‘ঢাকায় বসবাসকারীরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক’
২০ এপ্রিল ২০২২ ২০:২৫
ঢাকা: নদী, পানি ও বায়ুমান অনুযায়ী রাজধানী ঢাকার বাসিন্দারা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বসবাস করছেন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মাদ গোলাম সারোয়ার। তিনি বলেন, একটি মহানগরের বাসিন্দাদের যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া প্রয়োজন, তার কিছুই আমরা ঢাকাবাসী পাই না। এখানকার নদীর পরিস্থিতি এবং পানি ও বায়ুর যে মান, দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকদের জন্য সেগুলো প্রযোজ্য হতে পারে।
আদালতের রায় অনুযায়ী নদী দূষণ রোধে শক্তিশালী নদী কমিশনের প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক এক সংলাপে তিনি এ কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে নদী রক্ষায় যে বিষয়গুলো এসেছে, তা জনস্বার্থে করা রিট থেকে এসেছে। তাই নদী রক্ষার সঙ্গে জড়িত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।
বুধবার (২০ এপ্রিল) ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘আদালতের রায় মেনে নদী দূষণ রোধে শক্তিশালী নদী কমিশনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক এই নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
রাজধানী ঢাকাকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করে একটি বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ইউএসএআইডি, এফসিডিও ও কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ এবং স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রকে (ক্যাপস) সঙ্গে নিয়ে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়ামের দূষণবিরোধী নাগরিক প্রচেষ্টা প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই সংলাপটি অনুষ্ঠিত হয়।
সংলাপে পানি ও নদী দূষণের ওপর আদালতের নির্দেশনা, নীতি ও আইন বিশ্লেষণপূর্বক মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মাদ গোলাম সারোয়ার। তিনি বলেন, ২০০৯ সালের হাইকোটের নির্দেশ অনুযায়ী ২০১৩ সালে নদী রক্ষা কমিশন গঠিত হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে নদী রক্ষা কমিশন নদী রক্ষায় কাজ করতে পারছে না। নদী রক্ষার জন্য আদালত সমন্বয়হীনতাকে খুবই গুরুত্ব দিয়েছে। এর জন্য প্রয়োজন সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ও নদী রক্ষার সঙ্গে যুক্ত সরকারি সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তরিকতা।
সংলাপে শরীফ জামিল বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় আনুযায়ী প্রস্তুত করা অধিকতর শক্তিশালী নদী কমিশন আইনের খসড়া প্রশংসনীয়। তবে যেকোনো আইনি কাঠামো বাস্তবায়ন নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর। আর যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা তার নেতৃত্বের ওপর নির্ভরশীল। কাজেই বর্তমান সময়ে যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে কার্যকর একটি স্বাধীন নদী কমিশন দেশের নদী রক্ষায় অত্যন্ত বেশি প্রয়োজন।
বাংলাদেশের নদীগুলোর দুরবস্থা নিয়ে মহান সংসদ কেন একদিন আলোচনা করতে পারে না— সংলাপে এমন প্রশ্ন রাখেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। এছাড়াও নদী কমিশন আইনের খসড়া এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পড়ে থাকলেও কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, নদীকে ভালোবাসা মানে মাকে ভালোবাসা। নদীর প্রবাহ ধরে রাখতে নদীর জমি ছেড়ে দিতে হবে এবং তা জনগণের সম্পত্তি ঘোষণা করতে হবে।
সিপিআইয়ের চিফ অব পার্টি মইনুদ্দীন আহমেদ বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি নির্দিষ্ট এলাকা হিসেবে ঢাকা শহরের নদী, পানি, বায়ু ও শব্দ দূষণ নিয়ে কাজ করে ঢাকা স্টেট অব এনভায়রোনমেন্টের বর্তমান চিত্র সবার সামনে প্রকাশ করে কীভাবে সুশাসন ও জবাবদিহিতার জায়গা নিশ্চিত করা যায়, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। সবার প্রচেষ্টায় এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।
রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, নদী রক্ষা কমিশনের কার্যকারিতা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে এর পরিচালনায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের ওপর বেশি নির্ভর করে। নদী রক্ষা কমিশনকে যতই ক্ষমতা দেওয়া হোক না কেন, বাস্তবায়নে তা কতটা কার্যকর সেটাই দেখার বিষয়।
নোঙর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সুমন শামস নদী রক্ষা কমিশনকে জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, কমিশনের উচিত যারা নদী নিয়ে কাজ করে তাদের এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করে নদী রক্ষায় কাজ করা। নদীতে চলাচলকারী জনগণের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে এবং এ নিয়ে একটা দিবস পালন করা যেতে পারে।
৪৮ নদী সমীক্ষা প্রকল্পের টিম লিডার সৈয়দ মো. মতলুবুর রহমান বলেন, নদীকে রক্ষায় যারা কাজ করছে তাদের সহযোগিতা করতে হবে। নদী দেশের সবকিছুর সঙ্গে যুক্ত। নদী রক্ষায় আইন সংশোধন করার পাশাপাশি তা বাস্তবায়ন জরুরি।
সাবেক ইউপি সদস্য জান্নাতি আক্তার রুমা বলেন, কেবল শিক্ষিত মানুষ হলে চলে না, নদীগুলোকে রক্ষা করার জন্য সুশিক্ষিত মানুষ দরকার। আমাদের পরিবেশ আগে যেমন ছিল, আমরা তেমন নদী আর পরিবেশ ফিরে চাই।
সবশেষে ধন্যবাদ জানান কনসোর্টিয়াম সদস্য, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিলের সভাপতিত্বে সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ মনির হোসেন চৌধুরী, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের সভাপতি এম এস সিদ্দিকী, ঢাকা ওয়াসার ঢাকা ল্যাবরেটরির পরিচালক ড. আলমগীর হোসেন, রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ, দুঃস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. রাকিবুল ইসলাম, বারসিকের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ফেরদৌস আহমেদ, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. কামরুজ্জামান এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের পরিবেশ সাংবাদিক ও স্থানীয় কমিউনিটিভিত্তিক সংগঠনের নেতারা।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর