সুপ্রিম কোর্ট বার: বিএনপির লাগানো নেমপ্লেট খুলে ফেলল আ. লীগ
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৪ এপ্রিল ২০২২ ০৩:৩২
১৪ এপ্রিল ২০২২ ০৩:৩২
ঢাকা: সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা ছাড়াই কার্যনির্বাহী কমিটির সাঁটানো নাম ফলক খুলতে গিয়ে আওয়ামীপন্থি ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে তুমুল বাগবিতণ্ডা ও দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এতে ১০/১৫ জন আহত হয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা হয়নি। তবে এর মধ্যেই বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে সভাপতিসহ অন্যান্য পদে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ীদের নাম ফলক সাঁটিয়ে দেন। কার্যনির্বাহী কমিটির সবগুলো পদে নামফলক সাঁটানোর পর বুধবার (১৩ এপ্রিল) তা খুলে ফেলে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে তুমুল বাগবিতণ্ডা এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে রুপ নেয়। এতে উভয় পক্ষের ১০/১৫ জন আহত হন।
নাম ফলক খুলতে আসা আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের আইনজীবীরা ফলাফল ঘোষণা ছাড়াই মঙ্গলবার রাতের আঁধারে নেমপ্লেট (নামফলক) সাঁটিয়ে দেয়। আমরা আজ তা খুলতে গেলে তারা আমাদের ওপরে হামলা করে। আমাদের নারী আইনজীবীসহ বেশ কয়েকজন তাদের হামলায় আহত হয়। আমাদের এক নারী সৈয়দা সাবিনা আহমদকে (মলি) মারধর করে আহত করা হয়েছে। তারা আরও বলেন, ফলাফল ঘোষণা ছাড়া নেমপ্লেট সাঁটিয়ে তারা আইনবহির্ভূত কাজ করেছেন।
অপরদিকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বলেন, গত কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। ওই কমিটির লোকজনও রুমগুলো খালি করে দিয়েছেন। যারা পাস করেছেন তাদের নেমপ্লেট লাগানো হয়েছে। কিন্তু তারা অযাচিতভাবে হাতুড়ি দিয়ে নেমপ্লেটগুলো ভেঙে ফেলে। আমরা বারণ করতে গেলে আমাদের ওপরে তারা অতর্কিত হামলা করে। আয়েশা নামের আমাদের এক আইনজীবীকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। তিনি এখন একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মাসুদ রানা নামের আরেক আইনজীবী হাতে আঘাত পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া আরও কয়েকজন আইনজীবী আহত হয়েছেন।
এর আগে, মঙ্গলবার রাত থেকে নেমপ্লেট সাঁটানো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেওয়া শুরু হয়। বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা নেমপ্লেট লাগানোদের ‘নির্বাচিত’ বলে ফেসবুকে অভিনন্দন জানায়। অপরদিকে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা রাতের আঁধারে নেমপ্লেট সাঁটানোকে স্বৈরাচারী ও পদ জবরদখল বলে ফেসবুকে সোচ্চার হন।
নেমপ্লেট লাগানোর বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটা হয়তো হয়নি, তবে ওইদিন গণনার পর ফলাফল তো সবারই জানা। আর বিগত কমিটি গত বছরের ১১ এপ্রিল দায়িত্ব গ্রহণ করে সে হিসেবেই গতকাল ১২ এপ্রিল অনেকে নেমপ্লেট লাগিয়ে দায়িত্ব শুরু করেছেন। আর আমি তো আগে থেকেই আছি।
অপরদিকে, আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী আবদুন নূর দুলাল সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের প্যানেলের সভাপতি ও সহ-সভাপতি প্রার্থীদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা আমাকে বলেছে তাদের নামের নেমপ্লেট লাগানের বিষয়ে তারা নিজেরাই কিছু জানেন না। এমনকি এ বিষয়ে তাদের থেকে কোনো সম্মতিও নেয়া হয়নি। আমরা এর বিরুদ্ধে অবশ্যই আইন মেনেই পদক্ষেপ নেবো। ‘ফ্রেশ কাউন্টিং’ হয়েই ফল ঘোষণা হতে হবে।
এরপর বুধবার সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি-সম্পাদকের রুমের সামনে দুপক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এর আগে ফল ঘোষণা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে গত ৬ এপ্রিল সাবেক সভাপতি–সম্পাদকদের সঙ্গে যৌথ বৈঠক করে কার্যনির্বাহী কমিটি। এরপর একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ. ওয়াই মশিউজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দুঃখ প্রকাশ করেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২২-২০২৩ সেশনের নির্বাচন গত ১৫ ও ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। ভোট গণনা শেষে ১৭ মার্চ রাতে ফল ঘোষণা করতে গেলে সম্পাদক পদে ভোট পুনরায় গণনার দাবি তোলেন আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সে দাবি নাকচ করে ফলাফল ঘোষণা করতে চাইলে হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এবং ফল ঘোষণা না করেই চলে যান নির্বাচন পরিচালনা উপ কমিটির সদস্যরা। এর পরের দিন নির্বাচন পরিচালনা উপ কমিটির প্রধানের পদ থেকে এ. ওয়াই মশিউজ্জামান পদত্যাগ করেছেন বলে তিনি নিজেই সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন। তারপর থেকে ভোটের ফল ঘোষণা আটকে আছে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এসএসএ