সুপ্রিম কোর্টে অনিয়ম-দুর্নীতি বরদাশত করা হবে না: প্রধান বিচারপতি
১৩ এপ্রিল ২০২২ ২৩:৩৪
ঢাকা: সুপ্রিম কোর্টে কোনো প্রকার দুর্নীতি-অনিয়মের ন্যূনতম উপস্থিতি বরদাশত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
বুধবার (১৩ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।
সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলে দিতে চাই- এই পবিত্র আদালত দেশের মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। এখানে কোনো প্রকার দুর্নীতি-অনিয়মের ন্যূনতম উপস্থিতি বরদাশত করব না। এখানকার অনিয়ম-দুর্নীতি নির্মূল করতে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে কুণ্ঠাবোধ করব না। অনিয়ম বা দুর্নীতি দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সুপ্রিম কোর্টে সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রমের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বেঞ্চ অফিসার, বেঞ্চ রিডার ও সেকশন সুপারদের নিয়ে সচেতনতামূলক এই কর্মশালার আয়োজন করে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।
অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি তাদের হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি, এই দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের কাছ থেকে কেউ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করলে কোনোভাবেই বরদাশত করব না। আমি এরই মধ্যে একজন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার, ডেপুটি রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে কমিটি করে দিয়েছি। তাদের খেয়াল রাখতে বলেছি কোথাও কোনো অনিয়ম বা সাধারণ মানুষকে কেউ হয়রানি করছে কি না।’
সুপ্রিম কোর্টের শাখায় বদলি বা পদায়নের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে যিনি যে কাজের জন্য উপযুক্ত তাকে সেই পদে পদায়ন করা হবে। অযোগ্য ও চাটুকারদের মাধ্যমে সঠিক সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। বরং এরা নিজ নিজ স্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় থাকে। তারা কর্মঘণ্টা নষ্ট করে।
‘যারা সঠিক ও সৎভাবে কাজ সম্পন্ন করবেন তাদের প্রত্যেকের পেছনে শুধু আমি নই, প্রত্যেক বিচারপতি থাকবেন।’
অসহায় বিচারপ্রার্থীদের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ আইনজীবীই ভালো। কিন্তু কিছু আইনজীবী আছেন যারা মক্কেলদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। যে লোকটা এত আশা-ভরসা নিয়ে এলো সে কিন্তু প্রথমেই একটা ধাক্কা খায়। তারপর সে যখন আদালত চত্বরে আসে, এই খরচ, সেই খরচ; কোন খরচ সেটা আমরা কমবেশি সবাই জানি। আস্তে আস্তে এই লোকগুলো নিঃস্ব হয়ে যায়।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের যে বেতন হয় তা কিন্তু জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। সে হিসাবে আমরা জনগণকে কতটুকু সেবা দিতে পেরেছি তা চিন্তা করতে হবে। যদি আমরা সেবা দিতে না পারি, তাহলে সেটা হবে আমাদের ব্যর্থতা। আমাদের সব কর্মফলের হিসাব আল্লাহর কাছে দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি শপথ নেওয়ার পরই হাইকোর্টের সেকশনগুলো পরিদর্শন করেছি। তাতে যে অবস্থা দেখেছি, সেখানে কাজ করার মতো পরিবেশ নেই। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। প্রধানমন্ত্রীও আমাদের কনসার্ন দিয়েছেন যে প্রশাসনিক কাজের জন্য পৃথক একটি ভবন তৈরি করে দেবেন, যেখানে পৃথক রেকর্ড রুম থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অদম্য উৎসাহ নিয়ে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু কতিপয় বেঞ্চ অফিসার, বেঞ্চ রিডার এবং বিভিন্ন সেকশনের সুপারসহ অসাধু কিছু কর্মকর্তার জন্য তাদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। একজন সেকশন সুপার বা একজন বেঞ্চ অফিসারের জন্য পুরো বেঞ্চের বদনাম হয়ে যায়। এটি কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না।’
আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমার আহ্বান থাকবে আদালতের পবিত্র অঙ্গন থেকে প্রতারক, অসাধু সিন্ডিকেট উচ্ছেদ করে সবাই সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন।’
সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ, রেজিস্ট্রার জেনারেল বজলুর রহমান প্রমুখ।
কর্মশালায় ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে লিগ্যাল এইড কার্যক্রম উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্য সচিব অবন্তী নূরল।
সারাবাংলা/কেআইএফ/একে
টপ নিউজ দুর্নীতি প্রধান বিচারপতি বিচারব্যবস্থা সুপ্রিম কোর্ট