জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া মিলছে না ট্রেনের টিকিট
২৩ এপ্রিল ২০২২ ১৬:১১
ঢাকা: সেহরি শেষ করে ভোর রাতেই টিকিটের জন্য কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়েছিলেন মাহমুদুল হাসান। খুলনা ভ্রমণের টিকিট নিতে এসে সাড়ে ৮টায়ই কাউন্টারের নাগাল পান। কিন্তু বিপত্তি দেখা দিল যখন কাউন্টার থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হলো এনআইডি ছাড়া টিকিট দেওয়া যাবে না। হাসানের মাথায় বাজ পড়ার অবস্থা। তারমতো ওই লাইনে অসংখ্য জন ছিলেন যারা জেনেও ভুলে এনআইডি নিয়ে কাউন্টারে আসেননি। ফলে টিকিট প্রত্যাশীদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভও দেখা গেছে।
গণপরিবহনে টিকিট কালোজারির ঘটনা নতুন নয়। ইদের সময় এই কালোবাজারিদের দৌড়াত্ম কয়েকগুণ বেড়ে যায়। মূল দামের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ দাম দিয়ে মানুষকে টিকিট কিনতে হয়। এই কালোবাজারি বন্ধে সরকার অনেকবার চেষ্টা করেছে। বছর দুয়েক আগে ট্রেনের টিকিট এনআইডি ছাড়া সংগ্রহ করা যাবে না এমন নিয়ম করলেও তা বাস্তবায়নই করতে পারেনি। ফের আবার এই উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এবার অনেকটা জোরেসোরেই এটা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছেন কর্মকর্তারা। রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এনআইডি ছাড়া ট্রেনের কোনো টিকিট বিক্রি হবে না।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ট্রেনে ভ্রমণ প্রত্যাশী বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিককে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। যাদের এনআইডি নেই, তাদের দরকার হবে জন্মসনদ। আর বিদেশিদের ক্ষেত্রে লাগবে পাসপোর্টের ফটোকপি। টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর কমলাপুর, ফুলবাড়িয়া, তেঁজগাও, বিমানবন্দর স্টেশনগুলো ঘুরে দেখা গেছে, জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া কোথাও টিকিট বিক্রি হচ্ছে না। জাতীয় পরিচয়পত্র না আনায় দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও খালি হাতে ফিরতে দেখা গেছে অনেককে। আবার কেউ কেউ লাইনে থাকে পাশের জনকে জায়গা রাখার কথা বলে বাসায় চলে গেছেন এনআইডি আনার জন্য। আবার অনেকে আত্মীয় স্বজনকে ফোন করে এনআইডি আনিয়ে টিকিট সংগ্রহ করেছেন। ইদকে সামনে রেখে ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরুর প্রথম দিনে এনআইডি সঙ্গে না নিয়ে স্টেশনে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেক টিকিট প্রত্যাশী।
স্টেশনগুলো ঘুরে দেখা গেছে, একটি এনআইডির বিপরীতে চারটি করে টিকিট দেওয়া হচ্ছে। এর বেশি টিকিট পেতে হলে ভিন্ন এনআইডি দরকার করে। সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছিলেন, এখন থেকে এনআইডি ছাড়া টিকিট দেওয়া সম্ভব নয়। আর এ সিদ্ধান্ত ইদের টিকিট বিক্রি থেকেই কার্যকর করা হবে, যা শুরু হলো। বিশ্বের অনেক দেশেই গণপরিবহনের টিকিট সংগ্রহ করতে হলে এনআইডির দরকার হয়। বাংলাদেশে এ ব্যবস্থা চালু করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। এবার রেলওয়ে টিকিট যার ভ্রমণ তার শিরোনামে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে নেমেছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় মনে করছে এই উদ্যোগের ফলে টিকিট কালোবাজারি কমবে। অন্যদিকে যাত্রীদের তথ্য রেলওয়েরের ডাটাবেজে সংরক্ষিত থাকবে।
এবার যাত্রীদের ভিড় ভোগান্তি কমাতে রাজধানীর পাঁচটি স্টেশন থেকে টিকিট বিক্রি করছে রেলওয়ে। সকল পশ্চিমাঞ্চলগামী ও খুলনাগামী স্পেশাল ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে কমলাপুর স্টেশন থেকে। চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সকল আন্তনগর ট্রেনে টিকিট পাওয়া যাবে বিমানবন্দর কাউন্টার থেকে, ময়মনসিংহ, জামালপুরগামী ও দেওয়ানগঞ্জ স্পেশালসহ সকল আন্তনগর ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে তেঁজগাও কাউন্টারে, মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ ও হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে ক্যান্টনমেন্ট কাউন্টার থেকে আর সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সকল আন্তনগরগামী ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে ফুলবাড়িয়া (পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন) থেকে। এই পাঁচটি কেন্দ্র থেকে ঈদ উপলক্ষ্যে টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। টিকিটের মোট ৫০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে এবং বাকি ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হবে কাউন্টারে।
সারাবাংলা/জেআর/এনএস