নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রাণের উচ্ছ্বাস
১৪ এপ্রিল ২০২২ ১৫:১৭
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস কেড়ে নিয়েছিল স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ। মহামারির দুঃসময় কাটিয়ে ফের ফিরতে শুরু করেছে স্বাভাবিকতার আলো। নতুন বছরেও স্বাভাবিকতার এ আলোকে ধরে রাখার প্রত্যাশায় নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্বাগত জানিয়েছে বাংলা নতুন বছর ১৪২৯ বঙ্গাব্দকে। ‘অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে মহামারির মন্দ সময় পেরিয়ে জীবনের চেনা ছন্দে ফিরছে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারের পহেলা বৈশাখ আয়োজনে নেতৃত্ব দিয়েছে চারুকলা অনুষদ। বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) নতুন বছর শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গাহি সাম্যের গান মঞ্চে অনুষদের শিক্ষার্থীদের প্রভাতী পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। শিক্ষার্থীরা নাচ-গানে বছরের প্রথম দিনের সকাল মুখরিত করে তোলে। জাতীয় সংগীত, নজরুল সংগীত ও রবীন্দ্র সংগীতের তাল ও ছন্দে উপস্থিত দর্শনার্থীরাও নেচে গেয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানান।
এসময় এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বাঙালি জাতির ঐহিত্যই হলো অগ্রগতি, পরম্পরা। বাঙালি জাতির ঐতিহ্য হলো নিজের অস্তিত্ব টিকেয়ে রেখে অন্যকে গ্রহণ করা। সেদিক থেকে বাংলা নববর্ষ আমাদের জানান দেয়, বহুকাল ধরে যে সংস্কৃতি সেই সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে বাঙালি জাতির অনেক দায়বদ্ধতা রয়েছে।
তিনি বলেন, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির গড্ডালিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে বিশ্বায়নের দরুণ আমাদের সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার যে সুযোগ আমাদের এসেছে সেটি আমরা যথাযথভাবে করতে পারি। এরই মধ্যে আমাদের মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেসকো থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু এটিই আমাদের শ্লাঘার বিষয় নয়। আমাদের সংস্কৃতির নানা অনুষঙ্গ আন্তর্জাতিকভাবে এখনো তুলে ধরতে পারি, এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।
তিনি আরও বলেন, বাংলা নববর্ষ বহু পুরনো। এর ধারাবাহিকতা আজকের নয়। বাঙালি যে বহু আগের জাতি, বাঙালি যে ভূঁইফোড় নয়, বাঙালি যে দুই-চারশ বছর আগের জাতিমাত্র নয়, তার প্রমাণ আমাদের যে সংস্কৃতিক উপাদান বর্ষপঞ্জিকা, সেটি দেখলেই বুঝতে পারি। সুদীর্ঘকাল ধরে এই বাঙালি জাতি এই সবুজ বদ্বীপে প্রীতি, সম্প্রীতি, সৌভ্রাতৃত্বের মধ্য দিয়ে বসবাস করে আসছে।
সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হয় বহুল কাঙ্ক্ষিত মঙ্গল শোভাযাত্রা। উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। শোভাযাত্রাটি ভিসি বাংলোর সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ভিসি বাংলোর সামনে গিয়েই শেষ হয়।
বৈশাখী সাজে এই শোভাযাত্রায় সামনে-পেছনে বাদ্যের তালে তালে চলে নৃত্য, হাতে হাতে ছিল বাহারি মুখোশ। পুষ্পাকৃতির চরকি, টেপা পুতুল আর পাখির শিল্পকাঠামো শোভাযাত্রাকে দেয় বাঙালির চিরায়ত আবহ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আহমেদুল বারী, রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর, প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান, পরিচালক (ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা) তপন কুমার সরকার, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. শেখ সুজন আলী, সাধারণ সম্পাদক তুহিনুর রহমান, উদযাপন কমিটির সভাপতি ড. এমদাদুর রাশেদ সুখন, সদস্য সচিব ড. সিদ্ধার্থ দে, কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি প্রকৌশলী জোবায়ের হোসেন, সাধারণ সম্পাদক রামিম আল করিমসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
রমজান মাস হওয়ায় এবারের বৈশাখী উৎসব সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংক্ষিপ্ত আকারে পালন করে দুপুরে বৈশাখী পালা নাটক ও উদিচীর পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ করা হয়।
এদিকে, বুধবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে গাহি সাম্যের গান মঞ্চের সামনে ফানুস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর ফানুস উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন।
সারাবাংলা/টিআর
কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় জাককানইবি বঙ্গাব্দ ১৪২৯ মঙ্গল শোভাযাত্রা