।। আশুলিয়া করেসপন্ডেন্ট ।।
সাভার: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্ট, স্ট্যাটিউট ও সিন্ডিকেট পরিচালনা বিধি লঙ্ঘনের প্রতিবাদে সর্বাত্মক ধর্মঘট চলাকালে ছয় শিক্ষককে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে ভিসি অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের অনুসারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। আহত শিক্ষকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশমাইল ট্রান্সপোর্টে এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলার ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আমির হোসেন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্ট, স্ট্যাটিউট ও সিন্ডিকেট পরিচালনা বিধি লঙ্ঘনের প্রতিবাদে সর্বাত্মক ধর্মঘট চলছিল। ধর্মঘটের অংশ হিসেবে ভোরে শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গাড়ি ছাড়তে বাধা দেন। এ সময় প্রক্টর জুলকার নাইনের নেতৃত্বে কয়েকজন শিক্ষক এসে তাদের পিটিয়ে আহত করে। হামলাকারী ভিসিপন্থী এসব শিক্ষকরা হামলার পর তড়িঘড়ি করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন বলে জানান তিনি।
তবে হামলার ঘটনা অস্বীকার করেছেন প্রক্টর জুলকার নাইন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘আমরা কয়েকজন শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ পেয়েছি। তবে ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হবে।’
এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষকরা উপাচার্য প্রফেসর ড. ফারজানা ইসলামের অফিস অবরোধ করে রেখেছেন। ফলে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অফিসে প্রবেশ করতে পারছেন না। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন।
‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারে ধর্মঘট পালনকারী শিক্ষকরা জানান, বর্তমান উপাচার্য গত ১১ এপ্রিল ৯ জন প্রভোস্টকে নিয়ম না মেনে অব্যাহতি দিয়েছেন। যা নজিরবিহীন, শিষ্টাচার বহির্ভূত।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট এর বিধি (১০) অনুযায়ী, শুধু সিন্ডিকেটই প্রভোস্ট নিয়োগ ও অব্যাহতি দিতে পারে, আর কেউ নয়। এই বিধি অনুযায়ী উপাচার্যের প্রভোস্ট নিয়োগ বা অব্যাহতি দেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই।
অব্যাহতি পাওয়া প্রভোস্টদের মধ্যে অধ্যাপক ড. মো. শাহেদুর রশিদ ছিলেন প্রভোস্ট ক্যাটাগরি থেকে নির্বাচিত সিন্ডিকেট সদস্য। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টের বিধি- ২২ (৩) অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ এবং সাকসেসর না আসা পর্যন্ত তিনি সিন্ডিকেট সদস্য থাকবেন। সিন্ডিকেটের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি প্রভোস্ট থাকবেন। কিন্তু উপাচার্য নির্বাচিত সিন্ডিকেট সদস্যকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এর আগেও উপাচার্য নির্বাচিত ডিনকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন। যা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টের পরিপন্থী বলে মনে করছেন তারা।
আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের অভিযোগ, অনির্বাচিত উপাচার্য নতুন করে প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন তারা অবৈধ। তাদের নিয়োগ বৈধ নয়।
আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা আরো জানান, ১৯৮৪ সালে প্রণীত ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কর্মপরিচালনা বিধির ১ ধারায় স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ আছে, ‘সাধারণত প্রতিমাসে সিন্ডিকেটের একটি নিয়মিত সভা অনুষ্ঠিত হবে।’
সিন্ডিকেট কর্মপরিচালনা বিধির ২ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোন সভায় উপাচার্য অনুপস্থিত থাকলে সিন্ডিকেট উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে থেকে একজনকে সভাপতি নির্ধারিত করবেন।’ এই দুই ধারায় নিয়মিত সিন্ডিকেট অনুষ্ঠানের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। অথচ উপাচার্য দীর্ঘদিন ধরে কোনো সিন্ডিকেট ডাকেননি এবং গত ১২ এপ্রিল তারিখে ৩০৩ তম সভা আহ্বান করে সম্মানিত সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দকে চিঠি দিয়ে সিন্ডিকেট সভা স্থগিত করেন। এই সুযোগে অ্যাক্ট ও বিধি লঙ্ঘন করে হলসহ বিভিন্ন পদে সিন্ডিকেট কর্তৃক মনোনীত শিক্ষকদের অব্যাহতি দিয়ে উপাচার্যের অনুসারী শিক্ষকদের পদায়ন ও সিন্ডিকেটে কর্তৃত্ব স্থাপনের অপচেষ্টা করা হয়েছে।
এসব অভিযোগে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট, স্ট্যাটিউট, সিন্ডিকেট পরিচালনা বিধি লঙ্ঘনের প্রতিবাদে সর্বাত্মক ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে ।
সারাবাংলা/আইএ/একে