মঙ্গল শোভাযাত্রা—সুস্থ ধরা, সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমাজের প্রত্যাশা
১৪ এপ্রিল ২০২২ ১০:০০
২ বছরের ঘরবন্দি অনাড়ম্বর উদযাপনের বিরতির পর সাড়ম্বরে বরণ করে নেওয়া হলো বাংলা নতুন বছর ১৪২৯ বঙ্গাব্দকে। নতুন বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখকে বরণ করে নিতে মহামারি কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রত্যাশায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হয়ে গেল মঙ্গল শোভাযাত্রা। সুস্থ একটি পৃথিবীর প্রত্যাশার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমাজ গড়ার প্রত্যয়ও জানানো হয়েছে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) ১৪২৯ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন। পহেলা বৈশাখ। বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিতে সকাল ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে ভিসি চত্বর হয়ে ফের টিএসসি’তে শেষ হয় এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা।
এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ছিল— ‘নির্মল করো, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে।’ করোনা মহামারি থেকে চিরতরে উত্তরণ ও সাম্প্রদায়িকতা থেকে মুক্তির বার্তা দিতেই পঞ্চকবির অন্যতম রজনীকান্ত সেনের গানের অংশটি বেছে নেওয়া হয় প্রতিপাদ্য হিসেবে।
শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, দীর্ঘ দুই বছর পর ১৪২৯ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণের আয়োজন প্রাণচাঞ্চল্য, উৎসব ও আমেজের চিরাচরিত ছোঁয়া ফিরে পেয়েছে বলে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উৎসব। এটি একটি অসাম্প্রদায়িক মানবিক চেতনায় উজ্জীবিত উৎসব। এটি সব জনগোষ্ঠী, সম্প্রদায় ও ধর্মের মানুষের একটি প্রাণের জায়গা, সাধনার জায়গা, সম্পৃক্ততার জায়গা।
ঢাবি উপাচার্য বলেন, যার ধর্ম তারই থাকবে। কিন্তু উৎসব ও আমেজ সবার। বিশেষ করে বঙ্গাব্দ বরণের মতো অনুষ্ঠানে সর্বজনীন। মানুষের মধ্যে ধর্মের সম্প্রীতি, মানবিক বন্ধন সুদৃঢ় হোক— সেই প্রত্যাশা করি। এসময় তিনি সম্প্রীতিপূর্ণ, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক সমাজ বিনির্মাণে সবার প্রতি উদাত্তা আহ্বান জানান।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, বৈশ্বিক মহামারির কারণে আমরা দুই বছর আমাদের উৎসবটি করতে পারিনি। দুই বছর পর আমরা আবার আমাদের প্রাণে আয়োজন, হৃদয়ের উৎসবে হাজির হয়েছি। দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান যেসব শত্রুর বিরুদ্ধে আমরা লড়ছি, সেসব শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ার জন্য এই পহেলা বৈশাখ দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে। আমরা মনে করি আমাদের এই ঐতিহ্যময়ী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আমরা জঙ্গিবাদ ও অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করছি।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ কে এম মাকসুদ কামাল, প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূইয়াসহ অনেকে।
এর আগে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে ১৪২৭ বঙ্গাব্দের বরণ পুরোটাই কেটেছিল ঘরবন্দি হয়ে। কেবল ভার্চুয়াল মাধ্যমে কিছু আয়োজন ছিল। পরের বছর তথা ১৪২৮ বঙ্গাব্দেও মহামারি পরিস্থিতি খুব একটা অনুকূলে ছিল না। তারপরও সীমিত পরিসরে কিছু আয়োজন করা হয় এই বছর। মঙ্গল শোভাযাত্রাও করা হয় একেবারেই সীমিত পরিসরে, তাতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না।
দুই বছরের সেই বিরতির পর এবার চেনা রূপে ফিরেছে বঙ্গাব্দ বরণের আয়োজন। মঙ্গল শোভাযাত্রাতেও তাই নেমেছিল মানুষের ঢল। রাজধানী ঢাকা কেবল নয়, ঢাকার আশপাশ থেকেও অনেকেই এসে অংশ নিয়েছেন শোভাযাত্রায়।
এসময় শোভাযাত্রাকে ঘিরে কয়েক স্তরের নিরপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ, র্যাব, সোয়াটসহ বিভিন্ন ইউনিটের কয়েকশ সদস্য ঘিরে ছিলেন পুরো শোভাযাত্রাকে।
সারাবাংলা/আরআইআর/টিআর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঙ্গল শোভাযাত্রা সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমাজের প্রত্যাশা