‘স্বাধীনতার গানে নববর্ষ বরণ’— এমন শিরোনামে ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীর তিতুমীর সরকারি কলেজের নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজন করা মঙ্গল শোভাযাত্রার এক ভিডিও। ভিডিওতে শোভাযাত্রায় গাইতে শোনা গেছে ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে…’ গানটি। তবে তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোসা. তালাত সুলতানা বলছেন, অনেক বড় ভিডিওর নির্দিষ্ট কয়েক সেকেন্ড কেটে বিকৃতভাবে প্রচার করা হচ্ছে। ক্যাম্পাসে মঙ্গল শোভাযাত্রায় বৈশাখের গান, দেশের গানসহ সব গানই গাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) সকালে বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ বরণে মঙ্গল শোভাযাত্রায় আয়োজন করে সরকারি তিতুমীর কলেজ। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এই যৌথ শোভাযাত্রা ছিল উৎসবমুখর। নানা ধরনের ব্যানার-ফেস্টুন হাতে আনন্দের আমেজে দেখা গেছে সবার মধ্যে। মঙ্গল শোভাযাত্রায় খালি গলায় বৈশাখের গান, দেশের গানসহ বিভিন্ন গানই গেয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এর মধ্যেই শোভাযাত্রায় কয়েকজন গেয়ে ওঠেন ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা’ গানটি। ঠিক ওই সময়কার ১৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আলাদা করে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তাতেই ক্যাপশন দেওয়া হয়— ‘স্বাধীনতার গানে নববর্ষ বরণ’।
অধ্যক্ষ তালাত সুলতানা মনে করছেন, এতে তথ্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। সরাবাংলার প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “নববর্ষে আজ পুরো ক্যাম্পাসকেই আমরা সুন্দরভাবে সাজিয়েছি। নববর্ষে বিভিন্ন আয়োজন ছিল আমাদের। মঙ্গল শোভাযাত্রায় আমরা সব গানই গেয়েছি। আমি ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ গান দিয়ে শুরু করি। ‘আইলো আইলো আইলো রে রঙ্গে ভরা বৈশাখ আবার আইলো রে’সহ কয়েকটি গান গেয়েছি। এখানে যারা ছিলাম, কেউই তো প্রফেশনাল শিল্পী নই। একেকজন বা একেক দল একেকটি গান ধরছিল। এর মধ্যে একটি গানের ভিডিও’র সামান্য একটু অংশ কেটে নিয়ে প্রচার করাটা অসঙ্গত। এটি মোটেও সমীচীন নয় বলে মনে করি।”
তিতুমীর অধ্যক্ষ বলেন, ‘নববর্ষ উপলক্ষে কলেজে বিভিন্ন আয়োজন ছিল আমাদের। মঙ্গল শোভাযাত্রায় অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্তভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন। মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে সবাইকে ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতেও জোর দেওয়া হয়েছে। সেসব কিন্তু প্রচার করা হচ্ছে না। কয়েক সেকেন্ডের একটি ভিডিও কেটে ক্যাপশন এমনভাবে দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে যেন সবার মধ্যে একটি তথ্য ভুলভাবে প্রচার হয়।’
শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া তিতুমীর কলেজের অধ্যাপক মালেকা আক্তারও বলছেন একই কথা। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি যেভাবে প্রচার করা হচ্ছে, প্রকৃত ঘটনা আদৌ তেমন না। আমরা তো কেউই সেভাবে পুরো গান জানি না। একেক জন একেক গান গাচ্ছিল। এর মধ্যে কেউ স্বাধীনতার গানও গেয়েছে।’
‘নববর্ষের দিনে বৈশাখের গানের মধ্যে যদি স্বাধীনতার গানও গাওয়া হয়, সেটি কি অপরাধ? আমি তেমনটি মনে করছি না। অথচ প্রচার করা হচ্ছে যে আমরা শুধু স্বাধীনতার সেই গান গেয়েই বর্ষবরণ করেছি। আমি এর নিন্দা জানাচ্ছি,’— একটু ক্ষোভের সঙ্গেই বলেন অধ্যাপক মালেকা।
ঘটনাকে বিকৃতভাবে প্রচার না করতে এবং সবাইকে প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য পুরো ভিডিও দেখার আহ্বান জানিয়েছেন তিতুমীর কলেজের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।