Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বীর নিবাসের বরাদ্দ প্রত্যাহারের দাবি অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২০ এপ্রিল ২০২২ ১১:২৩

২ হাজার টাকার বিনিময়ে এই বীর নিবাস ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ, ছবি: সারাবাংলা

নড়াইল: জেলায় অনিয়ম ও নীতিমালা বহির্ভূত বরাদ্দের প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার বীর নিবাসের বরাদ্দ প্রত্যাহার করার দাবি উঠেছে। এমন কি বরাদ্দ পাওয়া বীর নিবাস ভাড়া দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাই স্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের নামে বরাদ্ধ বাতিল করে অস্বচ্ছল ও গরীব মুক্তিযোদ্ধাদের নামে বরাদ্দের দাবি করেছেন সদর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এস এ বাকী। অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে হয়ে তিনি এই দাবি করেন।

বিজ্ঞাপন

নড়াইল সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সর্বশেষ কমিটির কমান্ডার এস. এ বাকী সম্প্রতি লিখিতভাবে সদর উপজেলা বীর নিবাস বরাদ্দ কমিটির সভাপতির কাছে এই দাবির কথা জানান।

ওই আবেদনে বলা হয়, সরকারের দ্বিতীয় পর্যায়ে সদর উপজেলায় ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বীর নিবাস বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে তার নামও রয়েছে। কিন্তু কয়েকজন অসহায় ও গরীব মুক্তিযোদ্ধা পরিবার রয়েছেন, যারা আবেদন করেও ঘর (বীর নিবাস) পাননি। অথচ অবস্থা সম্পন্ন কয়েকজনকে বীর নিবাস দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরদিন সদরের বাঁশগ্রামের আছাদুজ্জামান নামে এক মুক্তিযোদ্ধা নড়াইল শহরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ফারুক-রশিদের রাজনৈতিক দল ফ্রিডম পার্টি থেকে ২ বার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। এমন বিতর্কিত ব্যক্তির নামে বীর নিবাস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে নিজ নামে বরাদ্দপ্রাপ্ত বীর নিবাস প্রত্যাহার করে অনিয়মতান্ত্রিক বরাদ্দ বাতিল করে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের নামে বরাদ্দ প্রদানের দাবি জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এ বাকী।

জানা গেছে, বর্তমান সরকার নড়াইল সদর উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ১২টি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০টি মোট ৪২টি বীর নিবাসের বরাদ্দ দিয়েছে। পর্যায়ক্রমে অস্বচ্ছল ও গরীব মুক্তিযোদ্ধাদের বরাদ্দ দিয়ে তাদের নিজস্ব জমির ওপর এসব বীর নিবাস নির্মাণ করা হবে। প্রত্যেকটি বাড়িতে ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩টি কক্ষ, ২টি বাথরুম, ১টি রান্না ঘর ও ১টি বারান্দা থাকবে।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কার্যালয়ের সূত্রে মতে, সদরের সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জামির হোসেন মিলু, একই ইউনিয়নের তারাপুর গ্রামের নাজমুল হোসেন টুকু, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বর্তমান নড়াইল শহরের স্থায়ী বাসিন্দা ও বীর নিবাস বরাদ্দ কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এস. এম মতিন এবং মাইজপাড়া ইউনিয়নের রামেশ্বরপুর গ্রামের অবস্থাসম্পন্ন ইকলাস মোল্যাসহ আরও অনেক স্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের নামে বীর নিবাসের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ এসব এলাকার অনেক অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ও মৃত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার আবেদন করেও অজ্ঞাত কারণে তারা বরাদ্দ পাননি। তাদের মধ্যে সদরের সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের চুনখোলা গ্রামের হাফিজুল হক, মাইজপাড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা বাহারুল ইসলাম, ভদ্রবিলা ইউনিয়নের রামসিধি গ্রামের মমিনুদ্দীন সিকদার আবেদন করেও বীর নিবাসের বরাদ্দ পাননি।

