গোবিন্দগঞ্জে ব্লাস্ট রোগে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি
১৪ এপ্রিল ২০২২ ১৪:১৬
গাইবান্ধা: জেলার গোবিন্দগঞ্জে বিভিন্ন এলাকায় উঠতি বোরো ধানের বেশ কিছু ক্ষেতে ব্যাপক আকারে ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে ব্যাপক ফসলহানির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। মাত্র দুই-তিন দিন সময়ের মধ্যে শীষ বের হওয়া কাঁচা ধান গাছ হঠাৎ করে হলুদ বর্ণ ধারণ করে শুকিয়ে গেছে। প্রথমে চাষিরা এটাকে পোকার আক্রমণ বললেও ব্লাস্ট রোগ বলে চিহ্নিত করেছে কৃষি বিভাগ। অসময়ে এ রোগের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ধান কৃষকরা।
ওই এলাকার চাষীরা অভিযোগ করেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে উপজেলার বোরো ধানের ভাণ্ডার বলে খ্যাত বিল এলাকা মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের জীবনপুর, পুনতাইড়, শিংজানী, বালুয়া, চরপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের বোরো ধানের ক্ষেতে পোকার আক্রমণে শীষ শুকিয়ে যাওয়া শুরু হয়। অসময়ে এই রোগের আক্রমণে ইতোমধ্যে এই এলাকার শতাধিক বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এর মধ্যে কৃষি বিভাগের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মীকে পাশে না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
নিজের ৪০ বিঘা জমির মধ্যে ২০ বিঘাতে বোরো ধানের চাষ করে সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন শিংজানী গ্রামের কৃষক ইয়াকুব আলীর। তিনি বলেন, কৃষি বিষয়ে পরামর্শ বা সহযোগিতা দূরে থাক, এই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট কাউকেই আমরা চিনি না।
একই গ্রামের আবু তাহেরের চার বিঘা, রেজাউল করিমের তিন বিঘা, আজাহার আলী ও শাকিলা বেগমের তিন-চার বিঘা করে জমির ধান কয়েক দিনের মধ্যেই শুকিয়ে গেছে। তারা জানান, সংশ্লিষ্ট দফতরের পরামর্শ না পেয়ে বাজারের কীটনাশক ও সারের দোকানিদের পরামর্শ নিয়ে জমির পরিচর্যা করতে হয়। ফলে জমিতে কখন কোন ওষুধ দিতে হয়, তা তারা জানেন না।
বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) সরেজমিনে মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের শিংজানী ও বালুয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বেশ কিছু ক্ষেতের ধান শুকিয়ে হলুদ রঙ ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে জমির পাকা ধান মনে হলেও কাছে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। সেখান থেকে টেলিফোনে উপজেলা কৃষি অফিসে বিষয়টি জানালে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি দল তাৎক্ষণিক সেখানে উপস্থিত হন।
তারা জানান, কোনো পোকা নয়, ধান ক্ষেতগুলোতে ব্লাস্ট রোগ আক্রমণ করেছে। চাষে নিরুৎসাহিত করার পরও যেসব কৃষক ব্রি-২৮, ব্রি-৮১ ও কাটারিভোগ নামের অননুমোদিত জাতের ধান চাষ করেছেন সেই ক্ষেতগুলোতেই কেবল ব্লাস্ট রোগ আক্রমণ করেছে।
বালুয়া গ্রামের কৃষক ফেরদৌস আলম আভিযোগ করে বলেন, কৃষি বিভাগের সঠিক নজরদারি না থাকায় মেয়াদোত্তীর্ণ এই ধানের জাতগুলোর চাষ থেকে কৃষকরা ফিরতে পারছেন না। যে কারণে পুরনো ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাবিহীন জাতের ধান চাষ করে বারবার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন চাষিরা।
এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রেজা-ই মাহমুদ বলেন, আবহাওয়াজনিত কারণে এবার ব্লাস্টার রোগ বেড়েছে। আমাদের সকল কর্মকর্তা সর্বদায় মাঠে কাজ করছে। আক্রান্ত ক্ষেতের ধান কেটে ফেলে স্বল্প সময়ে ফলনযোগ্য উন্নত জাতের আউশ ধান চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এজন্য ক্ষতিগ্রস্থ চাষিদের দ্রুত তালিকা করে প্রণোদনার আওতায় আনা হবে।
সারাবাংলা/এনএস