Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পথে ভোগান্তির শঙ্কা, আগেই ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৩ এপ্রিল ২০২২ ১৪:৩০

মানিকগঞ্জ: সড়ক ও নৌ পথে ভোগান্তির শঙ্কায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কর্মরত মানুষজন তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে ইদের কয়েক দিন বাকি থাকতেই ছুটছে আপন ঠিকানায়। এরকম প্রতি ইদেই পাটুরিয়া ঘাটে বিড়ম্বনার শেষ নেই। বরাবরই ফেরি স্বল্পতা এবং অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে নাকাল থাকে এ ঘাটটি। যার কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীবোঝাই যানবাহনগুলোকে পারাপারের অপেক্ষায় আটকে থাকতে হয় পাটুরিয়া ঘাটে।

বিজ্ঞাপন

শুধু পাটুরিয়া ঘাটেই নয় আরিচা কাজিরহাট নৌ রুটে আরও বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয় ইদে ঘরমুখো মানুষজনকে। সেখানে লক্কর-ঝক্কর মাত্র তিনটি ফেরি দিয়ে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার করায় ভোগান্তির মাত্রা অনেক বেড়েছে। সব মিলিয়ে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা কাজিরহাট নৌ রুটে এবার ইদুল ফিতরের ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তির মাত্রা বেশি হওয়ার আশঙ্কা করছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর অঞ্চলের মানুষ।
এছাড়াও, ঢাকা আরিচা মহাসড়কের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে রাস্তা সংস্কারের কাজ চলছে ঢিমেতালে। যার কারণে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা করছে যাত্রী ও যানবাহন শ্রমিকরা।

বিজ্ঞাপন

দেখা গেছে, আসন্ন ইদুল ফিতরকে সামনে রেখে গেল কয়েকদিন ধরেই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রী মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাট হয়ে যে যার আপনালয় ফিরছেন। ইতোমধ্যে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বেড়েছে উভয় ঘাটে। ইদের আগে দুটি নৌ রুটে ফেরি না বাড়ালে চরম ভোগান্তিতে পড়ার আশঙ্কা করছেন এসব পথে চলাচলকারী যানবাহন শ্রমিক এবং যাত্রীরা।

রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ১৭ জেলার সহজ যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে আরিচা-কাজিরহাট ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ রুট। এ দুইটি নৌ রুটে যাত্রী এবং যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। কিন্তু ফেরি সার্ভিসের কোনো উন্নতি না হওয়ায় উভয়ঘাটে দুর্ভোগ লেগেই থাকছে।

বিআইডব্লিউটিসি আরিচা আঞ্চলিক অফিস সুত্রে জানা গেছে, আরিচা-কাজিরহাট নৌ রুটে দুটি কে-টাইপ (ছোট) ও ১টি ডাম্বসহ মোট তিনটি ফেরি রয়েছে। এসব ফেরি লোড-আনলোডের জন্য আরিচায় দুইটি এবং কাজিরহাটে দুইটি ঘাট রয়েছে। এ নৌ রুটে যানবাহন এবং যাত্রী বাড়লেও ফেরি বাড়নো হয়নি। স্বল্পসংখ্যক ফেরি দিয়ে এ নৌ রুটে ফেরি সার্ভিস ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ঈদকে সামনে রেখে নৌ রুটে কমপক্ষে নতুন চারটি ফেরি দরকার বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ রুটে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এই নৌ রুটে ২৩টি ফেরি ছিল। এর মধ্যে একটি ফেরি চলাচলের একেবারে অনুপযোগী। এছাড়া, ২৭ অক্টোবরে রো রো ফেরি শাহ আলী এবং গত প্রায় এক মাস ধরে রো রো ফেরি গোলাম মওলা এবং ছোট ফেরি শাপলা শালুককে মেরামতের জন্য নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। মেরামত শেষে ঈদের আগে ফেরিগুলো পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ বহরে যুক্ত হবে কি না তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে ফেরি কর্তৃপক্ষের।

বর্তমানে এ নৌ রুটে ১৯টি ফেরির মধ্যে ১১টি রো রো (বড়), পাঁচটি ইউটিলিটি, দুইটি ডাম্ব এবং একটি ছোট ফেরি রয়েছে। এসব ফেরির অধিকাংশই দীর্ঘদিনের পুরাতন ও লক্কর-ঝক্কর মার্কা হওয়ায় প্রতি দিনই দুই-একটি ফেরি স্থানীয় পাটুরিয়া ভাসমান কারখানায় মেরামতে থাকছে। শনিবার (২৩ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত পাটুরিয়া ভাসমান কারখানায় ইউটিলিটি ফেরি রজনীগন্ধা ও বনলতা মেরামতে থাকতে দেখা গেছে। এতে ১৯টি ফেরির মধ্যে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে।

