জনশক্তি রফতানি বাড়ছে, রেকর্ড রেমিট্যান্সেও
১৭ এপ্রিল ২০২২ ১১:৪৩
ঢাকা: জনশক্তি রফতানিতে গত দুই মাসে যে ভাটার টান চলছিল, তা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। বছরের প্রথম ২ মাসের তুলনায় মার্চে বেশি কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে গেছেন। জনশক্তি রফতানিকারক ও অর্থনীতির গবেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের প্রধান জনশক্তি রফতানির বাজার। করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে এসব দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ায় কাজের লোকের চাহিদা বেড়েছে। বেড়েছে জনশক্তি রফতানিও।
বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে গেছেন ১ লাখ ২০ হাজার ৩১৬ জন বাংলাদেশি কর্মী। এরমধ্যে সৌদি আরবে ৭৮ হাজার ৮৭০ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১২ হাজার ৩৫৭ জন, কুয়েতে ৭২৭ জন, ওমানে ১৪ হাজার ৩৮৯ জন, কাতারে ১৬৩১ জন, লেবাননে ৪৬ জন, জর্ডানে ১৯৯০ জন, সুদানে ২৩ জন, মালয়েশিয়ায় ১২ জন, সিঙ্গাপুরে ৬ হাজার ৬৯৭ জন, সাউথ কোরিয়ায় ৩৫২ জন, লন্ডনে ২৬ জন, ইতালিতে ১১০ জন, জাপানে ৯ জন, ব্রুনাইয়ে ৫ জন, মরিশাসে ২১১ জন, ইরাকে ১১ জন। আর অন্যান্য দেশে ১০৮৩ জন।
গত ৩ মাসে মোট জনশক্তি রফতানি হয়েছে ৩ লাখ ২২ হাজার ৫৮৩ জন। এরমধ্যে জানুয়ারিতে ১ লাখ ৯ হাজার ৬৮৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে গেছেন ৯২ হাজার ৫৬৯ জন। মার্চে গেছেন ১ লাখ ২০ হাজার ৩১৬ জন।
বিএমইটির তথ্য বলছে, ২০২১ সালের প্রথম ৩ মাসে গেছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৮৯৫ জন। গত বছরের তুলনায় এ বছর পৌনে ২ লাখ বেশি কর্মী বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
গত ৩ মাসে সৌদি আরব গেছেন ২ লাখ ৬ হাজার ৫৭ জন। যা মোট জনশক্তি রফতানির ৬৩.৮৮%। ওমানে গেছেন ৪১ হাজার ৬১৭ জন। যা মোট জনশক্তি রফতানির ১২.৯০%। সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন ৩৯ হাজার ৮২৭ জন। যা মোট জনশক্তি রফতানির ১২.৩৫%।
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, নারী জনশক্তি রফতানি হয়েছে ১১ হাজার ২১১ জন। এরমধ্যে সৌদি আরবে গেছেন ৬ হাজার ৬১৭ জন।
এদিকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিটেন্সে যে ধস নেমেছিল তাতেও ফিরেছে গতি। বাংলাদেশ ব্যংকের সবশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্চ মাসে ১৮৬ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। যা ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে ৩৭ কোটি ডলার বা ৩ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা বেশি। ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪৯ কোটি ডলার বা ১২ হাজার ৮৮২কোটি টাকা। আর জানুয়ারিতে এসেছিল ১৭০ কোটি ডলার বা ১৪ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।
সবশেষ সরকার প্রবাসীদের জন্য নগদ প্রণোদনা .৫০ শতাংশ বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করেছে। করোনার সংক্রমণ কমে আসায় বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্য, ভ্রমণ, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ নানা কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে এসব ভূমিকা রাখছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ জানান, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলো মহামারির সংকট কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। যে কারণে বিভিন্ন দেশে কাজের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। কর্মীরা যেতে পারছেন। রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়তে শুরু করেছে। বাংলাদেশের উচিত হবে এই মার্কেট ধরে রাখা।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু হলে জনশক্তি রফতানি আরও বাড়বে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে বেসরকারি জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী জানান, বাংলাদেশ যতগুলো দেশে জনশক্তি রফতানি করে তারমধ্যে অন্যতম বড় শ্রমবাজার ছিল মালয়েশিয়া। যা গত ৩ বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ। খোলার কথা বলেও ৪ মাস পেরিয়ে গেছে। আমরা কর্মী পাঠাতে প্রস্তুত, এখন ওপেন হওয়ার অপেক্ষায়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। সব কিছু গুঁছিয়ে এলেই কর্মীদের আহ্বান করা হবে।
উল্লেখ্য, বিশ্বের ১৬৮টি দেশে জনশক্তি রফতানি করে বাংলাদেশ। ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এসব দেশে ১৩, ৯৫৬, ৭৪৪ জন কর্মী পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
সারাবাংলা/জেআর/এএম