Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘প্রাথমিকের চেয়ে মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমেছে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৩ এপ্রিল ২০২২ ২২:১৮

ঢাকা: করোনা মহামারিতে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর স্কুলে ফেরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের উপস্থিতি বেড়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক— উভয় পর্যায়েই। তবে সামগ্রিকভাবে প্রাথমিক স্তরের চেয়ে মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমেছে। আর নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমেছে সমান হারে।

‘নিরাপদ ইশকুলে ফিরি’ ক্যাম্পেইনের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য। গবেষণায় বাংলাদেশে কর্মরত ক্যাম্পেইন পরিচালনাকারী ২১টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অংশ নিয়েছে।

বুধবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে ঢাকার একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এক সভায় গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে বাংলাদেশে কর্মরত ক্যাম্পেইন পরিচালনাকারী ২১টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

সংস্থাগুলো দেশের সাত বিভাগের ১৭টি জেলায় ৩২৮টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে প্রায় তিন সপ্তাহব্যাপী সমীক্ষা চালিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমীক্ষা চলাকালীন তিন সপ্তাহে স্কুলগুলোতে প্রাথমিক পর্যায়ে ১৬ থেকে ৩৭ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। মেয়ে শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল ১৪ থেকে ৩৫ শতাংশ। একইসঙ্গে মাধ্যমিক স্তরে অনুপস্থিত ছিল ৩৪ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী এবং ২৮ থেকে ৪১ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী।

দীর্ঘ বিরতির পর স্কুলে শিশুদের উপস্থিতি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা রক্ষণাবেক্ষণ এবং মানসিক সুস্থতা পর্যবেক্ষণ করতে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। সংখ্যাগত ও গুণগত উভয় উপাত্তই সংগ্রহ করা হয়েছে গবেষণাটিতে।

জরিপের আওতায় থাকা ৩২৮টি স্কুল থেকে ১ হাজার ৬০৬ জন শিশুর সঙ্গে ফোকাস গ্রুপ আলোচনা (এফজিডি) করে এবং শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারধর্মী আলোচনার মাধ্যমে গুণগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

গুণগত গবেষণা থেকে শিক্ষার্থীদের স্কুলে অনুপস্থিত থাকার প্রাথমিক কারণগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়া, বাল্যবিয়ে, পরিবার অন্য এলাকায় স্থানান্তর হয়ে যাওয়া, অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলে যাওয়া ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণে অনাগ্রহের মতো বিভিন্ন কারণ উঠে এসেছে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করতে দীর্ঘ সময় কাজ করতে হবে। সরকারের অনেক গবেষণা ফলাফলের সঙ্গেই এই গবেষণা মিলে গেছে। যারা বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে তাদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনতে একদম তৃণমূলে গিয়ে কাজ করতে হবে আমাদের।

তিনি আরও বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে কাজ করব বলে দুই লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করেছি। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তত দুই জন কাউন্সিলিংয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক থাকবেন। আর প্রতিটি জেলায় একজন করে পেশাদার কাউন্সিলর থাকবে। সবাই মিলে কাজ করলে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা অবশ্যই পূরণ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে আমরা মনে করি।

গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে স্কুলে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ও। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৭৪ শতাংশ শিক্ষার্থী স্কুলে মাস্ক পরে এবং সামগ্রিকভাবে ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে।

গুণগত সমীক্ষা অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা লকডাউনের সময় খিটখিটে মেজাজ, একাকিত্ব, বিচ্ছিন্নতা ও মানসিক চাপ অনুভব করত। এর কারণ হিসেবে অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা বলেছেন আর্থিক সংকট, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, বাল্যবিয়ের ঝুঁকি, শিক্ষা বন্ধের সুযোগ, পারিবারিক সমস্যা বেড়ে যাওয়া, অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত না হতে পারা এবং পাঠ বোঝার অসুবিধার কথা।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফের খোলার পর যদিও এই সমস্যাগুলো কমেছে, তবে নতুন কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে উঠে এসেছে গবেষণায়। শিখতে অনাগ্রহ, পাঠ বুঝতে অসুবিধা এবং অন্যদের সঙ্গে মিশতে না পারার মতো বিষয়গুলো চ্যালেঞ্জ হয়ে এসেছে।

শিশুদের নিরাপদে শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনতে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তারিখে ‘নিরাপদ ইশকুলে ফিরি’ ক্যাম্পেইন কাজ শুরু করে। এর পর থেকেই এই ক্যাম্পেইনটি স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে অ্যাডভোকেসির পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে।

ক্যাম্পেইনটি পরিচালনাকারী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো হলো— ব্র্যাক, ব্রিটিশ কাউন্সিল, গণসাক্ষরতা অভিযান, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, এডুকো বাংলাদেশ, এফআইভিডিবি, ফ্রেন্ডশিপ, হ্যাবিট্যাট ফর হিউম্যানিটি বাংলাদেশ, হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল- হিউম্যানিটি অ্যান্ড ইনক্লুশন, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন, লিওনার্ড চ্যাশায়ার, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, রুম টু রিড বাংলাদেশ, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ, সাইটসেভারস, সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশ, স্ট্রমি ফাউন্ডেশন, টিচ ফর বাংলাদেশ, ভিএসও, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ও ইপসা।

সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম শিশুদের জন্য নিরাপদ করতে নিবিড়ভাবে সরকারের সঙ্গে কাজ করাই এই ক্যাম্পেইনের মূল লক্ষ্য।

সারাবাংলা/টিএস/টিআর

টপ নিউজ নিরাপদ ইশকুলে ফিরি নিরাপদ ইশকুলে ফিরি ক্যাম্পেইন শিক্ষায় করোনার প্রভাব শিক্ষার্থী উপস্থিতি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর