Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জামায়াত প্রশ্নে অনড় বিরোধীজোট, সাড়া মিলছে না বিএনপির জাতীয় ঐক্যে

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৭ এপ্রিল ২০২২ ১৯:৩২

ঢাকা: রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ায় সাড়া মিলছে না। সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ক্ষেত্রে অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারেনি দলটি। প্রাথমিক আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে ঐক্য গড়ার বিষয়। সব দলের শর্ত একটাই— ঐক্য গড়তে হলে জামায়াতকে বাদ দিয়ে আসতে হবে।

এদিকে, বামগণতান্ত্রিক জোট স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে, তারা মানুষ বাঁচানোর আন্দোলনে রাজপথে রয়েছে। কোনো ড্রইং রুমে বসে যুগপৎ আন্দোলনের ইচ্ছা তাদের নেই। তবে জোটের শরিক জোটের অন্যান্যরা চাইছে, আন্দোলনের ইস্যু হবে এক এবং অভিন্ন। রাজপথের ভাষাও হবে এক। তবে নিজ নিজ মঞ্চ থেকে কর্মসূচি পালন করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, বামগণতান্ত্রিক জোটের শরিক দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এসব থেকে একেবারেই আলাদা। তাদের অভিমত, বিএনপি বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে এক টেবিলে বসে কমিউনিস্ট পার্টি আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করবে না। সিপিবি ভাত ও ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে আছে। কারও সঙ্গে গিয়ে কিংবা এক ও অভিন্ন কর্মসূচিতে মাঠে থাকবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, সম্প্রতি বামগণতান্ত্রিক জোটের বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি জোট নেতারা। অপরদিকে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ (রব), নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণফেরাম (মন্টু), গণসংহতি, রাষ্ট্রসংস্কারসহ এ ধরনের আরও ছোট ছোট রাজনৈতিক দল আলাদা একটি লিবারেল জোট করার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে এসব দলের নেতারা আন্দোলনের বিষয় নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা করেছে। রমজান শেষে ইদ পুনর্মিলনী করে জোটের আত্মপ্রকাশের চিন্তা-ভাবনা তাদের।

বিজ্ঞাপন

এই দলগুলোর অধিকাংশই বিএনপির সঙ্গে জোট করতে রাজি নয়। এমনকি বিএনপির পক্ষ থেকে এসব দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করার শর্ত জুড়ে দিয়েছে। তবে বিএনপির লক্ষ্য— একটি বড় জোট গঠন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন করা। এ জন্য সরকার পতন বা এক দফা দাবি নিয়ে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় রাজপথের প্রধান এই বিরোধীদলটি।

এসব বিষয় নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশারফ হোসেন সম্প্রতি সারাবাংলাকে বলেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার জন্য আমরা জাতীয় ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছি। এ লক্ষ্যে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।’

তবে বিএনপির অপর এক নেতা নাম গোপন রাখার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য গড়ার জন্য চেষ্টা চলছে। তবে এ নিয়ে যাদের সঙ্গেই কথা হচ্ছে- তারা স্পষ্ট বলে দিচ্ছেন, জামায়াত ইসলামীকে ছেড়ে দিতে হবে। আবার কেউ কেউ বলছেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য হতে পারে না। কারণ, গত নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে মনোনয়ন দেওয়ার কথা থাকলেও তারেক রহমানের জন্য তা হয়নি।’

গত নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে গণফোরাম থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত মোকাব্বির খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচিত হয়েছি ঠিকই, কিন্তু আমি গণফোরামের দলীয় মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেছি। জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। আগামী নির্বাচনে জোটগত না কি এককভাবে নির্বাচন করব, তা সময় বলে দেবে। তবে বিএনপি বা তারেকের নেতৃত্বে গণফোরামের কেউ নির্বাচন করবে না।’

জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি বিএনপি করি না। জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছি আমি। জামায়াত ছাড়া যাদের সঙ্গে মেশা যাবে তাদের সঙ্গেই ঐক্য হবে। জাতীয় ঐক্যের বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।’

এ বিষয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে কোনো জোট বা মোর্চা গঠনে যাব না। আমরা বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কথা বলে আসছি। সেটি যুগপৎ হতে পারে। এ কথা আমি দলীয়ভাবে আগে থেকেই বলে আসছি।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিপিবি মানুষ বাঁচানোর জন্য ভাত ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে রাজপথে আছে। আমরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে তৃতীয় বিকল্প শক্তি গড়ে তুলব।’ আর বাম জোটের সাবেক সমন্বয়ক আব্দুল্লা আল কাফি রতন বলেন, ‘বামগণতান্ত্রিক জোট কারও সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যাবে না। ফয়সালা হবে রাজপথে।’

তবে গণফেরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যের কথা আমরাও বলছি। বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যে যাব। তবে শর্ত হলো- স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে বাদ দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘জতীয় ঐক্য নিয়ে আলোচনা কেবল শুরু হয়েছে। অন্যান্য দলগুলোও আসবে। তবে এখনও বিষয়টি খুব একটা এগোয়নি।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম

গণফোরাম জাতীয় ঐক্য জামায়াত বামগণতান্ত্রিক জোট বিএনপি বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি বিরোধী জোট সিপিবি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর