সড়ক থেকে চুরির রড প্লাস্টিকের দামে যাচ্ছে ভাঙারির দোকানে
১৮ এপ্রিল ২০২২ ১০:৪৩
কক্সবাজারে শহরজুড়ে চলছে ৫৫৮ কোটি টাকার সড়ক উন্নয়ন কাজ। এতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে লোহার রড। এই সব লোহার রড চুরি করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে শহরের চোর সিন্ডিকেট। মাদকসেবী, টোকাই ও পেশাদার চোরদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এই সিন্ডিকেট। আর এসব চুরির মালামাল অসাধু ভাঙারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রামে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উন্নয়ন।
শাহজাহান নামে এক ভাঙারি দোকানদার বলেন, কমবেশি সব ভাঙারি দোকানেই ব্যবসা ভালো হচ্ছে। তারা এখন প্লাস্টিকের দামে লোহার রড কিনছে। কম দামে চোরা মাল কিনে পাঠাচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রামে।
প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কক্সবাজার পৌরসভা ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে শহরের প্রধান সড়কসহ ২৯টি উপ সড়কের ৩২ কিলোমিটারে চলছে উন্নয়নের কাজ। দুই সংস্থার ৫৫৮ কোটি টাকার এই কাজের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে লোহার ব্যবহার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশিরভাগ চুরি হয় ভোররাতে। চুরির মালামাল বিক্রি করা হয় শহরের গাড়ির মাঠ, কলাতলী, কস্তুরাঘাটসহ বিভিন্ন এলাকার ভাঙারি দোকানে। এলাকার ২০টি ভাঙারি দোকানের মধ্যে অন্তত ১০/১২ টি দোকানে চুরির মাল কেনা হয়। ভাঙারি দোকানের বাইরে ফেরিওয়ালারাও এসব মালামাল কিনে নেয় সস্তায়। যারা ভাঙারি দোকানদারদের সঙ্গে যুক্ত। তাদের সংখ্যা ১৫/২০ জনের মতো। এই অপকর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে কিছু পাহারাদার। যারা সরাসরি মাল চুরি না করলেও কমিশনের জন্য চোরদের সহযোগিতা করে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এলাকার জাহাঙ্গীর প্রকাশ কিরণ মালা, ইসমাইল, খালেক প্রকাশ, আবদুল্লাহ্, খাইরুল আমিন প্রকাশ বতল্লা, রণি প্রকাশ নাক্কাড়া, মোহাম্মদ হাসান, ফারুক প্রকাশ ঈদগাঁহ ওয়ালা ফারুক, শুক্কুর, সালমান শাহ্, ফুফন, ফারুক প্রকাশ, সাইফুল, জনি, আবদুল্লাহ, হৃদয়, বাইতুল্লা, সাগর, শেফায়েত, নাছির, কালু, রামছা ও সাজিদের নাম রয়েছে চোর সিন্ডিকেটে।
সবশেষ শনিবার (১৬ এপ্রিল) সকালে ২০ কেজি রডসহ হাতেনাতে ধরা পড়া খালেক প্রকাশ জানান, মাদকের টাকার জন্য তিনি এসব রড বিক্রি করছেন। এছাড়া সামনে ঈদ, তার জন্যেও প্রয়োজন টাকার।
তিনি আরও জানান, বাসা বাড়িতে চুরি করা লোকজন এখন সড়কের রড় চুরি করছে। পাহারাদারদের ফাঁকি দেওয়া কোনো ব্যাপার না।
জানা গেছে, চুরি করার সবচেয়ে সহজ উপায় পাহারাদারদের ম্যানেজ করা। তখন আর ঝুঁকি থাকে না। একভাগ পাহারদারদের দিলেই হয়। এমনকি সরাসরি চুরিতেও অংশ নিচ্ছেন পাহারাদাররা। ৩ ফেরুয়ারি ভোরে ২ পাহারাদার বস্তাভর্তি রড নিয়ে ভাঙারির দোকানে যাচ্ছিলেন। এ সময় স্থানীয়রা তাদের হাতেনাতে আটক করে। পরে জনসম্মুখে মাফ চাইলে ছেড়ে দেওয়া হয়।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানা যায়, এই চুরির ব্যাপারে অবগত থাকার পরেও সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে চুপ রয়েছেন ভাঙারি দোকান মালিক সমিতির নেতারা।
এ ব্যাপারে ভাঙারি দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ফরিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চুরির বিষয়টি তিনি অবগত। তবে কারা এসবের সঙ্গে জড়িত তা জানেন না।
কক্সবাজার পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার টিটন দাশ জানান, শহরে পৌরসভার পক্ষ থেকে ৩০০ কোটি টাকার কাজ চলছে। ২৯টি সড়কের ৩২ কিলোমিটার এলাকায় এসব কাজ চলছে। এখান থেকে প্রতিনিয়ত রডসহ কাজের সরঞ্জাম চুরি হচ্ছে। এরইমধ্যে ৮-১০ জন ধরা পড়েছে। পরে মোসলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে.কর্নেল (অবঃ) ফোরকান আহমদ জানান, চুরির বিষয়টি তিনি শুনেছেন। যারা এসব মালামাল চুরি করছেন এবং যারা এসব মালামাল চুরিতে সহযোগিতা করছেন, সবার বিরুদ্ধেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সারাবাংলা/এএম