অন্যদিকে, এসব ফেরি লোড-আনলোডের জন্য পাটুরিয়াতে পাঁচটি ঘাটের মধ্যে চারটি ঘাট সচল রয়েছে। পন্টুন সমস্যার কারণে দুই নম্বর ঘাটটি বন্ধ রয়েছে। এছাড়া দৌলতদিয়ায় সাতটি ঘাটের মধ্যে সচল রয়েছে চারটি। বাকি তিনটি ঘাটের দুইটি ঘাট গত ২০১৯ সালে নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া দুই নম্বর ঘাটটি সচল থাকলেও বেশি খাড়া হওয়ায় সেখানে ফেরি ভিড়ানো সম্ভব হচ্ছে না বলে ফেরি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। ফলে, দীর্ঘদিন ধরে ওই ঘাট দিয়ে যানবাহন লোড-আনলোড বন্ধ রয়েছে।

তাছাড়া, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে পাঁচটি করে ঘাট থাকলে ব্যবহার হচ্ছে চারটি করে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আসন্ন ইদুল ফিতরে বাড়তি যানবাহনের চাপ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঘাট কর্তৃপক্ষের সূত্র মতে, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ রুটে তিন হাজার গাড়ি পারাপার হয়ে থাকে। তবে ইদের আগে যানবাহনের চাপ দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

পাটুরিয়া ঘাটে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান দুর্ভোগের কথা। খুলনার যাত্রী আব্বাস মিয়া জানান, ‘ঢাকার একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করি। ইদের আগে রাস্তায় যানজট এবং বাড়তি ভাড়াসহ নানান বিড়ম্বনার কারণে আগেই পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। ইদের আগে রাস্তায় নানান ঝক্কি-ঝামেলা এড়ানোর জন্যই তিনি এ কাজ করছেন।’

কুষ্টিয়াগামী যাত্রী আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমি সরকারি চাকরি করি। ইদের আগে বাসের টিকেট সংকট, বাড়তি ভাড়া আদায়, রাস্তায় যানজটে আটকে পড়াসহ নানান ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ ভোগান্তি এড়াতেই পরিবার নিয়ে আগেভাগেই গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি।’

ফরিদপুরে যাত্রী আকমল হোসেন বলেন, ‘প্রতি ইদেই পাটুরিয়া ঘাটে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। সাত-আট ঘণ্টা পর্যন্ত ফেরির জন্য পড়ে থাকতে হয়। তাই এবার আগেই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গ্রামে যাচ্ছি।’

মাদারীপুরের যাত্রী ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘আমরা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ বড়ই অভাগা। নদী পার হতে গিয়ে সারাবছরই আমরা দুর্ভোগে থাকি। আর ইদের সময় তো দুর্ভোগের সীমা থাকে না। তাই, আগেই চলে যাচ্ছি বাড়িতে।’

এদের মতো শত শত মানুষ ইদে ভোগান্তির কথা মাথায় নিয়ে আগেই যাচ্ছেন যে যার আপন ঠিকানায়।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসির সহকারী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান জানান, যে সব ফেরির সামান্য ত্রুটি দেখা দেয় সে সব ফেরি পাটুরিয়া ভাসমান কারখানায় এনে মরামত করা হয়। রজনীগন্ধা ও বনলতা নামের দু’টি ইউটিলিটি ফেরি পাটুরিয়া ভাসমান কারখানায় মেরামতে রয়েছে। এছাড়া বড় ধরনের কাজের প্রয়োজন হলে নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড পাঠানো হয়।

ঘাট রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ঘাটের কোনো সমস্যা নেই। ফেরি লোড-আনলোডের জন্য পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়ায় পাঁচটি করে ঘাট রয়েছে। এর মধ্যে পন্টুন সমস্যার কারণে পাটুরিয়ায় একটি ঘাট বন্ধ এবং দৌলতদিয়ায় পাঁচটি ঘাটই সচল রয়েছে কিন্তু দুই নম্বর ঘাটটি সচল থাকা সত্ত্বেও কী কারণে ওই ঘাটে ফেরি ভিড়ানো হচ্ছে না তা জানা নেই। ইদের সময় ঘাট নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ অভ্যান্তরীণ নৌপরিবহন কোরপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিজিএম শাহ মো. খালিদ নেওয়াজ বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ রুটে ১৯টি ফেরির মধ্যে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। দুটি ফেরি পাটুরিয়া ভাসমান কারখানায় সাময়িক মেরামতে রয়েছে। ইদের আগে আরও দুইটি ইউটিলিটি ফেরি আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এর সঙ্গে আরও ২টি রো-রো ফেরি যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । মেরামতে থাকা ফেরিগুলো এ নৌ বহরে যুক্ত হলে আসন্ন ইদুল ফিতরে কোনো সমস্যা হবে না বলে তিনি জানান।

শনিবার (২৩ এপ্রিল) সকাল থেকে পাটুরিয়া ঘাটে বড় যানবাহনের চেয়ে ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি অর্থাৎ প্রাইভেট কার-মাইক্রোবাসের চাপ বেশি দেখা গেছে।

সারাবাংলা/একেএম

ইদযাত্রা নৌরুটে ভোগান্তি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর