লালদিঘী মাঠে তালা: হচ্ছে না জব্বারের বলিখেলা
১৩ এপ্রিল ২০২২ ১৫:২৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সংস্কার হওয়া চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠ উন্মুক্ত করে না দেওয়ায় এবার ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলিখেলা ও বৈশাখী মেলা স্থগিত করেছেন আয়োজকরা। মাঠটি প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। এর ফলে এ নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো ঐতিহাসিক এই আয়োজন হচ্ছে না। এর আগে দুই বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত কারণে বলি খেলা ও বৈশাখী মেলার আয়োজন করা যায়নি।
বুধবার (১৩ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বলিখেলা ও মেলা স্থগিতের ঘোষণা দেয় জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও মেলা কমিটি।
কমিটির সভাপতি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঐতিহাসিক লালদিঘীর মাঠ থেকে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন। এই মাঠ স্বাধীনতা আন্দোলনসহ নানা লড়াই-সংগ্রামের স্মৃতিবিজড়িত। ইতিহাস সংরক্ষণ করে মাঠটি সংস্কারের দাবি ছিল চট্টগ্রামবাসীর। সেই দাবি বাস্তবায়ন করেছেন আমাদের মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এখানে ছয় দফার মঞ্চ হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল হয়েছে। মাঠটিও সংস্কার করা হয়েছে। এটি এখন প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মাঠটি এখনো উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়নি। বাইরে রাস্তায় কিংবা অন্য কোনো স্থানে বলিখেলার আয়োজন সম্ভব নয়। কারণ শত বছরের বেশিসময় ধরে লালদিঘীর মাঠেই বলিখেলার আয়োজন হয়ে আসছে। যেহেতু মাঠ পাওয়া যাচ্ছে না, আমরা এবার বলিখেলা স্থগিত করেছি। যেহেতু বলিখেলা হচ্ছে না, মেলাও হবে না।’
তবে এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করে মাঠটি উন্মুক্ত করে দিলে বলিখেলা ও মেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হতে পারে বলে জহরলাল হাজারী জানিয়েছেন।
বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি যুব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করতে চট্টগ্রামের বদরপতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর কুস্তির প্রবর্তন করেছিলেন যা চট্টগ্রাম অঞ্চলে ‘বলিখেলা’ নামে পরিচিত। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সনের ১২ বৈশাখ নিজ নামে লালদীঘির মাঠে এই বলিখেলার সূচনা করেন তিনি। সূচনার ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর লালদীঘির মাঠে ১২ বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয় বলিখেলা। বলিখেলার একদিন আগে-পরে তিনদিন ধরে লালদিঘীর পাড়সহ আশপাশের এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে বসে মেলা। এ মেলায় গৃহস্থালী পণ্য থেকে শুরু করে নানা পণ্যের পসরা বসে।
মেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন জানিয়েছেন, এবার মেলার ১১৩ তম আসর হওয়ার কথা ছিল। কোভিড-১৯’র কারণে ১১১ ও ১১২তম আসর বসতে পারেনি। মাঠ না পাওয়ায় এবারের আসরও হচ্ছে না।
মেলা কমিটির সদস্য সচিব ও আবদুল জব্বারের নাতি শওকত আনোয়ার বাদল বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি। কিন্তু মাঠ পাচ্ছি না। মাঠ খোলা থাকলে খেলা ও মেলা হতো। মাঠ না পাওয়ায় খেলা হবে না। তাই এবার মেলার আয়োজনও করতে পারছি না।’
সংবাদ সম্মেলনে মেলা কমিটির সহ সভাপতি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, সাবেক কাউন্সিলর এ এস এম জাফর ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/এনএস