বন্যার আগেই হরিরামপুরে পদ্মায় ভাঙন
১৮ এপ্রিল ২০২২ ০৮:৪৫
মানিকগঞ্জ: বর্ষা কিংবা বন্যার পানি আসতে না আসতেই ভাঙন শুরু হয়েছে মানিকগঞ্জের পদ্মা নদী বেষ্ঠিত হরিরামপুর উপজেলায়। ইতোমধ্যে উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী কাঞ্চনপুর, গোপীনাথপুর, রামকৃষ্ণপুর, বয়ড়া, হারুকান্দি ও ধূলশুড়া ইউনিয়নে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। আতঙ্কে দিন কাটছে পদ্মা তীরবর্তী হাজারো পরিবারের।
জানা গেছে, উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কোটকান্দি পশ্চিমপাড়া হতে গৌরবিরদিয়া এলাকায় প্রায় তিন মাস আগে থেকেই পদ্মার ভাঙন শুরু হয়েছে। ছোট ছোট পদ্মার ঢেউয়ের আঘাতে এই এলাকার প্রায় আধা কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২০০ ফিট প্রস্থ এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সঙ্গে অনেক গাছপালা ও সমতল ভূমি নদী গর্ভে চলে গেছে। নদী তীরবর্তী এলাকায় হুমকির মুখে রয়েছে বসতবাড়ি। গোপীনাথপুর ইউনিয়নের উজানপাড়া এলাকায় জিও ব্যাগসহ নদীতে বিলীন হতে শুরু করেছে সমতল ভূমি, ফসলি জমি ও গাছপালা।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর, বকচর, আলগীচর, জগনাথপুর ও ভাওয়ারডাঙ্গী, বয়ড়া ইউনিয়নের আন্ধারমানিক, খালপাড় বয়ড়া, দাসকান্দি বয়ড়া এবং হারুকান্দি ইউনিয়নের খৈজনগর ও ধূলশুড়া ইউনিয়নের আলিয়ানগর এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে বলেও জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গতবছর কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কুশিয়ারচর কালিতলার উজান হতে কোটকান্দি পশ্চিমপাড়া পর্যন্ত এবং গোপীনাথপুর উজানপাড়া এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলানো হয়। প্রায় দুই মাস ধরে এ এলাকায় ভাঙনের সৃষ্টি হলে জিও ব্যাগসহ নদীর পাড় ধসে যেতে দেখা যায়। যেসব এলাকায় জিওব্যাগ ফেলা হয়নি ওই এলাকার ভাঙন চিত্র অনেকটাই তীব্র আকার দেখা গেছে।
কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কুশিয়ারচর কালিতলা ও কোটকান্দি পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, গতবছর জিও ব্যাগের কাজটি আশানুরূপ ভালো না হওয়া, অপরিকল্পিত ড্রেজার এবং চলতি বছরে জোয়ারের পানি আসতে না আসতেই ছোট ছোট ঢেউয়ের আঘাতেই জিও ব্যাগসহ নদীর পাড় ধসে পড়ছে।
তারা আরও জানান, শুকনো মৌসুমে নদীর ভেতর থেকে জিও ব্যাগ ফেললে ভাঙন অনেকটাই রোধ হতো। কিন্তু জিও ব্যাগ ফেলে হয় শুধু মাত্র বর্ষাকালে। ভাঙন শুরু হলে জিও ব্যাগ ফেলায় তা তেমন কোনো কাজে আসে না। চাহিদার তুলনায় জিও ব্যাগও কম ফেলা হয়েছে বলে দাবি করেন এলাকাবাসী।
কোটকান্দি পশ্চিমপাড়া এলাকার ৮৫ বছরের বৃদ্ধ হাশেম মল্লিক জানান, পঞ্চাশ দশক থেকে এ পর্যন্ত চার বার বাড়ি ভাঙছে আমার। ভিটাবাড়ি জমিজমা সহ প্রায় ১০০ ফাহির ওপরে এই গাঙ্গে চইল্যে গ্যাছে। অহন এই ১৩ শতাংশের ওপর এই বাড়িই আমার শেষ সম্বল। যেভাবে ভাঙন লাগছে তাতে এও এবার আর থাকব না।
নদী তীরবর্তীতে বসবাসকারী ওসমান সরদারের স্ত্রী ছালেহা বেগম নদী ভাঙনের দৃশ্য দেখিয়ে বলেন, এই দেহেন জিও ব্যাগসহ নদীরপাড় কিভাবে ভাঙতেছে। পনের দিন আগেও গাং ওই খানে আছিল। আইজ দেহেন কোনে আইছে। সরকার যদি তাড়াতাড়ি এর ব্যবস্থা না নেয়, তাইলে এবার বর্ষার আগেই আমার এই বাড়ি থাকবো না।
কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী বনি ইসলাম রূপক জানান, বেশ কিছু দিন ধরেই আমার ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। যে স্থানে জিও ব্যাগ ফেলানো হয়েছে, সে এলাকায়ও ভাঙছে। আসলে এই ভাঙনরোধে স্থায়ী বেড়িবাঁধ প্রয়োজন। তাই যত দ্রত সম্ভব স্থায়ী একটা ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে এবারও অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, গত প্রায় এক সপ্তাহ আগে জেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে নদী ভাঙনের বিষয়টি আমি উত্থাপন করেছি। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাইন উদ্দিন বলেন, গতবছর বাজেট স্বল্পতার কারণে কাঞ্চনপুর ও গোপীনাথপুরে যে পরিমাণ ডাম্পিং প্রয়োজন ছিল, তা করা সম্ভব হয়নি। তারপরেও যতটুকু হয়েছে, তাতে কিন্তু ভাঙনরোধে অনেকটাই কাজে এসেছে।
সারাবাংলা/এএম