ভৈরবে নকল শিশু খাদ্যে সয়লাব, ঝুঁকিতে শিশুরা
২৩ এপ্রিল ২০২২ ২১:২৮
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ): জেলার ভৈরব উপজেলায় ইদকে সামনে রেখে অবাধে তৈরি হচ্ছে নকল ও ভেজাল শিশু খাদ্য। রঙ বেরঙয়ের প্যাকেট ও চটকদার নাম দিয়ে শিশু-কিশোরদের পছন্দনীয় ভেজাল খাদ্য বাজারজাত করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এভাবে বিভিন্ন নামীদামি কোম্পানির নকল আইসক্রিম, আইস-চিপস, ললিপপ, ডানোর গুড়া দুধ, হরলিক্স ও সেমাইসহ নানা পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। আর এসব খাদ্য খেয়ে শিশুরা মরণব্যাধি ক্যান্সার, লিভার ও কিডনিসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি উপজেলার জগন্নাথপুর, লক্ষীপুর, চন্ডিবের ও কমলপুরে ভেজাল ও নকল শিশু খাদ্য তৈরির প্রায় ১০টি কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় কমপক্ষে শিশু খাদ্যের নকল ও ভেজাল ৩০টি পণ্য উৎপন্ন হয়ে থাকে। তবে বিভিন্ন কারখানায় অতি মুনাফা লোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে কোমলমতি শিশুদের দিয়ে এসব ভেজাল খাদ্য উৎপাদন করছে।
জানা গেছে, এসব কারখানায় অটোমেটিক মেশিনে তৈরি করা হয় নামীদামি ব্র্যান্ডের ভেজাল খাদ্য সামগ্রী। এর মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানির জুস, চিপস, আইক্রিম, হরলিক্স, ডানোর গুড়া দুধ ও ললিপপসহ বিভিন্ন প্রকার আকর্ষণীয় চকলেট রয়েছে। এসব তৈরি করা হয় বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত কেমিক্যাল ও রঙ ব্যবহার করে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামের সঙ্গে মিল রেখে এসব পণ্য তৈরি করা হয়। আসল কি না নকল বুঝার কোনো উপায় নেই।
দীর্ঘদিন ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা না করায় কারখানাগুলো গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। আর এসব ভোজাল ও নকল শিশু খাদ্য বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। তাই এসব ভেজাল ও নকল শিশু খাদ্য উৎপাদন কারখানা বন্ধ করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন ভৈরববাসী।
এ বিষয়ে টিভি ও নাট্য অভিনেতা সাঈদুর রহমান বাবলু জানান, নিম্নমানের এসব ভেজাল আইসক্রিম, আইস-চিপস, ললিপপ, ডানোর গুড়া দুধ, হরলিক্স তৈরি হচ্ছে ভৈরবের বিভিন্ন কারখানায়। যা খেয়ে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাই এসব পণ্য তৈরির কারখানা বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহসহ স্থানীয় গণ্যমান্য অনেকেই একই কথা বলেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘রঙ মিশ্রিত, ফরমালিন বা ক্যামিক্যাল যুক্ত খাদ্য খেয়ে শিশুরা দীর্ঘমেয়াদে মরণব্যাধি ক্যানসার, কিডনি, লিভারসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মারা যেতে পারেন। তাই এসব খাবার যাতে না খায় সেজন্য ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে হবে। একইসঙ্গে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।’
ভৈরব পৌরসভার স্বাস্থ্য পরিদর্শক নাসিমা বেগম বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সঙ্গে কথা বলতে হবে। নিরাপদ শিশু খাদ্য নিশ্চিত করা সকল শিশুর অধিকার। শিশুদের সুস্থ্য ও মনন বিকাশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। নকল শিশু খাদ্যে সয়লাব থেকে ভৈরবকে মুক্ত করা সকলের প্রত্যাশা।
এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ জানান, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালিকা টানানো আছে কি না তা মনিটরিং করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা ও সতর্ক করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ভেজাল ও নকল পণ্য বিরোধী অভিযানও পরিচালনা করা হবে।
সারাবাংলা/এনএস