বিজ্ঞাপন

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের সিমাখালী এলাকায় উজির আহমেদ খান নামে এক মুক্তিযোদ্ধা প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ পাওয়া বীর নিবাসে নিজে বসবাস না করে ২ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছেন। এ বিষয়ে বীর নিবাসের মালিক উজির আহমেদ খানের স্ত্রী ফোনে বলেন, ওই বাড়িতে যাই-আসি, থাকি। ওই বাড়ির পাশে আমার এক আত্মীয় বাড়ি নির্মাণ করবে। সেজন্য ওখানে সাময়িকভাবে রয়েছে, কোনো ভাড়ার বিনিময়ে নয়। তবে গত রোববার (১৭ এপ্রিল) সকালে এ বাড়িতে গেলে বাড়ির বয়স্ক এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমি চাকরি করি। এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না।’

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এস. এ বাকি বলেন, বীর নিবাস বরাদ্দ কমিটির সদস্য থাকেন ছয়জন। এর মধ্যে সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সদস্য সচিব উপজেলা সমাজসেবা অফিসার, নড়াইল-১ ও ২ আসনের দু’এমপির দু’জন মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের একজন মুক্তিযোদ্ধা প্রতিধিধি এবং উপজেলা প্রকৌশলী। এই কমিটি অসহায় ও গরীব মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বাদ রেখে কিভাবে অবস্থাসম্পন্ন এবং বিতর্কিত ব্যক্তিদের নামে বীর নিবাসের বরাদ্দ প্রদান করেন তা বোধগম্য নয়।

তিনি আরও বলেন, বীর নিবাস বরাদ্দ পাওয়া অ্যাডভোকেট এস. এম মতিন নড়াইল পৌরসভার সিটি কলেজ রোড ঠিকানায় গেজেটভুক্ত (বেসামরিক গেজেট নং-৯০) এবং স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তার একটি পাকা দালানবাড়িও আছে। কিন্তু সদরের মির্জাপুর গ্রামের ঠিকানায় তার নামে কিভাবে বীর নিবাস বরাদ্দ করা হলো?- এ প্রশ্ন শুধু আমার নয়, সকল মুক্তিযোদ্ধাদের। ২০১৪ সালের পর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন না হওয়ায় এসব অনিয়ম শুরু হয়েছে।

এ বিষয়ে বীর নিবাস বরাদ্দ কমিটির সদস্য ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামানের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে আমার তার নাম বাদ রাখি। এরপরও তার নামে বরাদ্দ এসেছিল। পরবর্তীতে বিষয়টি জানার পর চূড়ান্তভাবে তার নাম বাদ দিয়ে হাসান ইমাম নামে এক গরীব মুক্তিযোদ্ধার নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। মোটামুটি নিরপেক্ষভাবে বীর নিবাস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, সদরে আরও ৫০টি বীর নিবাস হবে। পর্যায়ক্রমে সমস্ত মুক্তিযোদ্ধা এই বীরনিবাস বরাদ্দ পাবেন। তবে বীর নিবাস ভাড়া দেওয়া কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানান তিনি। কারণ বীর নিবাসে শুধু মুক্তিযোদ্ধার পরিবারই বসবাস করবেন। এসব ঘর ভাড়া দেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ বলেও জানান তিনি।

তবে কমিটির অপর সদস্য বীর নিবাস বরাদ্দপ্রাপ্ত অ্যাডভোকেট এস. এম মতিন বলেন, ‘আমার নামে বীর নিবাস বরাদ্দে আমি আপত্তি করেছিলাম। কিন্তু কমিটির সদস্য ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক বললেন ওটা আমি দেখব, আপনি সই করেন। তাই আমি সই করেছি।’

বীর নিবাস বরাদ্দ কমিটির সভাপতি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পাবার পর কমিটির সদস্যদের নিয়ে মিটিং করে একটি প্রতিবেদন দিয়েছি।

সারাবাংলা/এনএস

নড়াইল বীর নিবাস

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর