ঈদে চলবে ৬ জোড়া বিশেষ ট্রেন, থাকবে নারীদের জন্য আলাদা কামরা
১৩ এপ্রিল ২০২২ ১৫:৪৩
ঢাকা: পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ছয় জোড়া বিশেষ ট্রেন চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এসব ট্রেন আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে চলাচল শুরু করবে। যাত্রী পরিবহন ছাড়াও ঈদের দিন শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি ট্রেন চলবে। রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, যাত্রীরা যেন কোনো ধরনের অসুবিধায় না পড়েন সেজন্য এসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৩ এপ্রিল) রেলভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন রেলপথ মন্ত্রী। এসময় ট্রেনযাত্রা, টিকিট সংগ্রহসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়।
যে সকল রুটে চলবে বিশেষ ট্রেন
এবার ৬ জোড়া বিশেষ ট্রেন চাঁদপুর স্পেশাল-১ ও ২ চলবে চট্টগ্রাম- চাঁদপুর- চট্টগ্রাম রুটে। এটি ঈদের আগের দিন ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত এবং ঈদের পর ৪ মে থেকে ৮ মে পর্যন্ত চলাচল করবে। দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা রুটে চলবে ঈদের আগের দিন ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত এবং ঈদের পর ৪ মে থেকে ৮ মে পর্যন্ত চলাচল করবে। খুলনা স্পেশাল (মৈত্রীর রেক দিয়ে) খুলনা -ঢাকা-খুলনা রুটে চলবে ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত। এছাড়া শোলাকিয়া স্পেশাল-১ চলবে ভৈরববাজার- কিশোরগঞ্জ। শোলাকিয়া স্পেশাল- ২ চলবে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে। এই দুইটি ট্রেন চলবে ঈদের দিন। এবার ঈদে আন্তঃনগর ট্রেনে নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য একটা বিশেষ কামরা যুক্ত করা হচ্ছে।
ঈদের টিকিট সংগ্রহ
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেন যাত্রীদের জন্য আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে আগাম টিকিট বিক্রি শুরু করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। যে সকল যাত্রী ২৭ এপ্রিল যাতায়াত করবেন তাদেরকে ২৩ এপ্রিল জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। ২৮ এপ্রিল যাতায়াত করার জন্য টিকিট কাটতে হবে ২৪ এপ্রিল, ২৯ এপ্রিল যাতায়াত করার জন্য টিকিট কাটতে হবে ২৫ এপ্রিল, ৩০ এপ্রিল যাতায়াতের জন্য টিকিট কাটতে হবে ২৬ এপ্রিল, ১ মে যাতায়াতের জন্য টিকিট কাটতে হবে ২৭ এপ্রিল।
ফিরতি টিকিট
ঈদ শেষ করে ফিরে আসার জন্য ১ মে থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হবে। ৫ মে যাতায়াতের টিকিট পাওয়া যাবে ১ মে, ৬ মে যাতায়াতের টিকিট কাটতে হবে ২ মে, ৭ মে যাতায়াতের জন্য টিকিট কাটতে হবে ৩ মে, ৮ মে যাতায়াতের জন্য টিকিট কাটতে হবে ৪ মে। ২, ৩ এবং ৪ মে টিকিট বিক্রি হবে চাঁদ দেখার ওপরে নির্ভর করে।
টিকিট যার ভ্রমণ তার
এবার ঈদে যাত্রীদের টিকিট সংগ্রহ করতে হলে জাতিয় পরিচয়পত্র দরকার হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া কোনো টিকিট বিক্রি করা হবে না। একেকজন যাত্রী চারটির বেশি টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন না। অনলাইনে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে সকাল ৮টা থেকে। আর কাউন্টারে সকাল ৮টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত টিকিট পাওয়া যাবে। প্রতিটি টিকিট কাউন্টারে একটি করে কাউন্টার থাকবে নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য। ঈদের অগ্রিম টিকিট ফেরত নেওয়া হবে না। স্পেশাল ট্রেনের টিকিট অনলাইনে পাওয়া যাবে না। এ টিকিট কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
যেখানে টিকিট পাওয়া যাবে
সকল পশ্চিমাঞ্চলগামী ও খুলনাগামী স্পেশাল ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে কমলাপুর স্টেশন থেকে। চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সকল আন্তঃনগর ট্রেনে টিকিট পাওয়া যাবে বিমানবন্দর কাউন্টার থেকে, ময়মনসিংহ, জামালপুরগামী ও দেওয়ানগঞ্জ স্পেশালসহ সকল আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে তেঁজগাও কাউন্টারে, মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ ও হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে ক্যান্টনমেন্ট কাউন্টার থেকে আর সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সকল আন্তঃনগরগামী ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে ফুলবাড়িয়া (পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন) থেকে। এই পাঁচটি কেন্দ্র থেকে ঈদ উপলক্ষে টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। টিকিটের মোট ৫০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে এবং বাকি ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হবে কাউন্টারে। তবে ঈদে চালু করা স্পেশাল ট্রেনের কাউন্টার থেকেই এনআইডি দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করা হবে।
ঈদে আরও যত উদ্যোগ
ঈদের সাত দিন আগে ২৫ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেনের ডে অফ থাকবে না। ডে অফ প্রত্যাহারের ফলে অতিরিক্ত ৯২টি আন্তঃনগর ট্রেন বিশেষ ট্রিপ হিসেবে থাকবে। তবে ঈদের দিন কোনো আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে না। ঢাকা থেকে বহির্গামী ট্রেনের মোট আসন সংখ্যা হবে ২৬ হাজার ৬৬৩টি। ঢাকা থেকে আরও ২টি স্পেশাল ট্রেনের আরও ১৫০০ আসনের টিকিট কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হবে।
রেলপথমন্ত্রী যা বললেন
সব সময়ই উৎসবের সময় যাত্রী সংখ্যা বেড়ে যায়। গেলো দুই বছর করোনার কারণে মানুষ ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছে। আমরা বরাবরের মতো এবারও ঘরমুখো যাত্রীদের বাড়িফেরা নির্বিঘ্ন করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সম্ভাব্য ৩ মে ঈদ হতে পারে, সেটা ধরে নিয়ে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি।
তিনি বলেন, টিকিট কালোবাজারি রোধে ঢাকা, বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ সকল বড় বড় স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি, বিজিবি ও স্থানীয় পুলিশ ও র্যাবের সহযোগিতায় টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চলন্ত ট্রেনে বা রেললাইনে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা জোরদার করা হয়েছে। জরুরি সমস্যা নিরসনে কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবে। ভিজিলেন্স টিম টিকিট বিক্রির বিষয় মনিটর করবে। এছাড়া ঈদের দশ দিন আগে এবং পরে পর্যন্ত ট্রেনে সেলুন সংযোজন করা হবে না।
সারাবাংলা/জেআর/এসএসএ