্নীতি থেকে সরাতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) প্রকাশিত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর গবেষণা রিপোর্ট আপনারা দেখেছেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকারের ভ্যাকসিন ক্রয় ও ব্যবস্থাপনায় ২৩ হাজার কোটি টাকার গরমিল রয়েছে। অর্থাৎ ভ্যাকসিন ক্রয় এবং ব্যবস্থাপনার নামে নিশিরাতের সরকার রাষ্ট্রের তথা জনগণের ২৩ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে। প্রাক্কলিত ব্যয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রদত্ত হিসাবের অর্ধেকেরও কম।’
‘এছাড়াও ১০ দশমিক ১ শতাংশ নাগরিক টিকার জন্য ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন। ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে পছন্দ অনুযায়ী টিকা প্রদান করা হয়েছে এবং টিকা না নিয়েও টাকার বিনিময়ে প্রবাসীরা টিকা সনদ সংগ্রহ করেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো পৃথিবীর প্রত্যেকটা দেশের জন্য বিপদ আর আমাদের দেশের আওয়ামী লীগের লোকজনের কাছে উৎসবে মেতে ওঠা। তাই করোনা গোটা মানবজাতির জন্য ভীতির কারণ হলেও আওয়ামী ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর কাছে ছিল ‘আনন্দবার্তা’। তারা রাজনীতি করছেন দুর্নীতির কাছে নিঃস্বার্থ আত্মনিবেদনের জন্য’- বলেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিটি সেক্টরে পিলে চমকানো বড় বড় দুর্নীতির খবর বেরুলেও আজ পর্যন্ত কোনো দুর্নীতির বিচার হয়নি। বরং দুর্নীতি এবং দুর্নীতিবাজদের বাঁচানো এই সরকারের দুটি বিরল গুণ। এরা দুর্নীতিকে জায়েজ করতে জাতীয় সংসদে পর্যন্ত দায়মুক্তির আইন পাশ করে। গতকাল প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বার্ষিক প্রতিবেদনেও বাংলাদেশে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া, দুর্নীতির দায়মুক্তি এবং বিচারহীনতার কথা তুলে ধরা হয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘কেবল টিকা নয়, গত দুই বছর সংবাদপত্রের পাতা ঠাসা ছিল স্বাস্থ্যখাতের নিয়োগ, ক্রয়, অবকাঠামো নির্মাণ ও সেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষ কেলেঙ্কারি ও অব্যবস্থাপনার সংবাদে। দুর্নীতির অভিপ্রায় চরিতার্থ করতে ঢাকার সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান স্বাক্ষরিত এক আদেশে কোভিড-১৯ রোগী ও স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক তথ্য গণমাধ্যমের কাছে আদান প্রদানে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। জাতীয় সংসদে একাধিকবার কোনো কোনো সংসদ সদস্য টিকার দাম জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘ননডিসক্লোজার’চুক্তির কারণে টিকার দাম প্রকাশ করা যাবে না।’
টিকা নিয়ে একেক সময় একেক কথা বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মানুষকে বেকুব বানানোর চেষ্টা করেছেন মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘গত ১০ মার্চ তিনি বলেছেন- করোনার টিকা কেনা ও টিকাদান কার্যক্রম মিলে সরকারের প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। অপরদিকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া গত কয়েক মাসে একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন, টিকা কেনায় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এটা থেকে যে কেউ অনুমান করতে পারেন ২৩ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির আসল রহস্য।’
তিনি বলেন, ‘চরমভাবে ব্যর্থ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাজপথে বিক্ষোভ ও গণক্ষোভ তৈরি হলেও সরকার কেন তাকে স্বপদে বহাল রেখেছে তা টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে উন্মোচন হয়েছে। দেশের জনগণ এই ২৩ হাজার কোটি টাকা কারা লুটপাট করলো তার হিসাব চায়। বিরোধী দলের নেতাদের হয়রানীর জন্য ওঁৎ পেতে থাকা দুদককে বলব তদন্ত করে ২৩ হাজার কোটি টাকার হিসাব বের করুন। এ সমস্ত নজীরবিহীন দুর্নীতির হিসাব জনগণকে দিতেই হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম ও যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এজেড/এনএস