তৃতীয়বার সংশোধিত হচ্ছে এসপিএম প্রকল্প
১৫ এপ্রিল ২০২২ ০৮:৪৬
ঢাকা: করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির ধাক্কা লেগেছে ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপ লাইন (তৃতীয় সংশোধীত) প্রকল্পে। এ জন্য প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এ পর্যায়ে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে ৫৫৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। একইসঙ্গে মেয়াদ বাড়ছে একবছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বৈদেশিক যাতায়াতের নিষেধাজ্ঞার কারণে ঠিকাদাররা যথাসময়ে কাজ করতে না পারা, প্রকল্পের মালামাল সরবরাহে বিলম্ব এবংঅফিস ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ থাকায় প্রকল্পের প্রকিউরমেন্ট সংক্রান্ত কাজ আগে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।
সূত্র জানায়, মূল ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৯৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনের ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৫ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনের মাধ্যমে আরও ব্যয় বাড়িয়ে ৬ হাজার ৫৬৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এখন তৃতীয় সংশোধনের মাধ্যমে ব্যয় আর ও বাড়িয়ে ৭ হাজার ১২৪ কোটি ৬২ লাখ ৪৬ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৫ সালের নভেম্বর হতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। নির্ধারিত কাজ শেষ না হওয়ায় এখন ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ করা হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা । ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) আওতাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এবং পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যসামগ্রী উৎপাদনে নিয়োজিত দেশের একমাত্র সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে দেশের জ্বালানি তেলের চাহিদার ২০ শতাংশ ইআরএল পূরণ করে এবং বাকি ৮০ শতাংশ জ্বালানি তেল আমদানি করার প্রয়োজন হয়। দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণের জন্য আমদানি করা ক্রুড অয়েল এবং ফিনিশড প্রোডাক্ট সহজে নিরাপদে স্বল্প খরচে ও স্বল্প সময়ে খালাস করার জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে লাইটারেজ অপারেশনের প্রয়োজন হবে না তাই এ খাতে পরিবহন ব্যয় ও অপচয় হ্রাস পাবে, ইআরএলের বাৎসরিক অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াজাতকরণ ক্ষমতা ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টনে উন্নীত হবে এবং বছরে সরকারের প্রায় ৮০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি: বৈশ্বিক কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বৈদেশিক যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞার কারণে ঠিকাদার যথাসময়ে কাজ করতে না পারা, প্রকল্পের মালামাল সরবরাহে বিলম্ব হওয়াসহ অফিস ও ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ থাকায় প্রকল্পের প্রকিউরমেন্ট সংক্রান্ত কাজ আগের নির্ধারিত শিডিউল অনযায়ী করা সম্ভব হয়নি। প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষে টেকিং ওভার সার্টিফিকেট ইস্যু, ঠিকাদারের বিল প্রদান, আয়কর-ভ্যাট ইত্যাদি পরিশোধসহ অন্যান্য কাজ সম্পাদনের জন্য প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদকাল ২০১৫ সালের নভেম্বর হতে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত অর্থাৎ এক বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি: ২০১৫ সালে এসপিএম প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্দান্ত নেওয়ার পরবর্তী সময়ে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় সরকার আরও কিছুর জাতীয় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প এবং সাবমেরিন চলাচলের জন্য বাংলাদেশ নৌ বাহিনী কুতুবদিয়া (নেভি) চ্যানেলে কার্যক্রম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। স্টেকহোল্ডারদের প্রয়োজন অনুসারে প্রকল্পের পাইপলাইন কুতুবদিয়া নেভি) চ্যানেল চার্ট ডেটাম লেভেল (সিডিএল) হতে ১৯ মিটার গভীরে এবং মাতারবাড়ি অ্যাপ্রোচ চ্যানেলে সিডিএল হতে ২২ দশমিক ৫ মিটার নিচে স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যার ফলে প্রকল্পের পাইপলাইন সাগরের তলদেশ হতে কুতুবদিয়া (নেভি) চ্যানেলে ৬ থেকে ৭ মিটার গভীরে এবং মাতারবাড়ী চ্যানেলে ৮ থেকে ৯ মিটার গভীরে স্থাপন করা হয়েছে,যার মূল ডিজাইনে ছিল ১ দশমিক ৫ মিটার। এসব কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বয় করে এই প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে ঠিকাদারকে দিয়ে মূল চুক্তির কর্মপরিধি বহির্ভূত কাজ করায় ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইএলএফ কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ার্স, জার্মানির সঙ্গে সম্পাদিত মূল চুক্তির কর্মপরিধির বাহিরে কুতুবদিয়া চ্যানেল এবং মাতারবাড়ী অ্যাপ্রোচ চ্যানেল অংশ কাজের ডিজাইন রিভিউ ও কাজের তদারকি, সম্পাদিত চুক্তির কর্মপরিধি অতিরিক্ত নতুন কাজ, নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত ডিটেইল ডিজাইন কাজ এবং মূল চুক্তি বহির্ভূত প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ও কন্ট্রাক্ট ম্যানেজমেন্ট কাজ সম্পাদন করায় ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া আইটি, ভ্যাট, ব্যাংক চার্জ, বিভিন্ন ফি এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের মূল্যবৃদ্ধিও কারণে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) ও পাইপলাইন অ্যান্ড মেনিফোল্ড (পিএলএম) স্থাপন, ১৪৬ কিলোমিটার অফশোর পাইপলাইন স্থাপন, ৭৪ কিলোমটার অনশোর পাইপলাইন স্থাপন, মহেশখালী দ্বীপে প্রতিটি ৬০ হাজার ঘনমিটার ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি অপরিশোধিত তেল সংরক্ষণাগার এবং প্রতিটি ৩৬ হাজার ঘনমিটার ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি ডিজেল স্টোরেজ ট্যাংক ফার্ম স্থাপন করা এবং জমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়ন।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, বৈশ্বিক কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বৈদেশিক যাতায়াতে নিষেধের কারণে ঠিকাদাররা কাজ যথাসময়ে কাজ করতে না পারার কারণে আগের নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। তাই এই প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আমদানিকরা ক্রুড অয়েল এবং ফিনিশড প্রোডাক্ট সহজে, নিরাপদে, স্বল্প খরচে ও স্বল্প সময়ে খালাস করা সম্ভব হবে। এছাড়া বিকল্প জ্বালানি তেল সংরক্ষণাগার নির্মাণের ফলে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে।
সারাবাংলা/জেজে/এনএস