‘সামনে আরও অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে’
২১ এপ্রিল ২০২২ ১৪:৩২
ঢাকা: প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন উন্নত-সুন্দর জীবন পায় তা নিশ্চিতের লক্ষ্যেই আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের সামনে আরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য আমরা স্থির করেছি।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক সমাপ্ত চারটি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ও নরসিংদী ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা প্রান্তে যুক্ত ছিলেন।
আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা এদেশ স্বাধীন করেছেন। দারিদ্র বিমোচন, মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আমরা আমাদের লক্ষ্য স্থির করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। আর ডেল্টা প্লান ২১০০ আমরা প্রণয়ন করেছি। যার ফলে বাংলাদেশে জলবায়ু অভিঘাত থেকে রক্ষা পাবে এবং উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রেখে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন উন্নত সুন্দর জীবন পায় তা নিশ্চিত করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৯১ মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। করোনাভাইরাস সারাবিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি করেছে, খাদ্যের অভাব সৃষ্টি করেছে। তবে বাংলাদেশে আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে অর্থনীতির গতিকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। ফলে করোনার সময় আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আমাদের প্রবৃদ্ধি অর্জনটা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।’
দেশব্যাপী পরিবেশবান্ধব শিল্প প্রসারের উদ্যোগের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষা করাটাই সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জলবায়ু ঝুঁকির মধ্যে আমাদের বসবাস। শিল্প-কারখানাগুলো যাতে পরিবেশবান্ধব হয় তার ব্যবস্থা নিচ্ছি। পরিবেশ-প্রতিবেশের প্রতি লক্ষ্য রেখেই প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ১০০টা শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলছি। আমাদের সামনে আরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্ব আমাদের পালন করতে হবে। ২০১৪ সালে ঘোড়াশাল এবং পলাশ দুটি পুরাতন ইউরিয়া সার কারখানার স্থলে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শক্তিসাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব নতুন সার কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিই। নতুন এই সার কারখানায় দৈনিক ২৮০০ মেট্রিক টন করে বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন দানাদার ইউরিয়া সার উৎপাদন হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে ১০ শতাংশ উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে।’
জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে টানা মেয়াদে ক্ষমতাসীন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা আমাদের বার বার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে বলেই আজ বাংলাদেশের উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি। ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে আমাদের রফতানি আয় ছিল মাত্র ১৫ হাজার ৫৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে তা ৪৫ হাজার ৩৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে ২০২টি দেশ বা অঞ্চলে ৭৬৬টি পণ্য রফতানি করতে পারছি।’
বাংলাদেশ শতভাগ বিদ্যুৎতের আওতায় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২১ সাল আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং ২০২০ সাল জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করেছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল, এ সময় বাংলাদেশের প্রতিটি ঘর আলোকিত করব।’
প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়নটা শুধু রাজধানীভিত্তিক বা শহরভিত্তিক নয়, একেবারে তৃণমূলে গ্রামভিত্তিক যেন হয় সেই উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। যেহেতু প্রযুক্তি পরিবর্তনশীল। তাই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযুক্ত জনশক্তি যাতে গড়ে ওঠে তার ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি। আমরা জাতীয় শিল্পনীতি ২০২১ চূড়ান্ত করেছি।’
মার্শাল ল’র মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা এ দেশের উন্নতি চাইনি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বরং স্বাধীনতাবিরোধী যারা জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করেছে তাদেরকেই ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে তাদের মন-মানসিকতা ছিল স্বাধীনতা বিরোধী। যে কারণে বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্ভব হয়নি। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে সরকার গঠন করার পরপরই আমাদের লক্ষ্য ছিল- এক দিকে বিদেশি বিনিয়োগ নিশ্চিত করব, অপর দিকে দেশের আর্থসামাজিক উন্নতি করব।’
ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্পে জাপান ও চীন সরকার ঋণ সহায়তা দেওয়ায় দেশ দু’টির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাপানের রাষ্ট্রদূতসহ অন্যান্যরা বক্তব্য দেন।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম